রসগোল্লাকে গোল দিয়ে GI জিতল সীতাভোগ মিহিদানা

রসগোল্লাকে গোল দিয়ে GI জিতল সীতাভোগ মিহিদানা

Saturday May 27, 2017,

3 min Read

পিছিয়ে গেল কলকাতার রসগোল্লা, এগিয়ে গেল বর্ধমানের সীতাভোগ মিহিদানা। রসগোল্লা এখনও GI সার্টিফিকেট পায়নি। কিন্তু সেই মহার্ঘ্য সার্টিফিকেট হাসিল করে নিলো বর্ধমানের সীতাভোগ আর মিহিদানা। প্রায় একশ বছর ধরে বাঙালির রসনা তৃপ্ত করে চলেছে বর্ধমানের এই দুটি মিষ্টি। এবার জাতীয় স্বীকৃতি দিল কেন্দ্র। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর এই এপ্রিলেই দুটি মিষ্টিকে GI সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে। সাধারণত কোনও সামগ্রীর ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী GI বা জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। জিআই তকমার অর্থ, কোনও একটি অঞ্চলের জনপ্রিয় পণ্যকে ভৌগোলিক ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া। এর আগে দার্জিলিঙের চা, মালদহের ক্ষীরশাপাতি-লক্ষ্মণভোগ আম, বিষ্ণুপুরের বালুচরি শাড়ি, জয়নগরের মোয়া এই স্বীকৃতি পেয়েছে। এতে প্রথমত, স্থানবিশেষে পণ্য সংরক্ষণ সম্ভব হয়। দ্বিতীয়ত, ‘জিআই লোগো’ নকল করা আইনত অপরাধ। ফলে ‘বর্ধমানের সীতাভোগ-মিহিদানা’ নামে মিষ্টি জাল হওয়ার সম্ভাবনাও কমবে বলে মনে করছেন গোটা বর্ধমান জেলার মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীদের সংগঠন। জেলা শিল্পকেন্দ্রের জিএম সৈকত দত্ত বলেন, ‘বর্ধমানের নাম করে নিকৃষ্ট মানের মিষ্টি বিক্রির অপচেষ্টা এবার রোখা সম্ভব হবে’।

image


বর্ধমানে এই মিষ্টি দুটি তৈরির পেছনে যে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের ইতিহাস রয়েছে এতদিন পর তারই স্বীকৃতি মিলল।

ভৈরবচন্দ্র নাগ, যার হাতের যাদুতে সীতাভোগ মিহিদানার অমন গর্ব, কী স্বাদে, কী গন্ধে, কী দেখনদারিতে, সেই নাগ খানদানে আজ খুশির সীমা নেই। জনশ্রুতি এখন প্রমাণিত সত্য। লর্ড কার্জন যখন বর্ধমানে আসেন, তখন বর্ধমানের মহারাজা বিজয়চাঁদ মহতাব লেডি কার্জনের সম্মানার্থে মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী ভৈরবচন্দ্র নাগকে নতুন মিষ্টি তৈরির নির্দেশ দেন। কয়েক মাসের চেষ্টায় অমন সুস্বাদু মিষ্টি তৈরি করেছিলেন ভৈরবচন্দ্র নাগ। মহারাজা বিজয়চাঁদ মহতাব নতুন দুটি মিষ্টির নামকরণ করেন সীতাভোগ আর মিহিদানা। ইতিহাসের তলানিতে থিতিয়ে যাওয়া কিসসা বলতে বলতে ছাতি ৫৬ ইঞ্চি ফুলে ওঠে নাগ পরিবারের বর্তমান প্রজন্ম অনিরুদ্ধে নাগের। ব্যবসায়ী সমিতিতে যুক্ত হওয়ার পর থেকেই উঠে পড়ে লেগেছিলেন GI সার্টিফিকেট আদায় করার লড়াইয়ে। ২০১৫-র ১৩ মার্চ জিআই তকমার আবেদন করা হয়। সঙ্গে ১৯৭৬ সালে আকাশবাণীতে প্রচারিত বর্ধমানের প্রখ্যাত মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী নগেন্দ্রনাথ নাগের একটি ভাষণ-পত্রও জমা দেওয়া হয়। ওই পত্রে দাবি করা হয়, ব্রিটিশ বড়লাট থেকে পরবর্তীতে জওহরলাল নেহরু, লালবাহাদুর শাস্ত্রীও মিষ্টি দু’টির প্রশংসা করেছিলেন। ২০১৫ সালে রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করা হয় চেন্নাইয়ে। তারপর ওই বছরেরই ৪ সেপ্টেম্বর প্রথম শুনানি হয়। পরের বছর সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয় শুনানি হয় কলকাতায়। তারপর ১লা এপ্রিল বহুপ্রতীক্ষিত সেই জাতীয় স্বীকৃতি অর্থাৎ জিআই রেজিস্ট্রেশন হাতে পান অনিরুদ্ধ বাবুদের সংগঠন। পারিবারিক সম্পত্তি রক্ষার লড়াইয়ের মত করেই বর্ধমানের জন্যে লড়েছেন অনিরুদ্ধ বাবু। ব্যবসায়ী সমিতিতে যুক্ত হওয়ার পর থেকে GI সার্টিফিকেট আদায়ের যে লড়াই শুরু করেছেন এখন তা আরও প্রবল দায়িত্বের হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্ৰথম অন্তরায় টপকে গিয়েছেন ওরা। এবার গুণগত মান বজায় রাখাটাই ওদের দ্বিতীয় ধাপের লড়াই।

বর্ধমানে এখন আর রাজা নেই, রাজ্যপাট নেই, রাজত্বও নেই। আছে শুধু বুকভরা গর্ব আর তার ইতিহাস। সেই ইতিহাসেরই একটা অংশ রাজার হালে বহন করে চলেছে বর্ধমানের সীতাভোগ আর মিহিদানা। এবার সেই ইতিহাসে জুড়ল নতুন পালক, একাধিপত্যের সরকারি স্বীকৃতি। স্বাভাবিকভাবেই খুশি বর্ধমান-বাসী।