দুবছরে আড়াই কোটি শৌচাগার তৈরি হয়েছে
স্বচ্ছ ভারত অভিযানে সাড়া দিচ্ছে দেশ, নির্মিত হয়েছে আড়াই কোটি শৌচাগার।
Tuesday October 18, 2016,
3 min Read
আজ থেকে দুবছর আগে স্বচ্ছ ভারত অভিযানের সূচনা হয়েছিল। এই দুবছরে ভালো সাড়া মিলেছে। সারা দেশে আড়়াই কোটি শৌচাগার তৈরি করা হয়েছে। ভারতের ৩৫টি জেলাতে খোলা জায়গায় শৌচকর্ম বন্ধ করা গিয়েছে বলে জানাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারের পানীয় জল ও নিকাশি দফতর। দুবছর আগে জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিনে স্বচ্ছ ভারত অভিযানের সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এটি প্রধানমন্ত্রীর আর একটি স্বপ্নের অভিযান। দেশের গ্রামীণ এলাকা ও শহরাঞ্চল –এ দুই ক্ষেত্রেই অভিযান চলছে। শহরাঞ্চলে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন দফতর ও গ্রামাঞ্চলে কেন্দ্রীয় পানীয় জল ও নিকাশি দফতর স্বচ্ছ ভারত অভিযান বাস্তবায়িত করার কাজ করছে।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় পানীয় জল ও নিকাশি দফতরের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুসারে দেখা যাচ্ছে, গত দুবছর ধরে চলা স্বচ্ছ ভারত অভিযানের সাফল্যের খতিয়ান। যেমন, গ্রামীণ ভারতে ১৫ লক্ষেরও বেশি শৌচাগার নির্মাণ করা গিয়েছে। গ্রামাঞ্চলে পাকা শৌচাগার ব্যবহারকারীর হার স্বচ্ছ ভারত অভিযানের জেরে ৪২ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে এখন ৫৫ দশমিক ৩৪ শতাংশে।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অভিযানের প্রথম বছরে শৌচাগার নির্মাণের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪৬ শতাংশ। যা উল্লেখযোগ্য। ৩৫টি জেলায় খোলা জায়গায় গ্রামবাসীদের যাতে মূত্রত্যাগ না করতে হয়, সেই ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই সুরক্ষিত করা গিয়েছে। মহাত্মা গান্ধীর জন্মস্থান পোরবন্দরও এই এলাকাগুলির মধ্যে অন্যতম।
দেশের প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে ও পিছিয়ে পড়া ক্ষেত্রগুলিতে শৌচাগার নির্মাণের জন্যে এই যে অভিযান চলছে, যার ফলাফল এপর্যন্ত অত্যন্ত ইতিবাচক হিসাবে কেন্দ্রীয় সরকার দাবি করছে, তা নিছক শৌচাগারের সুবিধা প্রদানই কিন্তু নয়। এর বৃহত্তর উদ্দেশ্য হল মানুষের স্বভাবেরও পরিবর্তন। মানুষ তাতেও সাড়া দিচ্ছেরন।
স্বচ্ছ ভারত অভিযানের সাফল্য সারা দেশ জুড়ে দেখা গিয়েছে। উদাহরণ হিসাবে ধরা যেতে পারে হিমাচল প্রদেশের মাণ্ডি জেলার কথা। এখানে গ্রামবাসীরা সপ্তাহে একদিন মহিলা মণ্ডলের নেতৃত্বে গ্রাম সাফাইয়ের কাজ শুরু করেছেন। সাফাই এখানে রোজগারেরও মাধ্যম। আবর্জনা বা বর্জ্য বিক্রি করে ২০১৫ সালে ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত গ্রামবাসীরা আয় করেছেন ৫ লক্ষ টাকা।
আর একটি সাফল্যের নজির গড়েছে ইন্দোর। ইন্দোরের গণেশ মন্দিরে ভক্তেরা যে রাশিরাশি ফুল প্রদান করে থাকেন এর পরিমাণ ১০০ কেজির মতো। ওই ফুলগুলিকে ব্লেন্ড করে তা ফের বিক্রি করা হচ্ছে। এখানেও পরিত্যক্ত ফুলের রাশি এখন আয়ের রাস্তা খুলে দিয়েছে।
তামিলনাড়ুও একইভাবে সাফল্যের অন্য আর একটি নজির। এখানে ৫৩ হাজার কর্মী ৯ হাজার গ্রাম পঞ্চায়েতে কঠিন বর্জ্য সংগ্রহের কাজ করছেন। তা পুনর্নবীকরণ করে পঞ্চায়েতগুলি আয় করছে ৭৫ লক্ষ ৪১ হাজার টাকার মতো।
বিশ্ব ব্যাঙ্কের একটি সমীক্ষা থেকে দেখা যাচ্ছে, নিকাশি ব্যবস্থা অনুন্নত হওয়ার কারণে ভারতের অর্থনীতিতে জিডিপি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। লন্ডন স্কুল অব হাইজিন তথা ট্রপিক্যাল মেডিসিনের করা একটি সমীক্ষা অনুসারে, স্বাস্থ্য সুরক্ষা খাতে ভারত ১৯ বিলিয়ন টাকা সাশ্রয় করতে পারে যদি ভারতীয় জনতা কেবলমাত্র খাবার গ্রহণের আগে ও শৌচকর্মের পরে ভাল করে হাত ধোয়ার অভ্যাস তৈরি করতে পারেন।
তাছাড়া, মহারাষ্ট্রের নানডেড জেলা এখন মশক মুক্ত জেলা হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। গ্রামবাসীদের সচেতনতার জেরে মশাবাহিত রোগভোগের মাত্রা অনেকই কমেছে। প্রতিরোধ করা যাচ্ছে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়ার মতো অসুখবিসুখগুলি।
স্বচ্ছ ভারত অভিযানের সাফল্যের উদাহরণের তালিকাটা এখনই বেশ লম্বাই। গুজরাত, কেরালা, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, মিজোরামে খোলা জায়গায় শৌচকর্ম বন্ধ করার উদ্যোগ চলছে। মহাত্না গান্ধীর জন্মদিনে যে অভিযানের সূচনা হয়েছিল আজ থেকে দুটি বছর আগে সরকারি দফতরের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ৩১ মার্চের ভিতর পশ্চিম, দক্ষিণ ভারত ও অন্যান্য কয়েকটি রাজ্যে গ্রামীণ স্বচ্ছ ভারত অভিযানের ফলশ্রুতিতে খোলা জায়গায় শৌচকর্ম পুরোপুরি বন্ধ করা যাবে। অন্যদিকে গ্রামীণ এলাকাগুলিতে ২০১৭ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে অভিযানের আরও ভাল ফল পাওয়া যাবে। ছুঁয়ে ফেলা যাবে জরুরি লক্ষ্যমাত্রাটি।