কোনও কিছুর পরিবর্তনের জন্য অনেকেই কাজ করতে চান। কিন্তু বিচ্ছিন্ন থাকায় তারা সেভাবে কিছু করে উঠতে পারেন না। যদি মিলতে পারতেন তাহলে কিন্তু যে কোনও কাজই করতে পারতেন, অন্তত শুরুটা করতে পারতেন। সেই পথই দেখিয়েছে রমেশ ও স্বাতী রামনাথনের নন-প্রফিট সংস্থা 'জনাগ্রহ'। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সিটিজেন অ্যাকশনকে কীভাবে কাজে লাগান যায় তারই একটি ওয়েব নির্ভর প্ল্যাটফর্ম এই জনাগ্রহ। I change my City নামে এমনই একটি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্ম এনেছে জনাগ্রহ। যারা বেঙ্গালুরুর পরিবর্তন চান, নাগরিক পরিষেবায় উন্নতি চান তাদের মধ্যে যোগসূত্র গড়ে তুলেছে জনাগ্রহের এই উদ্যোগ। ইউজাররা বিভিন্ন সামাজিক বিষয়ে আলোচনা করছেন। সেই কাজে প্রয়োজনীয় তথ্য তুলে দিয়ে কাজটাকে আরও সহজ করে দিচ্ছে জনাগ্রহ। কীভাবে?
কোনও একটি পৌরসভা বা বিধানসভা এলাকায় সরকারি দফতর, ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের নাম-ধাম-ঠিকানা থেকে টেলিফোন নম্বর, পোলিং বুথ, ভোটার ইনফর্মেশন ইত্যাদি তথ্য এক লহমায় পেয়ে যাচ্ছেন ইউজাররা। রয়েছে কোনও একটি এলাকার (ধরা যাক, যেখানে ইউজারের বাড়ি) মানচিত্র ভিত্তিক ছবি। সাইটে এই সব তথ্য পাচ্ছেন ইউজাররা। ফলে অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করতে অনেকটাই সুবিধা হচ্ছে তাঁদের। কথাও বলে নিতে পারছেন জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে। সাইটের আর একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট হল এতে অভিযোগ পোস্ট করা যায়। এলাকায় দীর্ঘদিন রাস্তা সারাই হয়নি, লাইটপোস্টে আলো নেই কিংবা মদের দোকান এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা নষ্ট করছে - এমন যে কোনও সিভিক ইস্যুতে ইউজাররা পোস্ট করতে পারেন। এ ব্যাপারে অন্য ইউজারদের কোনও বক্তব্য থাকলে তাও তারা জেনে নিতে পারছেন। সেই অনুযায়ী তৈরি হচ্ছে অ্যাকশন প্ল্যান।
একজন ইউজার দু'ভাবে কোনও বিষয়ে বক্তব্য রাখতে পারেন। সাইটে পোস্ট করে বা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে। কোনও বিষয়ে তিনি ভ্যালু অ্যাড করতে চাইলে (ধরা যাক রাস্তার গর্ত)সেই ছবি তুলে পোস্টের সঙ্গে পাঠিয়ে দিতে পারেন। এতে বিষয়টি বুঝতে আরও সহজ হয়। এমন প্রত্যেক পোস্টের নিচে সাইট ব্যবহারকারীদের থেকে কমেন্টস চাওয়া হয়। যদি কোনও সমস্যার বিষয়ে বেশি সংখ্যক কমেন্টস পড়ে, বুঝতে হবে সমস্যাটা সত্যিই বহু মানুষকে বিব্রত করছে। সেজন্য সমস্যাকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতর বা জনপ্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সেই যোগাযোগের ফলে কাজের কী হয়েছে বা কবে হবে তারও নিয়মিত আপডেট চলতে থাকে ওয়েবসাইটে।
সম্প্রতি বেঙ্গালুরুর পথঘাট সাফাই অভিযানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল I change my City-র ব্যানারে। সেই ক্যাম্পেনে অংশ নিয়েছিল ২২০টি স্কুলের প্রায় দশ হাজার ছাত্রছাত্রী। এছাড়াও পথে নেমেছিলেন ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবক থেকে শুরু করে সিটিজেন ভলান্টিয়ার্স, শিক্ষকরা। এমনকী যোগ দিয়েছিলেন ৯ জন বিধায়ক ও ২০ জন কাউন্সিলরও। ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। শ্রী সাই ইংলিশ স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র সূর্যর কথায়, 'যে দিন থেকে বিষয়টা জেনেছিলাম পথে নামতে আমার তর সইছিল না। আমরা যে রাস্তাঘাট পরিস্কার করছি তাতে এলাকার সবাই উপকৃত হবেন'। শুধু রাস্তাঘাট ঝাঁট দেওয়াই নয়, যাত্রী প্রতীক্ষালয়, ডিভাইডার ইত্যাদির দিকেও নজর দেওয়া হয়। স্থানীয় নাগরিকদের সঙ্গে মতের আদানপ্রদানও বাদ ছিল না। কারণ, এটা একদিনের বিষয় নয়, ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে যেতে হবে। এবং তা তখনই সম্ভব যখন বেশি সংখ্যক মানুষ বিষয়টা বুঝবেন ও এগিয়ে আসবেন।