কলকাতা তাঁর প্রিয় বন্ধুকে খুঁজছে Milee Droog-এ

কলকাতা তাঁর প্রিয় বন্ধুকে খুঁজছে Milee Droog-এ

Sunday April 30, 2017,

3 min Read

গোর্কি সদন চেনেন তো! মিলি ড্রুগও চিনে রাখুন। গোর্কি সদনের ভিতর একটি রাশিয়ান রেস্ট্রো বার। বিশুদ্ধ রাশিয়ান খানার কলকাতায় একমাত্র ঠিকানা। সংস্থার কর্ণধার সাত্যকি মান্না আর অপ্রতিম মুখোপাধ্যায়। 
image


দুজনে দীর্ঘ দিনের বন্ধু। কলকাতার ছেলে। সাত্যকির সঙ্গে রাশিয়ার যোগ আছে। বৈবাহিক যোগ। মস্কোয় ঘরবাড়ি। আর অপ্রতিম কলকাতার ছেলে। এই শহরেরে ধুলো ধোঁয়া তেমন না ঘাঁটলেও শহরের নাড়ি নক্ষত্র জানেন। দুজনের মিল অনেক। দুজনেই উদ্যোগপতি। দুজনেই স্বপ্ন দেখেন এমন কিছু করার যা পরিবর্তন আনতে পারে। দুজনেই দেশে বিদেশে ঘুরে বেরিয়েছেন। দুজনেই খেতে ভালো বাসেন। নানান ধরনের খাবার চেখে দেখেছেন। পেটুক নন কেউই। কিন্তু রসিক অবশ্যই। কলকাতায় কী নেই, খুঁজছিলেন দুজনে। লেবানিজ খাবার আছে, মাঞ্চারজির পার্সি খাবার আছে, তুরস্কের খাবার, চিনের, জাপানের, থাই ফুডের রমরমা আছে। ইউরোপের খাবারও অনেক পাওয়া যায়। যেমন স্প্যানিশ রেস্তোরাঁ, ইটালিয়ান রেস্তোরাঁ সব আছে কলকাতায় কিন্তু তবু কিছু একটা যে মিসিং টের পেয়েছিলেন এই দুই বন্ধু। সেটা রুশ খানা। 

একটা সময় ছিল মস্কোর আর কলকাতার মধ্যে নাড়ির টান ছিল। রাশিয়ার বিমান সংস্থা অ্যারোফ্লোটের বিশাল অফিস ছিল কলকাতায়। এক্সাইডের মোড়ে। একটু এগোলেই গোর্কি সদনে রোজই প্রায় রুশ চলচ্চিত্রের মেলা বসতো। রুশ শিল্পীদের কনসার্ট হত। রাশিয়ার পত্রিকা আসত কলকাতার বহু বাঙালি বাবুর বাড়ি। সোভিয়েত লিটারেচার, সোভিয়েত দেশ, মিশা এসব আসত আমাদের বাড়িতেও। মস্কো, সেন্ট পিটার্সবার্গ, কিয়েভের শিশুদের ছবিতে ঠাসা, তাদের লেখা ছড়ার বাংলা অনুবাদে খিলখিল করা, তাদের আঁকা ছবিতে উজ্জ্বল, ধাঁধা আর রাশিয়ান নভশ্চরদের গল্পে রহস্য বোনা, মহাকাশে রকেট ওড়ার ছবির সম্মোহনে মিশা আমার প্রিয় পত্রিকা ছিল। তখন আমরাও শিশু। আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে। রঙিন ওই সব ছবি দেখে দেখে ছবি আঁকতাম। রাশিয়ান ভাষা শেখানোর গোপন প্রয়াসও থাকত ওই পত্রিকায়। ওসব পড়ে অনেকেই স্বপ্ন দেখতেন রাশিয়ায় যাওয়ার। আমারও ইচ্ছে করত সাইবেরিয়ার বরফ দেখব। বাংলার সংস্কৃতিতে গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল রাশিয়ার সংস্কৃতি। পুস্কিনের কবিতা, গোগোলের গল্প, দস্তয়ভস্কির উপন্যাসের ভিতর দিয়ে বাংলার মনন একটি বৃহত্তর আকাশ পেয়েছিল। বিষ্ণু দে, মনীন্দ্র রায়, সুভাষ মুখোপাধ্যায়রা রুশ সাহিত্যের প্রতি অবদমিত প্রেম উপলব্ধি করেছিলেন। রাজনীতি! সে তো ছিলই। কিন্তু ব্রিটিশ কেতায় মুগ্ধ কলকাতায় রাশিয়ার সাংস্কৃতিক উপনিবেশ গড়ে উঠেছিল ধীরে ক্রমান্বয়ে। 

