এএসি মানে জানেন? আপনি জানলে জানতেও পারেন। আমার জানা ছিল না। তবে যখন শুনলাম এই এএসি বিক্রি করেই একটা স্টার্টআপ কয়েকশো কোটি টাকার ব্যবসা করছে, তখন ঔৎসুক্য মেটাতে জানতেই হল। অটোক্লেভ্ড অ্যারেটেড কনক্রিট। এমন এক ইমারতি দ্রব্য যা বেশ হালকা হলেও দারুণ মজবুত, অগ্নি ও তাপ নিরোধক, স্যাঁতস্যাতে ভাবও আটকায়। বিশেষজ্ঞদের মতে অটোক্লেভ্ড অ্যারেটেড কনক্রিটের তৈরি ব্লক ইটের আদর্শ বিকল্প।
পরিসংখ্যান বলছে সারা দেশে কমপক্ষে এক লাক্ষ ইটভাটা আছে। দেশের কথা না হয় বাদই দিলাম। স্রেফ কলকাতা পেরোলেই হুগলি কিংবা রূপনারায়ণের দু-পাড়ে অসংখ্য ইট ভাটা দেখতে পাবেন। এই সব ইটভাটা ঘিরে রয়েছে বিস্তর অনিয়মের অভিযোগ, যার মধ্যে পরিবেশ দূষণ অন্যতম। অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি অটোক্লেভ্ড অ্যারেটেড কনক্রিটকে নিয়ে অব্শ্য এখনও তেমন কোনও অভিযোগ ওঠেনি। তাই ইকো-ফ্রেন্ডলি ঘর-বাড়ি বানাতে এএসসি-তেই ভরসা রাখছেন নির্মাতারা। ইউরোপে সেই তিনের দশক থেকে এএসি ব্যবহারের চল শুরু হলেও এ দেশে বিগত কিছু বছর ধরে এর ব্যবহার হচ্ছে। সারা দেশে এখন ২৫টি সংস্থা অটোক্লেভ্ড অ্যারেটেড কনক্রিট তৈরি করে, Magicrete যার অন্যতম।
আইআইটি খড়গপুরের সৌরভ বনসল, দিল্লি আইআইটি-র প্রাক্তনী সিদ্ধার্থ বনসল এবং চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট পুণিত মিত্তল মিলে ২০০৮ সালে এই সংস্থা শুরু করেন। শুরু থেকেই তাদের লক্ষ্য ছিল ইমারতি শিল্পে একটা নতুন উপাদান যোগ করা যা সময় ও খরচ দুই-ই বাঁচাবে। স্টিল আর সিমেন্টের পর নির্মাণ ক্ষেত্রে ইটের চাহিদাই সব থেকে বেশি। ইট তৈরির ব্যবসা প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার শিল্প। বিভিন্ন কৌশলগত দিক বিবেচনা করে তাই ইটের বিকল্প তৈরি দিয়েই শুরুয়াত করে ম্যাজিক্রিট। বর্তমানে সুরাটের কাছে নভসারি এবং গুরগাঁও সংলগ্ন ঝাজ্জরে তাদের ২টি উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে – বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ৮ লক্ষ ঘন মিটার। এই পরিমাণ অটোক্লেভ্ড অ্যারেটেড কনক্রিট ব্যবহার করে প্রায় ১০০০ বহুতল নির্মাণ করা যেতে পারে। শুধু ইটের বিকল্পই নয়, ইমারতি শিল্প ব্যবহৃত নানা অনুসারি সামগ্রীরও বিকল্প তৈরি বানাচ্ছে ম্যাজিক্রিট। যেমন চুন-সুরকির পরিবর্ত ম্যাজিকবন্ড। প্লাস্টারের বিকল্প ম্যাজিকপ্লাস্ট, যা নাকি মাত্র ২ ঘণ্টাতেই শুকিয়ে যায়।
কিন্তু গতানুগতিক ইটের ব্যবহার ছেড়ে কেনই বা এএসি ব্যবহার করবেন নির্মাণ ব্যবসায়ীরা! এর উত্তর লুকিয়ে অটোক্লেভ্ড অ্যারেটেড কনক্রিটের প্রযুক্তিগত সুবিধায়। এক একটা এএসি ব্লক ইটের থেকে ৮০% হাল্কা হলেও প্রায় ২গুণ বেশি মজবুত। এএসি ব্লক ইটের থেকে চওড়াও বটে। তাই কোনও নির্মাণে ইটের তুলনায় কম সংখ্যক এএসি ব্লকের প্রয়োজন পড়ে।
কিন্তু পরীক্ষা-নিরীক্ষা বিমুখ নির্মাণ ব্যবসায়ীদের এএসি-র এই সুবিধার বিষয়ে বোঝানোকে চ্যালেঞ্জ বলেই মনে করেন ম্যাজিক্রিটের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সৌরব বনসল। অটোক্লেভ্ড অ্যারেটেড কনক্রিট তৈরিতে আট রকমের উপাদান ব্যবহার হয়। তাই বাজেটের মধ্যে গুণগত মান বজায় রাখাটাও সমান চ্যালেঞ্জিং সৌরভ ও তার দলের কাছে।
এই হার্ডেলগুলো পেরোতে পেরোতেই সাতটা বছর পার করেছে ম্যাজিক্রিট। তিন যুবার তৈরি এই সংস্থা এখন অটোক্লেভ্ড অ্যারেটেড কনক্রিট তৈরির ক্ষেত্রে জোর টক্কর দিচ্ছে আল্ট্রাটেক, জে কে লক্ষ্মী-র মতো হেভিওয়েটদের।
লেখক: প্রীতি চামিকুট্টি
অনুবাদক: ঋত্বিক দাস