বিশ্বজিতের Ahadi দিচ্ছে পরিষেবার প্রতিশ্রুতি

বিশ্বজিতের Ahadi দিচ্ছে পরিষেবার প্রতিশ্রুতি

Saturday July 29, 2017,

4 min Read

সম্প্রতি অপ্রীতিকর কারণেই শিরোনামে উঠে এসেছিল বাদুরিয়া। চাপ চাপ রক্ত। আর পোড়া টায়ারের গন্ধে দম আটকে আসছিল ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের। সেই বাদুরিয়ারই এক তুখোড় উদ্যোগপতির কাহিনি আজ আপনাদের শোনাবো। তরুণ এই উদ্যোগপতির নাম বিশ্বজিত ভট্টাচার্য। ঝুঁকি নেওয়ার প্রশ্নে ও একজন সিরিয়াল আন্ত্রেপ্রেনিওর। এগার ক্লাসে পড়ার সময় থেকেই ব্যবসার প্রতি ঝোঁক। বিশ্বজিত বাদুরিয়া মছলন্দপুরের ছেলে। বছর তিরিশের এই যুবক কী করেননি! ক্যাটারিং, ডেকোরেটর্সের ব্যবসা থেকে ইকমার্সের ব্যবসা। অনলাইনে ডাক্তারদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট করিয়ে দেওয়া থেকে, ইভেন্টের কাজ। হোঁচট খেয়েছেন। পড়েছেন। উঠেছেন। সফলও হয়েছেন। কিন্তু এবার পুরনো সমস্ত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আরও বড় সাফল্যের পথে পা বাড়িয়েছেন। কারণ এখন বিশ্বজিত জানেন কাজের জন্যে মানুষ আর মানুষের জন্যে কাজের মূল ফান্ডা।

image


গত চার পাঁচ বছর ধরে নিয়মিত কলকাতায় যাতায়াত করছেন। আড়াই ঘণ্টা ট্রেনে বাদুর ঝোলা ঝুলে কলকাতার স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমে সেঁধিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন এই তরুণ। একটা সময় স্টার্টআপ মিট গুলোয় নিয়মিত দেখা যেত। শেষের সারির চেয়ারে বসে মনোযোগ দিয়ে শুনতেন বক্তাদের ভাষণ। হেডস্টার্টের স্যাটারডে মিট বলুন কিংবা বং আন্ত্রেপ্রেনিওরের ঘরোয়া আড্ডা। সবেতেই পরিচিত মুখ ছিলেন বিশ্বজিত। শেক্সপিয়রের দেওয়া কম কথা বলার শিক্ষাটা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন এতদিন। এবার কুসুমকুমারী দাশের দেওয়া সেই ছেলে হওয়ার চেষ্টা করছেন, কথায় বড় না হয়ে যে কাজে বড় হবেন।

ওর নতুন উদ্যোগের নাম আহাদি। এটি একটি সোয়াহিলি শব্দ। অর্থ প্রতিশ্রুতি। অ্যাপের জঙ্গলে আহাদিও একটি অ্যাপ। কিন্তু অন্যরকম ফান্ডা। এই অ্যাপ আপনি প্লে স্টোর থেকে নামাতে পারবেন না। ওদের সংস্থায় রেজিস্ট্রেশন আগে করাতে হবে। তবে পাওয়া যাবে অ্যাপের লিঙ্ক। সম্পূর্ণ হাইপার লোকাল নেটওয়ার্ক তৈরি করতে চাইছে আহাদি। ওদের অ্যাপে কোনও বিজ্ঞাপন থাকছে না। অ্যাপটি ব্যবহার করতে অনলাইনেও থাকতে হবে না আপনাকে। ওই অ্যাপে থাকছে একটা মাত্র বাটন। আহাদির সেই বাটনে ক্লিক করলেই ফোন যাবে ওদের কন্ট্রোল রুমে। কী চাই জানিয়ে দিলেই ওদের সংস্থা গ্রাহকের দরজায় সেই পরিষেবা পৌঁছে দেবে সব থেকে কম সময়ের মধ্যে। এবং এই পরিষেবার প্রতিশ্রুতির তালিকাও বেশ লম্বা। নিত্য প্রয়োজনীয় যেকোনও পরিষেবাই দেবে আহাদি। খাবারের অর্ডার নিয়ে ঘরে ঘরে হোম ডেলিভারি থেকে শুরু করে ওষুধ ঘরে পৌঁছে দেওয়া, আয়া, নার্স, সেলুন, কী চাই! একটু যোগা শিখবেন, কিংবা ভাবছেন ভালো একটা বই চাই। পড়বেন ফেরত দেবেন। অথবা ধরুন ইচ্ছে করছে একটু বেরিয়ে আসবেন ধারে কাছে। আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপের সেই কেজো ভূতটাকে একটা বাটন টিপেই ডেকে ফেলতে পারেন। বাজারের সব থেকে কম দামে সব থেকে ভালো পরিষেবা দেবে ওদের এই সংস্থা। এটাই ওদের প্রতিশ্রুতি।

