জয়নগরের মোয়া রীতিমতো ন্যাশনাল ব্র্যান্ড

জয়নগরের মোয়া রীতিমতো ন্যাশনাল ব্র্যান্ড

Tuesday December 08, 2015,

3 min Read

পৌষের কাছাকাছি। তবুও শীত শীত ভাবটা নেই। শীতবিলাসীদের মেজাজ বিগড়ে দিলেও শীতের অতিথিরা বুঝিয়ে দিচ্ছে ক্যালেন্ডার যাই বলুক তারা কিন্তু সময়েই হাজির। এই যেমন মোয়া। জয়নগর নামের প্রাচীরে আটকে গেলেও মোয়ার শুরু কিন্তু বহড়ুর হাত ধরে। জয়নগর লাগোয়া বহড়ুর এক ব্যবসায়ীর মোয়ায় মজবে এবার নরেন্দ্র মোদির পিতৃভূমি গুজরাত। আমেদাবাদ থেকে কয়েক লক্ষাধিক টাকার অর্ডার পেয়েছেন তুহিন ভাণ্ডারী।

image


জয়নগরের মোয়া। এক কথায় শীতের সেরা মিষ্টিসুখের ঠিকানা। কী এমন আছে যে বছরের পর বছর ধরে এই ব্রান্ড নেম-এ বাঙালি তাকে চিনতে চায়। সে শিলিগুড়ি, বহরমপুর বা বর্ধমান। নিজেরা মোয়া তৈরি করলেও জয়নগর নাম দিলে তবেই মোয়া বিকোবে। শুধু নাম মাহাত্ম্যে বিক্রি হয় মোয়ার মতো বাংলার এমন মিষ্টির দুটি পাওয়া ভার। আর এই রহস্যের পিছনে রয়েছে অনেক নিষ্ঠা, পরিশ্রমের কথা। খই, গুড় জোগাড় করলেই হয় না আসল মুন্সিয়ানা সেটা কতটা কার্যকরী। কনকচূড়় ধানের সঙ্গে নলেন গুড়ই মোয়া তৈরির প্রধান উপাদান। যার জন্য সব দিক থেকে আদর্শ জয়নগর ব্লক।

image


উপকূলবর্তী জেলা দক্ষিণ ২৪ পরগনা। নোনা আবহাওয়ার জন্য এখানে খেজুর গাছের বাড়বাড়ন্ত। সূর্যাস্তের সময় খেজুর গাছ কেটে মাটির হাঁড়ি ঝুলিয়ে দেন ‘শিউলি’রা। যারা খেজুর গাছ কাটেন তাঁদের ‘শিউলি’ বলে ডাকা হয়। আর সূর্যোদয়ের ঘণ্টাখানেক আগে গাছ থেকে রস নামিয়ে আনতে হয়। এরপর কাঠের জ্বাল দিয়ে তৈরি হয় নলেন গুড়। আর এই নলেন গুড়ের সঙ্গে কনকচূড় ধানের খই মিশলে তৈরি হয় উত্কৃষ্ট মোয়া। কনকচূড় খইয়ের জন্য আদর্শ জয়নগরের মাটি। এই খইয়ের সুগন্ধই অন্য কিছুর সঙ্গে তফাত গড়ে দেয়। এর সঙ্গে ঘি, মধু, কাজু, কিসমিস পড়লে চোখের খিদে সামলাবেন কী করে। আর এই মোয়ার সুবাদে জয়নগর—বহড়ু কয়েক হাজার পরিবার স্বাবলম্বী হয়েছেন। কেউ খেজুর গাছ কাটা, কেউ রস সংগ্রহে, কেউবা গুড় তৈরি, কেউ আবার মোয়া বানানো ও ব্যবসায় রয়েছেন। এই মরসুমে কোটি টাকার ব্যবসা হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। শীত জাঁকিয়ে বসলে বিক্রি আরও ভাল হবে বলে তাঁদের ধারণা।

image


নভেম্বরের শেষ থেকেই উৎসাহীরা উঁকিঝুঁকি মারছেন জয়নগর-বহড়ুর মোয়ার দোকানগুলিতে। বহড়ুর হাইস্কুল লাগোয়া এলাকার ব্যবসায়ী তুহিন ভাণ্ডারীর মোয়া প্রতিদিন প্রায় ৫০ কেজি করে যায় বারুইপুরে। বারুইপুরের পাঁচটি দোকানের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খান তাঁর দশজন কর্মী। কাছের শহরগুলিতেও তাঁর মোয়া যায়। আরও বাজার ধরের লক্ষ্যে তুহিনবাবু এবার ভিনরাজ্যে নজর দিয়েছেন। আমেদাবাদের একটি বিয়েবাড়িতে ৩৬ কেজি মোয়ার অর্ডার পেয়েছেন। যে মোয়ার এক পিসের দাম ৩৫ টাকা। বরোদাতেও গিয়েছে ২৫ কেজি মোয়া। গুজরাতে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে এই নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন তরুণ এই ব্যবসায়ী। এভাবে রাজ্যের অন্যান্য জেলাগুলিতেও মোয়া ছড়িয়ে দিতে চান। মোয়া বিদেশে পাঠানোর হাতছানিও রয়েছে। বহড়ুর আর এক ব্যবসায়ী বাবলু দাস সেটা ধরতে পেরেছেন। বাংলাদেশে তাঁর প্রায় ৫০ কেজি মোয়া যাচ্ছে। ঠিকঠাক চললে আরও কিছু অর্ডার আসতে পারে বলে তাঁর ধারণা। তবে পরিকাঠামো না থাকায় সেভাবে কিছু করে উঠতে পারেননি অনেকেই। রসগোল্লাকে যেভাবে টিনজাত করে বাইরে পাঠানো হচ্ছে তেমন কিছু করার ইচ্ছে রয়েছে এখানকার ব্যবসায়ীদের। এর জন্য বেশ কিছু সংস্থার সঙ্গে তারা কথাও বলেছেন। তবে গঠনগত অসুবিধার জন্য মোয়া সংরক্ষণও কিছুটা সমস্যার। দ্রুত সেগুলি যাতে কাটানো যায় সেই চেষ্টায় আছে জয়নগর-বহড়ু।