ভারতের গ্রামেই আছে বিকাশের বীজ: জ্যাসন ওয়াং

ভারতের গ্রামেই আছে বিকাশের বীজ: জ্যাসন ওয়াং

Saturday December 16, 2017,

3 min Read

ইওর স্টোরির ইভেন্ট মোবাইল স্পার্কস ২০১৭-র মঞ্চ থেকে উঠল গ্রামীণ ভারতের বিকাশের মন্ত্র। চিনের সংস্থা ShareIt এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর জ্যাসন ওয়াং বললেন ভারতের বিকাশের বীজ লুকিয়ে রয়েছে ভারতের গ্রামগুলিতে। পরবর্তী সুযোগ বলতে যা বোঝায় তার পুরোটাই রয়েছে গ্রামে। ভারতের বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চলের জনবসতিই আসলে ভবিষ্যতের কাস্টমর। তাঁদের ক্রয়ক্ষমতাকে মর্যাদাই দেয়নি কনজিউমার মার্কেট। শহরাঞ্চলের কাস্টমারদের কাছে নানা প্রোডাক্টের হাজার একটা চয়েস রয়েছে। বিশাল সম্ভার থেকে বাছাই করার অধিকার পান শহরাঞ্চলের ক্রেতারা। কিন্তু গ্রামে সেই সুযোগ নেই। সেখানে বাধা ধরা একটি কি দুটির মধ্যে বাছাই করতে হয়। আবার অনেক সামগ্রী গ্রামে পাওয়াই যায় না। তার জন্যে শহরে আসতে হয় ক্রেতাকে। এখানেই সুযোগ দেখতে পাচ্ছেন জ্যাসন ওয়াং। চিনের সংস্থা শেয়ার ইট এর ইমার্জিং মার্কেট সংক্রান্ত বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ভারতীয় শাখার ম্যানেজিং ডিরেক্টর।

image


জ্যাসন মনে করেন, গ্রামের ক্রেতারা শুধু প্রোডাক্ট লাইনের আধিক্যই চান তা নয়, তারা চান সেরা পরিষেবাও। শেয়ার ইটের বিস্তার নিয়ে বলতে গিয়ে ওয়াং জানালেন, ২০১২ সালে ওদের যাত্রা শুরু হয়। একশ কুড়ি কোটি গ্রাহক। মাত্র আড়াই বছর আগে ভারতে পা রাখেন ওরা। আর দ্রুত ৩৫ কোটি গ্রাহক শুধু ভারতেই তৈরি হয়েছে এই অল্প সময়ে। সে অর্থে ভারতের বাজার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জিও আসার পর ইন্টারনেট পেনেট্রেশন যেমন বেড়েছে। তেমনি বেড়েছে স্মার্ট ডিভাইসের ব্যবহার। সকলেরই এখন সব কিছু চাই। জটিলতা হীন স্মার্ট অ্যাপ।

ভারতের বাজার সম্পর্কে ওয়াংয়ের বক্তব্য খুব স্পষ্ট। এখানে দারুণ সব আইডিয়া খেলে বেড়াচ্ছে। কিন্তু প্রয়োগ করার প্রক্রিয়াটা বেশ শক্ত। গ্রাম শহর সর্বত্রই বাজারের প্যাটার্নটা একই রকম। তাই প্রয়োগের প্রশ্নে প্রথম থেকেই তৎপর ছিল শেয়ার-ইট। তার সুফল ওর সংস্থা পেয়েছে। দ্রুত অর্গানিক ভাবেই ৩৫ কোটি গ্রাহক তুলে নিতে পেরেছেন ওরা। ভারত তাই শেয়ার-ইটের কাছে প্রথম পছন্দের তালিকায় রয়েছে। দিনে শেয়ার-ইটের মারফত ৭০ কোটি ফাইল ট্র্যান্সফার করে ভারত। আর তার পিছনে কাজ করেছে ওদের স্ট্র্যাটেজি।

কখনওই জ্যাসন ওয়াংরা গ্রাহক অ্যাকুইজিশনে জোর দেননি। যত মনোনিবেশ করেছেন প্রোডাক্টটিকে দারুণ আর গ্রহণ যোগ্য করে তোলার ক্ষেত্রে। ক্লিক করে গেছে সেই আইডিয়া।

ওয়াং মনে করেন পেইড ট্রাফিকের তুলনায় অর্গানিক ট্রাফিকই বেশি কার্যকর। কুড়ি তিরিশ লাখ গ্রাহক আপনি পেতে পারেন পয়সা খরচ করে। কিন্তু যদি ভেবে থাকেন আপনাকে দশ কোটি গ্রাহক পেতে হবে তবে অবশ্যই অর্গানিক পদ্ধতিতেই এগোতে হবে। এবং সেটা নির্ভর করে আপনার প্রোডাক্টের গুণগত মানের ওপর। ওয়ার্ড অব মাউথ-এর থেকে ভালো মার্কেটিং টুল আর হয় না।

চিন এবং ভারতের মধ্যে অনেক মিল আছে বলছিলেন ওয়াং। তার মতে শেয়ার-ইট-এর নিজস্ব বাজার রয়েছে চিনে। আর সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বাজার ভারত। দুটো বাজারই ভীষণ ভাবে দাম সচেতন বাজার। দাম নিয়ে দুই বাজারই দরাদরি করতে পছন্দ করে। এবং দুটো দেশেই দ্রুত নগরায়ন চলছে। দুটো দেশেই তরুণ প্রজন্মের উত্থান চোখে পড়ার মত। নবীন প্রজন্মই দুই দেশের বাজারের ট্রেন্ড সেট করে দেয়। দুটো দেশের অর্থনীতিই এগোচ্ছে তরতর করে।

ভারত হল সত্যিকারের মোবাইল ফার্স্ট মার্কেট। আর নিত্য নতুন অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে লাফ দিয়ে দিয়ে এগোচ্ছে। প্রযুক্তি গ্রহণ করার ক্ষমতাও দারুণ। কিন্তু বিনিয়োগের টানাটানি রয়েছে। ফলে এরকম অসংগঠিত বাজারে উদ্ভাবনের কম থাকে। প্রতিযোগিতাও বেশি থাকে। আর সাফল্যের জন্যে অসহিষ্ণুতাও চোখে পড়ে। ইউপিআই এবং ইকেওয়াইসির মত উদ্ভাবন এখানে শুরু হয়েছে সবে। কিন্তু কিছু বছর আগে চিনে একই ধরনের উদ্ভাবনে যখন সাড়া দেওয়ার প্রশ্ন ছিল তখন কিন্তু ব্যবসায়ীদের জন্যে সেটা আরও অনেক বেশি দুরূহ ছিল শুধু মাত্র খারাপ পরিকাঠামোর জন্যে।

তবে ভারত কখনওই চিনের উন্নয়নের মডেলকে নকল করে এগোবে না। সে এগোবে তার নিজস্ব গতিতে। নিজস্ব ছন্দে। আর ওয়াংয়ের সংস্থা চায় ভারতের সেই গ্রোথ স্টোরির অংশীদার হতে।