রাশিয়ার পতনের পর, লেনিনের মূর্তি ভাঙার পর, মুক্তির হাওয়া সেদেশের অলিন্দে প্রবেশ করার পর পরিস্থিতির বদল হল। যাতায়াত কমল। অ্যারোফ্লোটের বিমান সংস্থার দফতর উঠে গেল কলকাতা থেকে। এক ধাক্কায় ছিঁড়ে গেল তার। রাদুগা, প্রগতি প্রকাশনীর বইগুলো তখন ফুটপাথে জলের দরে পাওয়া যেত। গোর্কির মা, মায়োকোভস্কির কবিতা, লেনিনের চিঠি, দাস ক্যাপিটালের মতো যুগান্তকারী সাহিত্য ধুলোয় গড়াগড়ি খেতে শুরু করল। এরই মধ্যে গোর্কি সদন কেবল দাবাড়ুদের আনা গোনার জায়গা হয়ে গেল। আগের মত আর গম গম করত না সাংস্কৃতিক এই কেন্দ্র। সাংস্কৃতিক কূটনীতির এই কেন্দ্রটিকে কিভাবে আবারও জাগিয়ে তোলা যায় সেই কথাই ভাবছিলেন দুজনে।

সাত্যকি আর অপ্রতিম টের পেলেন মিসিং লিঙ্ক। যোগাযোগ করলেন কলকাতায় রুশ কনসাল জেনারেল মিখাইলের সঙ্গে। মিখাইল প্রাণবন্ত এক যুবক। ইংল্যান্ডে বড় হয়েছেন। রাশিয়া যখন টালমাটাল তখন ও নেহাতই শিশু। পড়াশুনো করতে বাবা ওকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন ইংল্যান্ড। ফিরে এসে যোগ দিয়েছেন রাশিয়ার বিদেশ মন্ত্রকের কাজে। সেই সুবাদে এখন কলকাতায়। মিখাইল কলকাতার সংস্কৃতিকে জানতে চান। কলকাতা নিয়ে ভীষণ আগ্রহ। এই শহরের স্টার্টআপদের নিয়ে ওঁর ব্যক্তিগত উৎসাহ কম নয়। ফলে তিনজনের সৌজন্যে কলকাতা ফিরে পেয়েছে একটা মিসিং লিঙ্ক। মিলি ড্রুগ। রুশ এই শব্দের অর্থ প্রিয় বন্ধু।

মিলি ড্রুগে আপনি পাবেন জিভে জল আনা রাশিয়ান খাবার। রাশিয়ার চা, কফি। আর প্রচুর বই। স্মৃতি জাগানিয়া সেই সব বই আপনাকে মনে করিয়ে দেবে ফেলে আসা দিনগুলিকে। দুর্দান্ত ইন্টেরিয়ার মনের মতো করে সাজিয়েছেন সাত্যকি আর অপ্রতিম। কাফের কোণায় কোণায় ইনোভেশনের ছাপ। শুধু খেতে নয় এই কাফেতে আসতে পারেন অনেক কারণেই, এখানে চলে সাংস্কৃতিক আড্ডার আসর। নাটক হয়। গানের অনুষ্ঠান হয়। স্টার্টআপদের নিয়ে মিট-আপ হয়। এবং এভাবেই ধীরে ধীরে কলকাতার প্রিয় বন্ধু হয়ে উঠছে সাত্যকি অপ্রতিমের মিলি ড্রুগ।