তিনদিনেই কলকাতায় নিকোবার দারুণ হিট

তিনদিনেই কলকাতায় নিকোবার দারুণ হিট

Wednesday September 06, 2017,

4 min Read

তিন দিনের জন্যে একটা অভিজ্ঞতা পেল কলকাতা। এক্সাইড মোড়ের কাছে একটি আপাত গোপন ঠিকানায় তিনটে দিন চুটিয়ে ব্যবসা করল নিকোবার। 
image


নিকোবার, এই নামটার ভিতরই লুকিয়ে আছে আপাত গোপন অথচ সৌন্দর্যে ঠাসা একটা ঠিকানা। দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন অথচ দেশজ মৌলিকতায় সুন্দর একটি দ্বীপ। সেখানকার মানুষের আহার বিহার ব্যবহারেও সেই মৌলিকতা বিদিত। এই নিকোবার অবশ্য সেই দ্বীপের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। এটি একটি ফ্যাশন ব্র্যান্ড। আধুনিক মেট্রোসেক্সুয়াল পোশাকের সম্ভার। সঙ্গে দেশজ সেই সৌষ্ঠবের মিশেল। নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলেরই পছন্দের পোশাক নিয়ে নিকোবার হাজির হয়েছিল কলকাতায়। এবং সেপ্টেম্বরের তিনটে দিন পুরো ঠাসা ছিল ক্রেতার ভিড়ে। মধ্যবিত্তের নাগালে রুচিশীল পোশাকের সম্ভার। সঙ্গে হোম ডেকরের নানান সামগ্রী। কুশন থেকে শুরু করে মোম-দানি, ঘরসজ্জার নানান টুকিটাকি জিনিসের একটা পপ আপ শো। কথা হচ্ছিল সংস্থার ব্র্যান্ড হেড নির্মল কাউরের সঙ্গে।

তিনি আমাকে বলছিলেন ওদের সংস্থার দর্শনের কথা। প্রোডাক্ট লাইনের কথা। আর এই নিকোবার যে গত বছর শুরু হয়েছে মাত্র, সেই কথা। এরই মধ্যে দিল্লি, মুম্বাই বেঙ্গালুরুতে জমিয়ে দিয়েছে। এই সব কথাই বলছিলেন নির্মল। ভবিষ্যতে দেশের আরও আট দশটা শহরে ছড়িয়ে পড়ার পরিকল্পনা আছে, এবং আন্তর্জাতিক বাজারেও দারুণ কিছু করতে চান ওরা এরকম অনেক কথাই বলে চলেছিলেন।

আর আমার চোখের সামনে এই ব্র্যান্ডের পিছনের মানুষটা ফুটে উঠছিলেন ধীরে ধীরে। একটি অদম্য মহিলা উদ্যোগপতির কেবল প্যাশনের জন্যে লড়ে যাওয়া রূপকথার নায়িকা অনীতা লাল। একদমই ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার পিছনে দৌড়নো উদ্যোগপতি নন তিনি। শ্বশুর মশাই আইশার মোটরসের প্রতিষ্ঠাতা এম এন লাল। স্বামী বাণিজ্যের দুনিয়ার অন্যতম নেতা বিক্রম। ছেলে আইশারের বর্তমান কর্ণধার সিদ্ধার্থ। পায়ের ওপর পা তুলে বসে থাকতেই পারতেন অনীতা। কিন্তু শিল্পের প্রতি টান আর তাঁর উদ্ভ্রান্ত আবেগ তাঁকে উদ্যোগপতি বানিয়ে দিয়েছে। আজ নিকোবারের সাজানো পোশাকের সামনে তার দীর্ঘ লড়াইয়ের এহেন অপরূপ বিকাশ দেখে তৃপ্তি হল।

