ক্যামেরায় সাত পাকে বাঁধা !

ক্যামেরায় সাত পাকে বাঁধা !

Monday September 21, 2015,

4 min Read

দুই বন্ধুর কথা

বিয়ের পোশাকে বর আর কনে। বর-কনেকে ঘিরে আত্মীয়স্বজন। গায়ে হলুদ, মন্ত্রপাঠ, শুভদৃষ্টি। ছোট-ছোট অসংখ্য মুহূর্ত। জীবনে যা সাধারণত একবারই আসে। সেইসব মুহূর্তকেই চিরকালের জন্য ক্যামেরাবন্দি করে ফেলেন দুই বন্ধু।চান্দ্রু ভারতী আর সারনরাজ আন্নামালাই। চেন্নাইয়ে Focuz Studios গড়ে তোলার দুই কারিগর। বিবাহ অনুষ্ঠানে তাদের তোলা স্টিল ছবি যেন কথা বলে। আর পাঁচজনের থেকে তাদের ছবি এতটাই স্বতন্ত্র যে প্রশংসা করে অনেকে এ কথাই বলেন।


টিম ফোকাস  স্টুডিওস

টিম ফোকাস স্টুডিওস


১৫ হাজার থেকে ১৫ লক্ষ টাকা

দুজনেরই ফোটোগ্রাফির শখ। বন্ধুত্ব হতে তাই দেরি হয়নি। আর একটা ব্যাপারেও দুজনের মিল রয়েছে। বিয়ের অনুষ্ঠানকে একটু অন্যভাবে ক্যামেরায় ধরতে চান তারা। এভাবেই একসময় গড়ে ওঠে Focuz Studios. চান্দ্রু ভারতী মূল প্রতিষ্ঠাতা হলেও সারনরাজের অবদানও কম নয়। একসময় একটি বিয়ের অনুষ্ঠানের ছবি তোলার জন্য তারা পারিশ্রমিক নিতেন ১৫ হাজার টাকা। আর এখন? এক-একটি অনুষ্ঠানের জন্য তাদের রেট শুরুই হয় এক লাখ পঁচিশ হাজার থেকে। সর্বোচ্চ রেট ১৫ লক্ষ টাকা। ১৫ হাজার থেকে ১৫ লক্ষে পৌঁছনোর জন্য অবশ্য তাদেরকে অনেকটা পথ চলতে হয়েছে।

চেন্নাইয়ের চান্দ্রু ভারতীর কথা

সাধারণ এক মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা চান্দ্রু ভারতীর।বাবা প্রকাশম রাজু একজন গাড়ি মেকানিক, মা তেনমোজি গৃহবধূ। ক্লাশ টেনে পড়ার সময় অ্যাডোব ফোটোশপের প্রেমে পড়েন চান্দ্রু। ছবি ডিজাইনিং, এডিটিংয়ের ব্যাপারগুলো বুঝতে ফোটোশপের বেসিকসের ওপর একটা বই কিনে আনেন। একজন বন্ধু তার কম্পিউটার ব্যবহার করতে দেয় তাকে। সেই কম্পিউটার নিয়েই দিনরাত পড়ে থাকতেন চান্দ্রু। কিছুদিনের মধ্যেই ফোটোশপের টেকনিকগুলো হাতে এসে গিয়েছিল চান্দ্রুর।

পড়াশোনায় মেধাবিই ছিলেন চান্দ্রু। সালেমের একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং করেন। এইসময় একাধিক মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি থেকে কাজের সুযোগও এসেছিল। কিন্তু চান্দ্রু চাইছিলেন এমন কাজ যেখানে ক্রিয়েটিভিটি থাকবে। তাই লোভনীয় অফার থাকলেও বহুজাতিক সংস্থাগুলির চাকরিতে ধরা দেননি তিনি। এই সময়ই ডিজিট্যাল কম্পিউটার অ্যানিমেশনের কথা ভাবেন চা্ন্দ্রু। একটি ফোটোগ্রাফি স্টুডিওতে ফোটোশপ ডিজাইনার হিসাবে তার প্রথম চাকরি।একইসঙ্গে অ্যানিমেশনের ওপর একটি কোর্সও করতে থাকেন তিনি। কিছুদিনের মধ্যেই ডাক এল মুম্বইয়ের Reliance Media Works থেকে। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে একজন কম্পিউটার গ্রাফিক্স (সিজি) আর্টিস্ট হিসাবে মুম্বই যান চান্দ্রু। এটাই তার প্রথম ফুলটাইম জব। মুম্বই তাকে নিরাশ করেনি। কাজের ক্ষেত্রে অনেক কিছু শিখলেন। মাসের শেষে ভালো মাইনে। ফলে পারিবারিক অস্বচ্ছলতাও কাটল।

