পূর্বাঞ্চলে প্রথম জিন গবেষণার স্টার্টআপ inDNA

পূর্বাঞ্চলে প্রথম জিন গবেষণার স্টার্টআপ inDNA

Wednesday June 28, 2017,

3 min Read

কঠিন রোগ নির্ণয়ের বিজ্ঞান অনেকটা রাস্তা পেরিয়ে এসেছে। গত কয়েক দশক ধরে চিকিৎসার ব্যবস্থাও বদলেছে। রক্ত পরীক্ষা, থুতু পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয়ের পাশাপাশি গোটা দুনিয়ায় এখন ডিএনএ নির্ভর রোগ নির্ণয় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ক্যান্সারের মত কঠিন রোগ নির্ণয় এবং নিরাময় দুইই ডিএনএ নির্ভর চিকিৎসায় সম্ভব। ভারতেও ক্রমে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই ধরণের রোগ নির্ণয়ের প্রযুক্তি। ড. বীরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি এই নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করছেন। ধানবাদের বাঙালি বিজ্ঞানী ড. ব্যানার্জি ২০১২ সালে ওড়িশায় তাঁর ডায়াগনস্টিক স্টার্টআপ inDNA Life ciences শুরু করেন। 

image


বলছিলেন তাঁর এই উদ্যোগের কথা। ইনডিএনএ তৈরি করার পিছনে তাঁর দীর্ঘদিনের গবেষণা এবং আগ্রহ যেমন কাজ করেছে তেমনি পূর্বাঞ্চলে জেনেটিক রোগনির্ণয় করার উপযুক্ত সেন্টার তৈরি করার তাগিদটাও ছিল। ভারতে দিল্লি, চেন্নাই, মুম্বাই এবং বেঙ্গালুরু বাদে খুব একটা জেনেটিক রোগ নির্ণয়ের সেন্টার নেই। সেই অভাব বোধ থেকেই ইনডিএনএর জন্ম। মূলত ক্যানসার এবং জটিল জিনগত রোগ নির্ণয় করার জন্যে তাঁর সংস্থা DNA based diagnostics এবং Genome health assessment (GHA) এর পরিষেবা দিয়ে থাকে।

ওদের ক্যাচ লাইন, প্রেডিক্ট, প্রিভেন্ট এবং পার্সোনালাইজ। জিনের গঠন এবং তার সমস্যা অনুসন্ধান করাতেই ওরা থেমে থাকেন না। নিরাময়ের রাস্তাটাও দেখান। মূলত ক্যারিওটাইপিং এবং ফিস বা ফ্লুরোসেন্স ইন সাইটো হাইব্রিডাইজেশন। এই দুধরণের অনুসন্ধান করে ইনডিএনএ লাইফ সায়েন্স। ক্যারিওটাইপিং পরীক্ষার মাধ্যমে ক্রোমোজোমের আকার আকৃতি এবং সংখ্যা জরিপ করা যায়। ক্রোমোজোমের পরিমাণ কম হলে কিংবা বেশি হলে অথবা ক্রোমোজোমে কোনও অস্বাভাবিকতা থাকলে সেটা সহজেই চিহ্নিত করা সম্ভব। বোঝাচ্ছিলেন ডক্টর ব্যানার্জি। আর ফিস টেস্টিং কাজে লাগে মূলত ভ্রূণ থেকে সন্তানের জন্মানোর আগে পরে জিনগত কোনও সমস্যা আছে কিনা সেটা নির্ণয় করার জন্যে। পাশাপাশি ক্যান্সার ডিটেকশন বা ক্যান্সার নির্ণয়েও ফিস টেস্টিং প্রয়োজন পরে। ডিএনএ সংক্রান্ত যেকোনও জটিলতায় ইনডিএনএ লাইফসায়েন্সেস অসাধারণ কৃতিত্বের দাবিদার।