১৯৮৯ সালে শুরু করেছিলেন তাঁর তুলসী স্টোর। বিদেশ থেকে বাসন পত্র আনানোই ওদের বাড়ির রেওয়াজ ছিল। ইউরোপের রুচিশীল বাসনের মত দেশেও যে দারুণ পটারি হতে পারে বিশ্বাস করতেন অনীতা। শিখলেন পটারি। দেশীয় মৃৎশিল্পীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শুরু করলেন পটারির কাজ। ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের ছাত্রদের নিয়ে শুরু হল সেই সব ঘরে বানানো হাঁড়ি পাতিল, ফুলদানি আরও মনোগ্রাহী করে তোলা। শিল্প ওর স্বভাবেই ছিল। শিল্পী সত্ত্বার বিকাশের পথে ব্যবসা করে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কোনও কাঁটা ছিল না। যখনই প্রয়োজন পড়েছে স্বামীর সাহায্য পেয়েছেন। ওই সময় দিল্লীতে খোলেন তুলসী স্টোর। আইশার রয়েল এনফিল্ড মোটর বাইক তৈরি করে। সেই সুবাদে কেম্প কর্নারে বারোশ স্কোয়ারফিটের একটি জায়গায় এনফিল্ডের শোরুমের জন্যে প্রস্তাব আসে। বিক্রম রাজি ছিলেন না। সেটা ১৯৯৫ সাল। ততদিনে ওরা মুম্বাই থাকতেন। অনীতা চাইলেন ওই স্পেস। সাত বছর আগের তুলসী স্টোরের মত কিছু একটা করার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু শুধু বাসন নয়, পটারি নয় সঙ্গে আরও দীর্ঘ প্রোডাক্ট লাইন। বেডশিট, বেডকভার, কুশন, ম্যাট্রেস থেকে শুরু করে ঘর সাজানোর হাজার একটা ডিজাইনার উপকরণ। যা নিজে হাতে বানিয়েছিলেন অনীতা। ১৯৯৬ সালে কেম্প কর্নারে দোকানটা খুলতেই রীতিমত হট কেকের মত বিক্রি হওয়া শুরু হল। নাম রাখা হল গুড আর্থ। এবার ক্রেতার চাপে সরাতে হল দোকান। লোয়ার প্যারেলে শুরু হল অনেকটা জায়গা নিয়ে ওদের যাত্রা। ১৯৯৬ থেকে ২০১৬। এই দীর্ঘ কুড়ি বছরে স্বয়ং সম্পূর্ণ হয়েছে গুড আর্থ। এই নামটা অনীতার শ্বশুর মশাইয়ের দেওয়া। ট্র্যাক্টর তৈরির ব্যবসার নাম ছিল এটি। পার্ল এস বাকের বিখ্যাত নভেলের নামে নাম রেখেছিলেন এম এন লাল। পরে অবশ্য আইশার নামটাই সংস্থার ব্র্যান্ড হিসেবে বেশি প্রচার পায়। অনীতা শ্বশুর মশাইয়ের দেওয়া নামটা নিয়েই তার ব্যবসা শুরু করেন। ইতিমধ্যেই অনীতার ব্র্যান্ড গোটা দুনিয়ার নজর কেড়েছে। ওরা এখন দিল্লি, বেঙ্গালুরু থেকে শুরু করে গোটা দেশের বিভিন্ন শহরে আছেন। অনলাইনেও পাবেন ওদের প্রোডাক্ট। আর ২০১৬র মার্চ মাসে নিকোবার শুধু ফ্যাশন প্রোডাক্ট নিয়ে বাজারে আসে। এসে থেকেই বাজার মাত করে দিয়েছে এই ব্র্যান্ড। 

নির্মল বলছিলেন, কলকাতার থেকে খুব বেশি আশা ছিল না। মুম্বাই বেঙ্গালুরু কিংবা গুরগাঁওয়ে ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতা তুলনায় বেশি। পাশাপাশি রুচির প্রশ্নেও সামান্য পার্থক্য থাকে। অথচ সেই কলকাতাতেই পপ আপ এক্‌জিবিশনে উপচে পড়া ভিড় দেখে স্বভাবতই আহ্লাদিত নির্মল। তবে এখনই কলকাতায় দোকান খোলার কোনও পরিকল্পনা নেই। ওরা আগামী চার পাঁচ বছর মনোনিবেশ করবেন ব্র্যান্ডটাকে আরও বড় করে প্রচার দিতে।