নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আকাশ ছোঁবেন গার্গী

নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আকাশ ছোঁবেন গার্গী

Monday November 16, 2015,

3 min Read

বেদের গার্গীকে মনে পরে? না ইনি তিনি নন। অন্য একজন। গার্গী ভট্টাচার্য। জুয়েলারী ডিজাইনার আর সফল স্টার্টআপ। ইভেন্ট ম্যানেজারও বলতে পারেন। ২০১৩ পর্যন্ত লোকে তাঁকে সাংবাদিক হিসেবেই চিনতেন। আজ গার্গী শুধু নিজে সফল মাল্টিটাসকার নন। একাধিক মহিলাকে স্বনির্ভর হওয়ার পথ দেখাচ্ছেন। কিভাবে বদলে গেলেন গার্গী? কি করেই বা হয়ে উঠলেন একজন চাকুরিজীবী থেকে উদ্যোগপতি? আসুন জেনে নিই সেই গল্প।

image


কিছুদিন ধরেই আর চাকরি করতে ভালো লাগছিলো না গার্গীর। মনে হচ্ছিলো নিজের মতো করে কিছু একটা করতে হবে। তাঁর এক সহকর্মীর সঙ্গে একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থা খোলার পরিকল্পনা করেন। তবে সেই মুহূর্তে পুরো ব্যাপারটাই পরিকল্পনার স্তরে ঘুরপাক খেত। পরী উড়ে যেত কল্পনা পরে থাকত। কিছুতেই সাহস করে চাকরিটা ছাড়তে পারছিলেন না। ২০১৩ সালে সারদা কান্ডের জেরে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন। প্রথম দিকে বেশ কিছু দিন দিশেহারা লাগছিল, কিন্তু সেই দুর্বলতাকে বেশি প্রশ্রয় না দিয়ে ঘুরে দাঁড়ালেন গার্গী। অল্প দিনের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নিলেন আর চাকরি খুঁজবেন না।

তাঁর একার পক্ষে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থা খোলা সম্ভব ছিল না। কারণ তার জন্য কিছু প্রস্তুতি লাগে। এমন কিছু একটা করতে চাইছিলেন যা তিনি ভালোবেসে করবেন। মাথায় এলো নানান ডিজাইনের গয়না পরতে ভালোবাসেন। নিজে বানাতেও পারেন। মা খুব ভালো হাতের কাজ জানেন। মায়ের কাছে কাপড়ের বিডস, সুতোর বিডস বানানো শিখেছেন। পুরোনো জাঙ্ক জুয়েলারি ছিঁড়ে গেলেও কখনো ফেলে দেন না। নতুন ডিজাইন দিয়ে বানিয়ে নেওয়াই তাঁর স্বভাব। সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হলো না। ইউরেকা মুহূর্তটা দারুন উপভোগ করলেন গার্গী।

২০১৪ সালের অক্টোবর। পুজোর ঠিক আগখানে মাত্র ২,০০০ টাকা বিনিয়োগ করে গার্গী ব্যবসা শুরু করলেন। আর আজ মাসে কুড়ি হাজার টাকা হেসে খেলে রোজগার করেন গয়নার এই ব্যবসা থেকে। মানে প্রায় ১০ গুণ। শুরুর দিকটা মসৃণ তো ছিলই না বরং অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন এই সাহসী মেয়ে। প্রতিটি সমস্যাই তাঁকে আরও মজবুত করেছে, ভালো কাজ করতে মোটিভেট করেছে। 

ফেসবুকে পেজ তৈরি করেছেন। নাম দিয়েছেন বং ক্যারাভান। সেখানেই নিজের তৈরি গয়নার ছবি দেওয়া শুরু করেন। প্রথম প্রথম বন্ধু বান্ধবরাই তাঁর থেকে গয়না কিনতেন। কিন্তু পরের দিকে ফেসবুক পেজ আর ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে অনেক অচেনা মানুষ যোগাযোগ করতে শুরু করেন। গার্গী টের পান ব্যবসা বাড়ছে। এবার পুজোর আগে তো বটেই পুজোর মধ্যেও প্রচুর অর্ডার পেয়েছেন। এর মধ্যেই বেশ কিছু একজিবিশনে অংশ নিয়েছেন। খুব ভালো সাড়া। অনেকেই তাঁর সঙ্গে ব্যবসা করার জন্য আগ্রহ দেখিয়েছেন। অনেক নতুন যোগাযোগ তৈরি হয়েছে। তিনি ব্যবসাটা আরও বাড়াতে চান। শুধু গয়না নয়, আরও নানা ধরনের লাইফ স্টাইল প্রোডাক্টের কালেকশন নিয়ে হাজির হতে চান।

শান্তিনিকেতনে এবারের পৌষমেলায় স্টল দেবেন। একা সামলে উঠতে হিমসিম। এখন দুজন সাহায্য করার জন্য আছেন। গার্গী আরও কর্মী চাই। কর্মীর খোঁজে গিয়েছিলেন সুন্দরবন। সরবেড়িয়া গ্রামের মহিলাদের সঙ্গে কথা বলে এসেছেন। ওয়ার্ক শপ করবেন।

এছাড়াও স্বপ্নের ইভেন্টসিয়া

গার্গী প্রথম স্বপ্নটার কথাও ভুলে যাননি। সেটা সফল করার লড়াইও চলছে জোর কদমে। এই বছরের গোড়ার দিকেই তাঁর এক পরিচিত মানুষের সঙ্গে পার্টনারশিপে শুরু করেছেন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থা ইভেন্টসিয়া। ওয়েবসাইটও আছে। www.eventsia.net। বেশ কয়েকটা কাজও করেছেন ইতিমধ্যে। এখন তিনি দুটি কাজই সমান তালে করেন। সমান সময় এবং পরিশ্রম দেন।

আত্মবিশ্বাসী গার্গী মাল্টি টাস্কিং পছন্দ করেন। তিনি মনে করেন যা করছেন সেটা যদি একটা পজিটিভ মনোভাব নিয়ে করেন সেই কাজে সাফল্য আসবেই।