জেটলির বাজেটে 'স্টার্টআপ' কোথায়?

জেটলির বাজেটে 'স্টার্টআপ' কোথায়?

Tuesday March 01, 2016,

3 min Read

১৫ অগস্ট, ২০১৫। লালকেল্লায় স্টার্ট আপ ইন্ডিয়া, স্ট্যান্ড আপ ইন্ডিয়ার স্লোগান তুলেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। প্রধানমন্ত্রীর ‘ফ্ল্যাগশিপ প্রজেক্ট’ দিনের আলো দেখে গত ১৬ জানুয়ারি। স্ট্যান্ড আপ ইন্ডিয়ার মঞ্চে দেশের তাবড় শিল্পপতিদের সামনে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি নতুন উদ্যোপতিদের জন্য তুলে ধরেছিলেন সরকারের রোডম্যাপ। সেখানে জানানো হয়েছিল স্টার্ট আপদের জন্য ১৯টি অ্যাকশন প্ল্যান নেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে ছিল ১০ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল তৈরির প্রতিশ্রুতি, স্টার্ট আপ ইন্ডিয়া হাব গঠন, প্রথম তিন বছর স্টার্ট আপদের সম্পূর্ণ আয়কর ছাড়ের মতো ঘোষণা। স্ট্যান্ড আপের মঞ্চে দাঁড়ানোর দেড় মাসের মধ্যে কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ হল। বাজেট ভালো হল, মন্দ হল সেই তর্কে নতুন করে গিয়ে আর লাভ নেই। রাজনীতির ময়দানে সেসব নিয়ে তুমুল হট্টগোল হয়েছে। কেউ বলেছেন দিশা কেউ বলেছেন কৃষকের কথা ভেবে সাজানো হয়েছে গেম প্ল্যান। কিন্তু প্রশ্ন হল স্টার্টআপদের জন্যে কী থাকল এই বাজেটে আসুন একবার খতিয়ে দেখি। 

image


শুরুয়াতি ব্যবসায়ীদের জন্যে যা আছে বাজেটে

১. স্টার্ট আপদের জন্য প্রথম তিন বছরে ১০০ শতাংশ কর ছাড়।

২. স্ট্যান্ড আপ ইন্ডিয়া প্রকল্পের মাধ্যমে এসসি, এসটি, মহিলা উদ্যোগপতিদের উন্নয়নের চেষ্টা। এর জন্য জাতীয় হাব তৈরি হবে। এই খাতে বরাদ্দ ৫০০ কোটি টাকা। এর ফলে উপকৃত হবেন ২.৫ লক্ষ নতুন উদ্যোগপতি।

৩. ১৫০০ বহুমুখী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করা। দক্ষ উদ্যোগপতি তুলে ধরার লক্ষ্যে ১৭০০ কোটি টাকা খরচ বরাদ্দ।

৪. স্টার্ট আপদের জন্য ২০১৬ সালের মধ্যে ১০০টি মডেল কেরিয়ার সেন্টার গঠন।

জেটলি জানিয়েছেন এবছর বি আর আম্বেদকরের ১২৫ তম জন্মবার্ষিকী। তাঁকে নিয়ে দেশ জুড়ে নানা অনুষ্ঠান পালিত হচ্ছে। তাই এই সময়ে এসসি, এসটি আন্ত্রেপ্রেনিয়রদের আর্থিক ক্ষমতায়নের বছর হওয়া উচিত। কেন্দ্রীয় এমএসএমই মন্ত্রক এবং শিল্প সংস্থাগুলি এই ব্যাপারে এগিয়ে আসবে। আর আন্ত্রেপ্রেনিয়রদের পাশে থাকতে বড় ভূমিকা নেবে দলিত ইন্ডিয়া চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ। যাদের কাজ হ‌বে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির প্রতিনিধিদের মধ্যে থেকে আন্ত্রেপ্রেনিয়রদের তৈরি করা। জেটলি আরও জানিয়েছেন এসসি, এসটিদের স্বপ্নপূরণের জন্য এই হাব সবরকমভাবে পাশে থাকবে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী মনে করেন এভাবেই স্ট্যান্ড আপ উদ্যোগ সফল হয়ে উঠবে। ঘোষণার সঙ্গে প্রনয়নের প্রচলিত ফাঁকটা যদি না থাকে তাহলেই স্টার্টআপদের পক্ষে মঙ্গল।