বিশ্বজিত বলছিলেন, যত দিন যাচ্ছে গোটা শহরটা তরুণ প্রজন্মের জন্যে একটি পরিত্যক্ত উপত্যকা হয়ে যাচ্ছে। ঘরে বয়স্ক বাবা মাকে রেখে কাজের সন্ধানে ঠাঁই নাড়া হতেই হচ্ছে। কেউ যাচ্ছেন আশপাশের শহরে। কেউ বা বিদেশে পাড়ি দিচ্ছেন। প্রবীণ নাগরিকদের পরিস্থিতি খুবই সঙ্গিন। সেখান থেকেই ভাবনা শুরু। রাত বিড়েতে ইমার্জেন্সি সার্ভিস দরকার। একটা অ্যাম্বুলেন্স চাই। কিংবা একটা ডাক্তার ডেকে দিলে সুবিধে হয়। গ্রাহকদের যা চাই মুখ ফুটে বললেই হল। ২৪ ঘণ্টা ৩৬৫ দিন আহাদির পরিষেবা পাওয়া যাবে।

এককাজে দুকাজ করছেন বিশ্বজিত। এই পরিষেবা দেওয়ার প্রক্রিয়ায় তৈরি করছেন স্থানীয় উদ্যোগপতিও। ফলে নিজের ব্যবসার স্বার্থেই তৈরি হচ্ছে আরও অনেক ব্যবসায়ী। সামাজিক উদ্যোগের স্তরে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করছেন এই যুবক। ইতিমধ্যেই আইআইএম কলকাতা ইনোভেশন পার্ক ওদের সংস্থাকে ইনকিউবেট করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। প্রায় হাজার তিনেক কাস্টমর বেস নিয়েই বাজারে নামছে আহাদি। এই পরিষেবা আপাতত শুরু হচ্ছে উত্তর ২৪ পরগণার পানিহাটিতে। তারপর সেখান থেকে এক পা দুপা করে এগোবে আহাদি। ইতিমধ্যেই বরানগর, সিঁথির মোড়, শ্যামবাজার, বাগবাজার এবং বিড়াটিতেও আহাদির শাখা খোলার আবেদন এসেছে। অনর্গল বলছিলেন স্বল্প-বাক বিশ্বজিত।

হটাত পানিহাটি কেন, এই প্রশ্নে বিশ্বজিতের সাফ কথা, কারণ পানিহাটির ইতিহাস। এখানে ১৯২০ সালে তৈরি হয়েছিল বেঙ্গল কেমিকেল। আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের আশীর্বাদ ধন্য এই প্রাচীন নগর। মহাত্মা গান্ধী এসেছিলেন এখানে। থেকেছেন। এবং উদ্যোগপতি নির্মাণের লক্ষ্যে তৈরি করেছেন কলাশালা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নাইট উপাধি ত্যাগের মত ঐতিহাসিক এবং বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এই পানিহাটির বাসভবনেই। তাছাড়া চৈতন্য মহাপ্ৰভূর পদধূলি ধন্য এই পুণ্যভূমিকেই কাজের জন্যে প্রাথমিক ভাবে বেছে নিয়েছেন। আর আবেগ রহিত কারণ হল কলকাতার বৃত্তের একদম প্রান্তে এই শহর। পানিহাটিতে নিয়মিত ঘুরে ঘুরে বাজার পরখ করে নিয়েছেন এই দুঁদে উদ্যোগপতি। হাইপার লোকাল ব্যবসাটাকে ভাইরাল করে তুলতেও বেশি সময় লাগবে না আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বললেন বিশ্বজিত ভট্টাচার্য।