তাসের ঘর নয় ‘বাঁশের প্রাসাদ’ ইন্দ্রাণীর

তাসের ঘর নয় ‘বাঁশের প্রাসাদ’ ইন্দ্রাণীর

Wednesday August 19, 2015,

3 min Read

ওয়াহাবি আন্দোলনের নেতা তিতুমীর বাঁশ দিয়ে কেল্লা বানিয়েছিলেন। আড়াইশো বছর পর আর্কিটেক্ট ইন্দ্রাণী বাঁশ দিয়ে প্রাসাদ বানান। তাঁর সংস্থা বাম্বুজের নাম ডাক এখন বিশ্বজোড়া।

image


অধুনা সেই বাঁশ দিয়ে বাড়ি, ঘর, দোর বানিয়ে বিপ্লব ঘটাচ্ছেন আরও এক বাঙালি – ইন্দ্রাণী মুখার্জি। বাবার চাকরির সৌজন্যে ছোটবেলা কেটেছে অসম-ত্রিপুরায়। বাড়ির চারপাশে ছিল বাঁশ বাগান, আর সেই থেকেই বোধহয় এই গাছটির প্রতি ভালোবাসা। যে ভালোবাসার সুবাদেই তিনি এখন ব্যাম্বুজ নামক সংস্থার সহ প্রতিষ্ঠাতা ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর। ইট, কাঠ, লোহা-লক্কর, সিমেন্ট বালি দিয়ে বাড়ি তৈরি ঠিক আছে, তাই বলে বাঁশ ! হ্যাঁ, বাঁশ দিয়েই রিসর্ট, কটেজ, রেস্তারাঁ বানিয়ে তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন এই সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, বর্তমানে বেঙ্গালুরু নিবাসী উদ্যোগপতি।

তেরো বছর ধরে বিভিন্ন মাল্ট ন্যাশনাল সংস্থায় কাজ করার পর ইন্দ্রাণী এমন কিছু করতে চেয়েছিলেন, যা তাঁর মনের খুব কাছে জায়গা করে নেবে। নিজের পেশার মধ্যে থেকেই এমন কিছু করা, যা পরিবেশকে সবুজ রাখার পাশাপাশি একটা বিকল্প পথের সন্ধান দেবে। যেমন ভাবা, তেমনি কাজ। ব্যাম্বুজ নামে বাঁশের তৈরি আস্ত একটা রিসর্ট বানিয়ে ফেললেন ইন্দ্রাণী। এই কাজের ভরসা এবং সাহায্য দুই-ই জুগিয়েছেন তাঁর সিভিল ইঞ্জিনিয়ার স্বামী সম্রাট সাহা।


image


তবে স্থায়ী চাকরি ছেড়ে নতুন ব্যবসা শুরু করাটা মোটেও সহজ ছিল না। স্বামী-স্ত্রী দু-জনের মা, বাবাই সরকারি কর্মচারী ছিলেন। তাই পাঁচ বছর আগে এই দম্পতি যখন চাকরির পাঠ চুকিয়ে নতুন ব্যবসায় নামছেন, তখন সে বিষয়ে তাঁদের বাড়ির লোকের বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না। ইন্দ্রাণীর কথায় ‘উদ্যোগপতি হওয়ার অভিজ্ঞতা অনেকটা রোলার কোস্টারে চড়ার মতো। প্রতি নিয়ত একজনকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। এক ব্যক্তির কতটা ঝুঁকি নেওয়ার সাহস আছে এবং তাঁর আন্দাজের ক্ষমতা কতটা, তারওপরেই নির্ভর করে তাঁর উদ্যোগের ভবিষ্যৎ’।

আশেপাশে আর পাঁচজন যখন পরিচিত পথে ব্যবসা করছে, তখন একেবারে নতুন কোনও ধারণার বাণিজ্যিকীকরণ যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ। সবার আগে প্রয়োজন সচেতনতা বৃদ্ধি এবং তারপর বিনিয়োগকারীদের মনে মুনাফার ভরসা জোগানো। মহিলা উদ্যোগপতি হওয়ায় তাঁর পথটা ছিল আরও দুর্গম।

সম্মানিত ইন্দ্রাণী মুখার্জি

সম্মানিত ইন্দ্রাণী মুখার্জি


দেখতে সুন্দর হওয়ার পাশাপাশি বাঁশের নির্মাণ যথেষ্ট শক্তপোক্ত, আয়ুও একশো বছরের। ব্যাম্বুসা বালকোয়া নামে এক অত্যন্ত টেকসই প্রজাতির বাঁশ ব্যবহার করেন ইন্দ্রাণী। তাঁর মতে, ‘ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চলে বাড়ি-ঘর তৈরির জন্য এর জুড়ি মেলা ভার’। পাঁচ বছর একাগ্র ভাবে ব্যবসার মন দেওয়ার পুরস্কারও পেয়েছেন এই সাহসীনি। সরকারি বাসের ভিতর সিট সহ বিভিন্ন অংশে প্লাইউডের বদলে বাঁশ ব্যবহারের প্রস্তাবকে অনুমোদন দিয়েছে ভারত সরকারের অধীনস্থ অ্যাসোসিয়েশন অফ স্টেট রোড ট্রান্সপোর্ট আন্ডারটেকিংস।

জীবনে নিজের মা এবং স্বামী বিবেকানন্দকেই আদর্শ মেনে চলেন ইন্দ্রাণী মুখার্জি। নিজের মায়ের থেকে যেমন ধৈর্য ও মাটির মানুষ হওয়ার শিক্ষা পেয়েছন, তেমন স্বামী বিবেকানন্দের বাণী তাঁকে আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে, অনুশাসন শিখিয়েছে।

অবশ্য সাহস, আত্মবিশ্বাস, অনুশাসনের পাশাপাশি জীবনে সফল হতে গেলে আরও একটা জিনিস দরকার – ভরসা। নিজের স্বামীর থেকে সেটাই পেয়েছেন ইন্দ্রাণী। বেঙ্গালুরু নিবাসী এই দুই সিভিল ইঞ্জিনিয়ার স্বামী-স্ত্রী হওয়ার পাশাপাশি বিজনেস পার্টনারও এবং অবশ্যই একে অপরের পরিপূরক।