দলিত উন্নয়নে বিশেষ নজর

দেশ এগোবে যখন দেশের পিছিয়ে থাকা সম্প্রদায়ের মানুষ এগোবেন। তাই এবারের বাজেটে দলিত সম্প্রদায়ের দিকে বিশেষ নজর দিয়েছে কেন্দ্র। বিশেষত দলিত সম্প্রদায়ের মহিলা উদ্যোগপতিদের আরও বেশি করে সুযোগ দিতে চান অরুণ জেটলি। যদিও আমাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দেখেছি ঘোষণা আর বাস্তবায়নের মধ্যে অনেকটা বড় ফাঁকা থেকে যায়। ইউপিএ টুর সময় তৎকালীন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম দলিতদের জন্য এসএমই-র উদ্বোধন করেছিলেন। যা পরে কার্যত বন্ধ‌ হয়ে গিয়েছিল। তখন দেশের ক্ষুদ্র শিল্প উন্নয়ন ব্যাঙ্ক এই ফান্ডের ব্যাপারে বড় ভূমিকার নেবে এরকমই বলা হয়েছিল। চিদম্বরম নিজে এই ব্যাপারে বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাঙ্ক, রাষ্ট্রায়াত্ত বিমা সংস্থা এবং ডিআইসিসিআই সদস্যদের এগিয়ে আসার কথা বলেছিলেন। কিন্তু তারা সেভাবে আগ্রহ না দেখানোয় এই উদ্যোগ পরর্বতীতে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। তখন এসসি, এসটি উদ্যোগপতিরা জমি এবং ঋণের ক্ষেত্রে অনেক সময়ই সমস্যায় পড়েন। থমকে যায় অনেক উদ্যোগ। 

তবে গত বছর বাজেটে অরুণ জেটলি ক্ষুদ্র, ছোট এবং মাঝারি উদ্যোগীদের জন্য মাইক্রো ইউনিট ডেভলপমেন্ট রিফাইন্যান্স এজেন্সি বা মুদ্রা ব্যাঙ্কের কথা ঘোষণা করেন। যার জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিলও তৈরি হয়। সেই প্রকল্পে আশার আলো দেখেন দেশের কোটি কোটি ছোটো উদ্যোগপতি। স্বীকার অস্বীকার রাজনীতির খেলা ছিল, আছে, থাকবে। কিন্তু সার্বিক উন্নয়নের নিরীখে এই উদ্যোগগুলি জরুরী। যেমন জরুরি দলিত এবং অনগ্রসর সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে স্টার্টআপ ইন্ডিয়ার বার্তা পৌঁছে দেওয়া। এবছরের বাজেটে এসসি, এসটি উদ্যোগপিতদের তুলে ধরার কথা তাই সময়োপযোগী। 

পাশাপাশিভাবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতও বটে। কারণ বিরোধীরা বলছেন এটা এমন একটা সময় বলা হল যখন রোহিত ভেমুলা আত্মহত্যা ইস্যুতে চাপে রয়েছে সরকার। অভিযোগ দলিতদের পাশে নেই টিম মোদি। রোহিতের আত্মহত্যাকে এভাবেই রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে বিরোধীরা। সেই প্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রীর এই ঘোষণা দলিত বা তথাকথিত পিছিয়ে পড়া শ্রেণির আন্ত্রেপ্রেনিয়রদের পাশে থাকার মস্ত বড় আশ্বাস।