গণতন্ত্র একমাত্র সমাধান নয়, স্টার্টআপে তো নয়ই

গণতন্ত্র একমাত্র সমাধান নয়, স্টার্টআপে তো নয়ই

Monday January 18, 2016,

3 min Read

২০১৪-র 'CB Insights' এ অ্যান্ত্রেপ্রেনিয়ররা স্টার্টআপ নিয়ে যেসব প্রবন্ধ লিখেছেন, সেখানে কয়েকটি বড় সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন। তার মধ্য়ে রয়েছে প্রতিষ্ঠাতা এবং স্টার্টআপ টিম দ্বৈরথে ভরাডুবির প্রসঙ্গ। প্রতিষ্ঠাতাএবং টিমের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাবই যে ব্যর্থতার দুনম্বর বড় কারণ এ বিষয়ে অনেক অ্যান্ত্রেপ্রেনিয়রের কোনও সন্দেহ নেই। 

  1. প্রতিষ্ঠাতার যোগ্যতা এবং সততার ঘাটতি প্রাথমিক সমস্যা ডেকে আনে। 
  2. চুরি বা ঠকবাজির সঙ্গে যদিও এঁটে ওঠা যায় কিন্তু নেতার যদি আখেড়ে কাজ উতরে দেওয়ার ক্ষমতা না থাকে তবে দলের কিছু করার থাকে না।
image


আমি একটি সংস্থার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যুক্ত ছিলাম। আমরা সেই সংস্থাকে ফান্ড দেওয়ার একমাসের মাথায়, তিনজনের মধ্যে দুজন প্রতিষ্ঠাতা এসে বলেন তাঁরা কোম্পানি ছাড়তে চান। আমরা অনেক করে বুঝিয়ে তাঁদের ঠেকাই। পরবর্তী তিন বছরে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়। একজন প্রতিষ্ঠাতা বলেন স্টার্টআপ কোম্পানির সহ প্রতিষ্ঠাতা না হয়ে কোনো বড় ম্যাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কাজ করলে তিন বছরে তিনি অনেক বেশি শিখতে পারতেন। আমরা ভাগ্যবান ছিলাম। লিডারশিপ টিমের দক্ষতা আর সংস্থার কাজকর্মের ব্যাঘাত না ঘটিয়েই সুবিধাজনক শর্তে আমরা কোম্পানিটা বাঁচাতে সক্ষম হই। স্টেক হোল্ডাররা বেশ লাভ ও করেন।

স্টার্টআপ বানানোর সময় সহ প্রতিষ্ঠাতা খুঁজছেন? অবশ্যই বানিয়ে নিন একটি চুক্তিপত্র, যেটা সব পরিস্থিতিতে সংস্থার স্বার্থের খেয়াল রাখবে। চুক্তিপত্রে অবশ্যই রাখুন নিম্নলিখিত শর্তাবলী।

১) ভূমিকা এবং দায়িত্ব

প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যেকার চুক্তিপত্রে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠাতার ভূমিকা এবং দায়িত্বের বিষয়ে পরিষ্কার ভাষায় লিখিত থাকবে। তাঁদের অভিজ্ঞতা অথবা ব্যক্তিগত আগ্রহের উপর ভিত্তি করে দায়িত্ব ভাগ করা হবে। প্রতিষ্ঠাতার যোগ্যতা অনুযায়ী বা কোম্পানির বিশেষ পরিস্থিতিতে শর্ত পাল্টানো যাবে।

২)অন্তিম সিদ্ধান্ত

অন্তিম সিদ্ধান্তএকজন ই নেবেন। সব প্রতিষ্ঠাতাই সিইও হতে পারেন না। স্টার্টআপের ক্ষেত্রে কমিটি গঠন করে বা ভোটের মাধ্যমে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সময় নষ্ট করা তো বটেই,এতে কোম্পানির মরণ ঘন্টাও বেজে যেতে পারে। স্টেক হোল্ডারের জবাবদিহি করবেন এমন একজন শীর্ষ নেতা চাই। যোগ্যতার ভিত্তিতে নেতার পরিবর্তন হলেও, চক্রাকারে তা কখনোই করা উচিত নয়। সংস্থার মূল নীতিগুলিকে আহত না করে,অবশ্যই ব্যবসা সংক্রান্ত বড় সিদ্ধান্তগুলি নেবার অধিকার প্রত্যেক প্রতিষ্ঠাতার আছে। তার মানে এই নয় সব সিদ্ধান্তই ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে নেওয়া হবে। সহযোগীতায় আর আলোচনায় গণতন্ত্র চলে,অন্তিম সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে নয়।

৩) সমদর্শী মনোভাব এবং দায়িত্ববন্টন

পরীক্ষা করে দেখা গেছে ,স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে সমদর্শী নীতিবোধ অকালেই হারিয়ে যায়। প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একইরকম অভিজ্ঞতা আর যোগ্যতার ক্ষেত্রে এটা বেশি হয়। সবাই একইপ্রকার ভালো কাজ করবে এটা ভাবা দুরাশা। আর যদি তাঁদের যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতার তারতম্য থাকে তাহলে অবশ্যই ক্ষমতার পার্থক্য থাকবে। সিইও সেক্ষেত্রে বেশি ক্ষমতা ভোগ করবেন। আলোচনাগুলো সুখকর না হলেও যৌথ উদ্যোগে ব্যবসা শুরুর আগে অবশ্যই বিষয়গুলো পরিষ্কার করে নেওয়া দরকার। অনেক ভবিষ্যৎ জটিলতা এতে কেটে যাবে। সহ প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে সমস্যা সংস্থার ভবিষ্যৎ আঁধারে ঠেলে দেয়। আরেক জটিল বিষয় অধিকার বন্টন। বাজারের আর পাঁচটি সিনিয়র আর সফল সংস্থার কাছ থেকে একজন স্টার্টআপের শিক্ষা নেওয়া জরুরি। সিনিয়রের নীতি অনুসরণ করলে ঝামেলা অনেক কমে। যদি কোনো সহ প্রতিষ্ঠাতা মাঝপথে সংস্থা ছেড়ে দেন,তাহলে যেন মালিকানাহীন শেয়ারের বিকল্প ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়।

প্রতিষ্ঠাতা এবং টিমের সম্পর্ক যেন এক সুখী দাম্পত্য। একটি পূর্ব নির্ধারিত চুক্তিপত্র সেই সম্পর্ক আরও মজবুত করে। গড়গড়িয়ে এগিয়ে চলে সংস্থার উন্নতি আর লাভের চাকা। এক্জিট অবধি সম্পর্ক স্থায়ী হয়। কিন্তু দাম্পত্য জীবনের মতো এখানেও অনেক মোড় এবংচমক আছে।

ভারতী জেকব, সহ প্রতিষ্ঠাতা, সিডফান্ড

ভারতী জেকব, সহ প্রতিষ্ঠাতা, সিডফান্ড


(লিখছেন সিডফান্ডের সহ প্রতিষ্ঠাতা ভারতী জেকব। অনুবাদ এষা গোস্বামী)