মুম্বইয়ে কাজ করার সময়ই ফোটোগ্রাফির ওপর আলাদা আগ্রহ অনুভব করতে শুরু করেন চান্দ্রু। একসময় বুঝতে পারেন ফোটোগ্রাফিই তার পথ। সেই লক্ষ্য স্থির হতেই ছাড়লেন রিলায়ান্সের চাকরি। সামান্য পুঁজি নিয়েই গড়ে তুললেন নিজের স্টুডিও। সব ধরনের ছবিই তোলা হত। তবে স্পেশ্যালিটি ছিল বিয়ের অন্তরঙ্গ বিভিন্ন মুহূ্র্ত। প্রথম কাজের বরাতের কথা আজও মনে পড়ে চান্দ্রুর। এক বন্ধুর বিয়ের অনুষ্ঠানে ছবি তোলার জন্য ডাক পড়েছিল। একরাশ উত্তেজনা নিয়েই ছবি তুললেন। তবে তার থেকেও বেশি যেটা করলেন তা হল ছবিতে আলো, রং আর অ্যাঙ্গেল নিয়ে পরীক্ষা।


image


সারনরাজের ডিএসএলআর ক্যামেরা

Focuz Studios-এর সহ প্রতিষ্ঠাতা সারনরাজ আন্নামালাইয়ের ব্যাপারটা আবার অন্যরকম। ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার সারন ফোটোগ্রাফির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন ঘটনা সূত্রে। এক বন্ধুর থেকে হাতে এসেছিল একটা DSLR ক্যামেরা। ব্যাস, সেই শুরু। বেশ কাটতে লাগল সময়। একসময় বুঝতে পারলেন ক্যামেরা আর ফোটোগ্রাফি ছাড়া তিনি থাকতে পারছেন না। শুরু হল বিভিন্ন রকম ক্যামেরার খুঁটিনাটি জানা। ফোটোগ্রাফিতে বুঁদ হয়ে থাকতে থাকতেই ফোটো এডিটিং সফ্‌টওয়্যারের প্রশিক্ষণটাও নিয়ে নিলেন। একসময় বন্ধুর বিয়েতে সুযোগ এল ছবি তোলার। সুযোগটা ভালোই কাজে লাগালেন সারনরাজ। সেই শুরু। একসময় দেখা হল চান্দ্রুর সঙ্গে। আর গড়ে তুললেন ফোকাস স্টুডিও।

দু'জনে দেশে-বিদেশে

ধর্ম ও সংস্কৃতি অনুযায়ী বিভিন্ন রকম বিয়ের অনুষ্ঠানের সাক্ষী থেকেছেন চান্দ্রু-সারন। সেই কাজের সূত্রেই সুযোগ হয়েছে বিদেশ যাত্রার। বিয়ের ছবি তুলতে লন্ডন, প্যারিস, ব্যাঙ্কক, সিঙ্গাপুর ঘুরে এসেছেন তারা। আসলে কোয়ালিটির সঙ্গে কোনও আপোসে রাজি নন দুই বন্ধুই। দু'জনই মনে করেন, ছবি তোলাটা একটা আর্ট। খচাখচ শাটার টিপে দিলেই চলবে না। আর সবসময় মাথায় রাখতে হবে একজন ক্লায়েন্ট কী চাইছে। তবেই ধরা দেবে সাফল্য।


image


Focuz Studios-এর কথা

স্টুডিও গড়ে তোলার পরে অনেকটা পথ পেরতে হয়েছে। বিয়ের ক্যানডিড বা আর্টিস্টিক ফোটোগ্রাফি জিনিসটাই তারা লোককে বুঝিয়ে উঠতে পারতেন না। আসলে তখনও ভারতে ক্যানডিড ফোটোগ্রাফি ব্যাপারটা নতুন। ফলে একটু সময় লেগেছিল। আর এখন? দম ফেলার সময় নেই। কমপক্ষে দেড়শো বিয়ের অনুষ্ঠানের ছবি তোলা হয়ে গিয়েছে। ছবি নিয়ে দিনরাত পড়ে রয়েছে দশজনের একটা ইউনিট। গর্বিত মুখে চান্দ্রু জানালেন, চেন্নাইয়ে ওয়েডিং ফোটোগ্রাফির জগতে প্রথম তিনটি নামের মধ্যে তার সংস্থার নামটা আসবেই।