OffBeat পথেই তাঁবু পেতেছেন নায়ার দম্পতি

বেড়াতে যেতে কে না ভালোবাসেন! কিন্তু যে বেড়ানোর কথা বলতে যাচ্ছি সেটা একটু অন্যরকম রোমাঞ্চে ভরা। উদ্যোক্তা এক দম্পতি রবি নায়ার এবং কারম্যান মিরান্ডা।

OffBeat পথেই তাঁবু পেতেছেন নায়ার দম্পতি

Monday June 19, 2017,

4 min Read

ক্যাটারিং স্কুল আইএইচএম গোয়ায় দুজনের আলাপ। তারপর প্রেম এবং একসঙ্গে ঘর বাঁধা। বেড়ানোর নামে দুজনই পাগল। যেসব জায়গায় কখনও কোনও পর্যটকের পা পড়েনি সেই সব জায়গা ঘুরে ফেলেছেন স্বামী-স্ত্রী। একটা সময় হোটেলের ব্যবসা ছিল। অফবিট জায়গাগুলো নিজেরাই গাড়ি ড্রাইভ করে ঘুরতে ঘুরতে আইডিয়াটা মাথায় আসে। ঠিক করেন নিজেরাই সংস্থা খুলে ট্যুরের ব্যবস্থা করবেন। সংস্থার নাম দিয়ে দিলেন Offbeat Adventure Drives যার অর্থ যেপথে সচরাচর যাওয়া হয় না সেই পথে যাওয়ার রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতাই তাঁরা দেবেন তাদের গ্রাহকদের। এবং শর্ত একটাই গাড়িটা চালিয়ে যেতে হবে।

image


না আগে থেকে হোটেল বুকিং করতে হবে না, প্লেনে না, ট্রেনে না। শুধু রুকস্যাক নিয়ে গাড়ি চালিয়ে বেরিয়ে পড়তে হবে। নায়ার দম্পতির সংস্থা অফবিট ড্রাইভস আগে থেকেই প্ল্যান করা রুট বাতলে দেবে আর সঙ্গে দেবে একটি গাড়ি। ক্লায়েন্ট নিজেই ড্রাইভ করে ওই রুট ধরে চলতে থাকবেন। ভয় পাওয়া বা রাস্তা হারানোর চান্স নেই, কারণ, সঙ্গে থাকবে ট্যুর অপারেটরের গাড়িও। নিশ্চিন্তে ড্রাইভ করুন আর এনজয় করুন ভ্রমণ। সঙ্গে অবশ্যই আপনার ছানাদেরও নিয়ে যেতে পারেন। কারণ ওদের ঘুরতে যাওয়ায় সপরিবারে যাওয়ার মতো বন্দোবস্ত থাকে। ওরা ক্যাম্প খাটিয়ে থাকেন বটে তবে থাকেন নিরাপদে। যাত্রীদের নিরাপত্তাটাই ওদের মাথায় বেশি ঘুরপাক খায়। গাড়িতে অয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেম থাকে। কনভয়ের সব গাড়িই তাই একসূত্রে বাঁধা থাকে। কারও কোনও সমস্যা হলে তৈরি থাকে রিকভারি সাপোর্ট সিস্টেম। তাতে গাড়ির মেকানিক থেকে শুরু করে চিকিৎসক, গাড়ির যন্ত্রাংশ আর থাকে বিলাসী কাটলারি, ধবধবে লিনেন। হোটেলে থাকার সব সুবিধেই রাস্তার ধারে খাটানো ক্যাম্পে দেওয়ার চেষ্টা করেন নায়ার দম্পতি। শুধু তাই নয় ওদের সঙ্গে থাকে পরিচ্ছন মোবাইল টয়লেটও। 

এসব শুনতে যত সোজা লাগছে ব্যাপারটা আসলে তত সোজা ছিল না। বলছিলেন রবি। রুট ঠিক করতেই শুধু ভারতে দু লক্ষ কিলোমিটার রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে হয়েছে। সমস্যা অনেক ছিল যেমন যেখানে খুশি টেন্ট লাগানো যায় না, কারণ ওটা কারও না কারও জায়গা। তার জন্য অনুমতি নিতে হয়। রুটে এমন সব জায়গা পড়ে যেগুলি গুগল ম্যাপেও খুঁজে পাওয়া যায় না, চ্যালেঞ্জের সুরে বলছিলেন রবি নায়ার। সব সমস্যার সমাধান করে এখন পুরদস্তুর প্রফেসনাল ট্যুর কন্ডাক্ট করেন ওরা। ক্যাম্প খাটালেও ওরা বলেন গ্ল্যামারাস ক্যাম্পিং। এককথায় Glamping বলেন ওরা। 