শুধু ওড়িশায় নয় গোটা পূর্বাঞ্চলে ছড়িয়ে আছে তাদের ক্লায়েন্ট। কলকাতায়ও নামকরা বেশ কিছু ডায়াগনস্টিক সেন্টার ডিএনএ নির্ভর সমস্ত পরীক্ষা ওদের ল্যাব থেকেই করিয়ে থাকে। গোটা পূর্বাঞ্চলে ডক্টর ব্যানার্জির সংস্থাই প্রথম কোনও ক্লিনিক যারা একটি মলিকিউলার প্লাটফর্ম তৈরি করেছে, যার মারফত ডিএনএ সংক্রান্ত কোনও পরিবর্তন চিহ্নিত করা যায় এবং তার শারীরিক কী প্রতিক্রিয়া হতে পারে অথবা কোন ধরণের রোগ হতে পারে তার আগাম ইঙ্গিত দিয়ে থাকে। সেদিক থেকে এই সংস্থা অভিনব।

প্রবাসী বাঙালি ডক্টর ব্যানার্জির পরিবার দীর্ঘদিন আগে ধানবাদে এসে ব্যবসা করতে শুরু করে। ঠাকুরদা ধানবাদে যথেষ্ট প্রভাবশালী ছিলেন। বাবাও তাই। বীরেন্দ্রনাথ লেখাপড়ায় চিরকালই ভালো। মেধাবী ছাত্র। ধানবাদের গণ্ডি পেরিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে উচ্চশিক্ষা। চেন্নাইয়ের রামচন্দ্র মেডিকেল ইউনিভার্সিটি থেকে এমএসসি করেছেন। বেঙ্গালুরুর মণিপাল ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করেন। তারপর গবেষণার কাজের সূত্রেই যান সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইয়ঙ লু লিন স্কুল অব মেডিসিনে ২০০৫ থেকে ২০০৮ তিন বছর পোস্ট ডক্টরাল গবেষণা করেন। এরই ফাঁকে যান জাপানের চিবায় ভিজিটিং সায়েন্টিস্ট হিসেবে। সেখানকার ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব রেডিয়েশন সায়েন্স-এ গবেষণা করেন বীরেন্দ্রনাথ। ২০১৩ সালে ডাক পান আমেরিকার হাউস্টনে বেইলোর কলেজ অব মেডিসিন থেকে। সেখানেও গবেষণা করে এসেছেন এই বিজ্ঞানী। তাঁর এই দীর্ঘ অভিজ্ঞতা এবং বৈদগ্ধে পূর্ণ গবেষণার ফসলই তাঁর এই সংস্থা। জীন তত্ত্ব এবং তার প্রায়োগিক দিক নিয়ে তাঁর গবেষণা বিশ্বের জেনেটিক রিসার্চের অঙ্গনে অমূল্য সম্পদ। মোলিকিউলার স্ট্রেস অ্যান্ড স্টেম সেল বায়োলজি নিয়ে কাজ করে চলেছেন ডক্টর ব্যানার্জি। তাঁর এই গবেষণা এবং নিরলস উদ্যোগ দেশে ক্যান্সার রোগ নির্ণয় এবং নির্মূল করার কাজে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

জীবনে প্রচুর সম্মান পেয়েছেন ডক্টর ব্যানার্জি। কলিঙ্গা ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির এই অধ্যাপক শুধু অ্যাকাডেমিক্স নিয়েই পড়ে থাকতে পারতেন। কিন্তু সমাজের উপকার করার তাগিদ আর উদ্যোগপতি বাপ-দাদার ঝুঁকি নেওয়ার সাহসী জিন ওঁকে উদ্বুদ্ধ করেছে এই সংস্থা তৈরি করতে। কলিঙ্গা ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির টিবিআই-এ চলছে ইনকিউবেশন। ইতিমধ্যেই গোটা পূর্বাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে ওদের সংস্থার নামডাক। দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় স্থায়ী এবং যুগান্তকারী পরিবর্তন আনার স্বপ্ন দেখছে তাঁর সংস্থা ইনডিএনএ লাইফসায়েন্সেস।