শিরোনামে ঋতব্রত, এবার বাংলার গর্বিত হওয়ার সময়

শিরোনামে ঋতব্রত, এবার বাংলার গর্বিত হওয়ার সময়

Thursday January 11, 2018,

2 min Read

গণিত নিয়ে পড়াশুনো অনেকেই করেন। ভালোবেসে না বেসে গণিত নিয়ে ফি বছর শয় শয় ছেলেমেয়ে বাংলার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে বেরন। কিন্তু তার মধ্যে হাতে গোণা মাত্র কয়েকজনই গণিতকে ভালোবেসে গণিতের সাধানয় পড়ে থাকেন। কেউ কেউ আবার গণিতের প্রতি সহজাত প্রেম নিয়ে জন্মান। আজকের কাহিনির নায়ক ঋতব্রত মুন্সি দ্বিতীয় গোত্রের। ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক স্তরে কলকাতার এই কৃতী সন্তান গণিতের শতাব্দী প্রাচীন অমীমাংসিত এক সমস্যার সমাধান করে রীতিমত গণিত বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছেন।

image


সাব কনভেক্সিটি প্রবলেম এ L-functions এর প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপ পেরনো গেলেও তৃতীয় ধাপে আটকে ছিলেন গবেষকেরা। সেই বাধা কাটাতে সফল হয়েছে বাংলার গণিতবিদ মুন্সি। ‘একশো বছরের পুরনো সমস্যার নতুন ডায়মেনশন পেয়েও, তৃপ্ত নন। বলছেন এখনও স্বপ্নের লক্ষ্যে ছুঁতে পারেননি। প্রাইম নম্বরের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা রয়ে গিয়েছে যেগুলো এখনও সমাধান করা যায়নি। সেই সমস্যাগুলি মেটানো প্রায় সব গণিতবিদের স্বপ্ন। তাঁর ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে ইতিমধ্যেই তাঁর কৃতিত্বে মুগ্ধ গোটা দুনিয়ার গণিতজ্ঞেরা। বরানগর আইএসআইয়ের এই অধ্যাপক ২০১৫-য় ভাটনাগর পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। গণিতের জন্য সম্প্রতি ইনফোসিস পুরস্কারেও ভূষিত হন। ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইন্সটিটিউটে বিস্ট্যাট পড়ার সময় থেকেই শিক্ষকদের চোখে পড়ে ঋতব্রতর আশৈশব গণিতের প্রতি ভালোবাসার নমুনা। তাঁরাই মুম্বাইয়ের টিআইএফআরে গরম ও শীতের ছুটিতে মুন্সির পড়ার ব্যবস্থা করে দেন। তখনও গ্রাজুয়েশন শেষ হয়নি। এরই মধ্যে Null Stellensatz (theorem) এ নিজের প্রুফ লিখে ফেলেন মেধাবী এই ছাত্র। ছাপা হয়ে আসার পর রীতিমতো হইচই পড়ে যায়। গণিত বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল মুন্সির থিওরি। সেই থিওরি এখন Munshi's proof নামেই খ্যাত। PhD র জন্য প্রিন্সটনে Institute of Advanced Studies এ চলে যান। বিখ্যাত নম্বর থিয়োরিস্ট অ্যান্ড্রু উলসের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পান। পোস্ট ডক্টরেট করার সময় Henrik Iwaniec এর সঙ্গেও কাজ করেন। ২০১০ সালে মুন্সি ফ্যাকাল্টি হিসেবে TIFR এ যোগ দেন। পাঁচ বছর পর লিয়েনে পড়াতে আসেন ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইন্সটিটিউটে। একমাস পর মুন্সি যখন বরানগর ক্যাম্পাসে যোগ দেন ঘটনাক্রমে সেই সময় ভাটনাগর পুরস্কারে তাঁর নাম ঘোষণা হয়। School of Mathematics, Tata Institute of Fundamental Research, Mumbai এবং Statistics and Mathematics Unit, Indian Statistical Institute, Kolkata তে অধ্যাপনা করেছেন। গণিত নিয়ে গবেষণা এবং অসামান্য অবদানের জন্য The Infosys Prize 2017 পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। গোটা দুনিয়া তার কাজকে কুর্ণিশ করে। তিনি গণিতজ্ঞদের একটি ক্লাবেও তিনিই মধ্যমণি। তৃপ্ত হওয়াটা তার সাজে। তবু তিনি তৃপ্ত নন। গণিত নিয়ে নিরলস গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। খুঁজছেন সমাধান।

ঋতব্রত বলছিলেন ছোটবেলার কথা। সাত আট বছর বয়সে শুরুটা হয়েছিল বাবার সায়েন্স জার্নালে খুঁজে পাওয়া কতগুলি সিম্বল দিয়ে। খুদে ঋতব্রত গণিতের রহস্যে মোড়া সংকেতের দুনিয়ায় বাস করতে থাকেন। ভালোবেসে ফেলেন সংখ্যা আর সংকেতের রাজত্ব। সেই ভালোলাগাটাই অপূর্ব সুন্দর ফুল ফুটিয়েছে বাংলার মাটিতে।