২০১৬-য় প্রথম অতিথিদের নিয়ে ট্যুরের আয়োজন করেন। ওদের ট্যুরের রুটটা হতে পারে রেইনফরেস্ট ঘুরে অন্য কোথাও অথবা গ্রামের রাস্তা ধরে বাগডোগরা থেকে ভুটান। আদতে বেশিরভাগ সময় কাজে অথবা অন্য কোনও কারণে দেশে বিদেশে যাদের ঘুরে বেড়াতে হয়, তাঁরাই মূলত ওদের ক্লায়েন্ট। ইউরোপ, লন্ডন, নিউইয়র্কে হামেশাই যান। তাই ঘুরতে যখন বেরন একটু অন্য কিছু খোঁজেন, অফবিট ড্রাইভসের নেপথ্য কাহিনী বলছিলেন নায়ার দম্পতি। দুজনে মার্দি গ্রাস এন্টারটেইনমেন্ট নামে একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থাও চালান।

মূলত ভারত, নেপাল আর ভুটানে ট্যুরের আয়োজন করে থাকে অফবিট ড্রাইভস। প্রতি ৫০০ কিলোমিটার অন্তর নতুন নতুন অভিজ্ঞতা হবে। সংস্কৃতি, খাদ্যাভ্যাস, পোশাক বদলাতে থাকবে এক একটা জায়গায়। রাস্তায় চলতে চলতে এমন অভিজ্ঞতা অভিনব প্রাপ্তি বলে মনে করেন উদ্যোক্তা দম্পতি। বিলাসিতা আর অ্যাডভেঞ্চার দুইয়ের অদ্ভুত মিশেল ঘটিয়েছে অফবিট ড্রাইভস। কীভাবে? ‘এই ধরণের ট্যুরে যেখানে মনে হবে সেখানেই বিলাসবহুল হোটেল পাওয়া যাবে না। কারণ রুটটাই এমন বাছা হয়েছে যেখানে টুরিস্টদের পা পড়েনি কখনও। ফলে ধারে কাছে, হোটেল তো দূর খাবার পাওয়াও মুশকিল। কিন্তু আমাদের যারা ক্লায়েন্ট বেশিরভাগই বিলাসী জীবন যাপনে অভ্যস্ত। তাই বিলাসবহুল তাঁবুর ব্যবস্থা রেখেছি আমরা যাতে চলতে চলতে যেখানে খুশি তাঁবু খাটাতে হলেও কিছুর অভাব না হয়। জনমানবহীন প্রান্তরে গরম জলে স্নানের ব্যবস্থা, ক্লায়েন্ট চাইলে শ্যাম্পেন, খাবারের প্লেট বা বাসন সবেতেই আভিজাত্য বজায় রাখা হয়। ওই সব রাস্তায় বিশেষ করে মহিলাদের কথা মাথায় রেখে বিশেষ ধরণের টয়লেটের ব্যবস্থা রেখেছেন। মাত্র ১০ মিনিটে তৈরি করে দেওয়া হয় ওই মোবাইল টয়লেট, যা ফাইভস্টার হোটেল থেকে কোনও অংশে কম নয়’, বলে চলেন নায়ার।

এবার দক্ষিণার কথায় আসি। একটা সাধারণ হিসেব হল দিন প্রতি মাথাপিছু ৬ থেকে ১২ হাজার টাকা। ধরা যাক ভুটান ট্যুর। ১৩ রাত ১৪ দিনের জন্য মাথাপিছু খরচ ১ থেকে দেড় লক্ষ টাকার কাছাকাছি। গাড়ির তেল, টোল, মদ বা সিগারেটের খরচ ক্লায়েন্টের নিজেদের। লাক্ষাদ্বীপে খরচ একটু বেশি, কারণ সঙ্গে একটি অ্যাম্বুলেন্সও নেওয়া হয়। এক একটা ট্যুরে জনা কুড়ি লোক গেলে ঠিকঠাক ম্যানেজ করা যায়। পরিবার নিয়ে গেলে স্বাগত। মহিলারা একাও ট্যুরে আসতে পারেন। তবে একা কোনও পুরুষ not allowed।

একশো শতাংশ পরিবেশ বান্ধব জিনিসপত্র ব্যবহার করেন ওরা। ক্লায়েন্টদের শুরুতেই কিট দিয়ে দেওয়া হয়। কেউ নিজেদের সঙ্গে আনা টয়লেটরিজ ব্যবহার করতে পারেন না। শুধুমাত্র বনফায়ারের ছাই ছাড়া আর কিছুই পেছনে ফেলে আসার নেই। বলছিলেন রবি। তাছাড়া স্থানীয়দের জন্য রোজগারের পথও খুলে দিয়েছে অফবিট ট্র্যাভলস। কোনও কোনও জায়গায় স্থানীয়দের কাছ থেকে খাবার নেন যাতে যারা বেড়াতে এসেছেন তারা স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে মিশতে পারেন, উপলব্ধি করতে পারেন স্থানীয় স্বাদ। তাই স্থানীয়দের রান্না করা খাবার খেতে চাওয়ার লোকের অভাব হয় না। তাছাড়া বাসন ধোয়া মাজার জন্যও তাদের ডাকা হয় যারা টাকার বিনিময়ে এসব কাজ করেন, ফলে একটা ইকোসিস্টেম তৈরি হয়।