কলকাতার ফুডট্রাক "Thank God it's Fresh"

কলকাতার ফুডট্রাক "Thank God it's Fresh"

Tuesday December 08, 2015,

3 min Read

কলকাতার ফুটপাথের খাবার সম্পর্কে উৎসাহের কমতি নেই। রাজপথ থেকে অলি-গলি, রাস্তার দু’পাশে খাবারের পসার সাজিয়ে থাকা ফেরিওয়ালাদের দেখতেই অভ্যস্ত কলকাতাবাসী। অত্যন্ত কম দামের এই মুখরোচক খাদ্যের সম্ভার আগ্রহ জাগিয়েছে বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষের মধ্যে, তৈরি হয়েছে ফটো সিরিজ, লেখা হয়েছে প্রবন্ধ, চলেছে গবেষণা। কিন্তু ‘অস্বাস্থ্য’ শব্দটিও যেন অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে গিয়েছে কলকাতার স্ট্রিট ফুডের সঙ্গে। তাই ইচ্ছে থাকলেও এইসব খাবার চেখে দেখার সাহস করেন না অনেকেই। রাস্তার খাবার সম্পর্কে এই ধারণাই বদলে দিতে চায় থ্যাঙ্ক গড ইট’স ফ্রেশ।

image


দক্ষিণ কলকাতার সাদার্ণ অ্যাভেন্যু এলাকায় চোখে পড়বে এই ফুড ট্রাক। বার্গার, ওমলেট, স্যালাড, জুস ও অন্যান্য পানীয় ইত্যাদি নানা ধরণের খাদ্য পাওয়া যায় এই ফুডট্রাকে। রয়েছে চাইনিস ও কন্টিনেন্টাল খাবারও। প্রত্যেকটিই তৈরি স্বাস্থ্যকর উপায়, পরিচ্ছন্নতার দিকে কড়া নজর রেখে এবং তা পরিবেশন করা হয় টাটকা, এমনটাই দাবি অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সুপর্ণ রায়ের।

“ইট স্ট্রিট নামের টিভি সিরিজ দেখতে দেখতেই প্রথম মাথায় আসে এই পরিকল্পনার কথা। ওই টিভি সিরিজে জাঙ্ক খাবারকে স্বাস্থ্যকর খাবারে পরিণত করার চেষ্টা হয়েছিল, সারা পৃথিবীতে ফুডট্রাকের জনপ্রিয়তার কথাও জেনেছিলাম ওই টিভি সিরিজ থেকে, তখনই মনে হয় আমার শহরেই বা নয় কেন?” বললেন সুপর্ণ।

কর্মসূত্রে দীর্ঘদিন দিল্লিতে থেকেছেন সুপর্ণ, কিন্তু নিজের এই ব্যবসা শুরু করার জন্য নিজের শহর কলকাতাকেই বেছে নিয়েছেন তিনি। অপারেশন ও প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্টে কাজ করার দশ বছরের বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে সুপর্ণর। সঙ্গে পেয়েছেন বাবা সুপ্রিয় রায়কে। হিউম্যান রিসোর্স ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশনস-এ দীর্ঘসময় কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। এছাড়াও এই উদ্যোগে রয়েছেন অলক মিশ্র ও করণ আরোরা। অলক আইএইচএম কলকাতা থেকে কালিনারি আর্টে স্নাতকোত্তর করেছেন, কাজ করেছেন, মুম্বইয়ের ম্যারিয়ট, ওবেরয় ও কলকাতার আইটিসি সোনার বাংলার সঙ্গে। “তাঁর অভিজ্ঞতা নিঃসন্দেহে বড় সম্পদ আমাদের টিমের কাছে”, বললেন সুপর্ণ। অন্যদিকে করণের সেলস ও ম্যানেজমেন্টে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে ১২ বছরের।

সুপর্ণ জানালেন, “আমরা চারজন চার ধরণের ক্ষেত্রে কাজ করেছি, সেই অভিজ্ঞতা আমাদের সমৃদ্ধ করেছে, সেই অভিজ্ঞতাকে আমরা কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি আমাদের এই ব্যবসায়, আর খাবারের প্রতি ভালবাসা তো রয়েইছে। এছাড়া আমাদের কুক ও অন্যান্য সহকারী কর্মীরাও খুব ভাল কাজ করছেন”।

কিন্তু সবাই যখন শহর ছাড়তে ব্যস্ত তখন কলকাতা ফিরে এসে ব্যবসার কথা ভাবলেন কেন? “নিজের শহরে ফেরার ইচ্ছে তো সকলেরই থাকে। এই শহর, এখানকার খাদ্যাভ্যাস আমি অনেক বেশি ভালভাবে জানি। আর বাঙালি যে ভোজন রসিক, তা কে না জানে!” বললেন সুপর্ণ।

ভোর পাঁচটা থেকে রাত আটটা অবধি ক্যালকাটা রোয়িং ক্লাবের সামনে থাকে থ্যাঙ্ক গড ইটস ফ্রেশের ফুড ট্রাক, এছাড়া বিভিন্ন উত্সবের সময় কলকাতার অন্যান্য জায়গাতেও প্রয়োজন মতো দাঁড়ায় এই ট্রাক।

আপাতত একটিই ট্রাক রয়েছে, আগামী দিনে রাজ্যের অন্যান্য জায়গায়ও আরও ফুডট্রাক চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের।

image


অফিস যাত্রী, কলেজ পড়ুয়া ও অন্যান্য পথচলতি মানুষ মূলতঃ ক্রেতা তাঁদের। চটজলদি সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর খাবারই ইউএসপি থ্যাঙ্ক গড ইট’স ফ্রেশের।

ফুডট্রাক কলকাতার নতুন ট্রেন্ড। বিদেশে বহুল প্রচলিত ফুডট্রাকের ব্যবসা ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে এই শহরে। দিন ও সময় অনুযায়ী এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারায় স্থায়ী দোকানের থেকে ব্যবসার সুযোগের ক্ষেত্রে কিছুটা এগিয়ে থাকে ফুডট্রাক। থ্যাঙ্ক গড ইট’স ফ্রেশের পাশাপাশি রয়েছে আগডুম বাগডুম, হাঙরি হ্যান্ডসের মতো ফুডট্রাকগুলি। ইতিমধ্যেই ভাল ব্যবসা করছে প্রত্যেকেই। খাবার বৈচিত্র্য ও স্বাদে কে কাকে পিছনে ফেলে দেবে তা সময়ই বলবে।