গলদায় গলদ, তবু বাজিমাত বাড়ুই পরিবারের

গলদায় গলদ, তবু বাজিমাত বাড়ুই পরিবারের

Monday January 04, 2016,

3 min Read

জীভে জল আনা গলদা চিংড়ি হোক বা দমদার বাটার চিকেন মশলা। দমদমের বাড়ুই পরিবারের তৈর‌ি রান্নার প্লেট দেখলেই আপনার মন আনচান করে উঠবে। কিন্তু ভুলেও প্লেট দেখে রান্নার স্বাদ নিতে যাবেন না! ঠকবেন। কারণ নজরকাড়া এইসব টেংরি কাবাব, সর্ষে রুই, বাটার চিকেন বা গলদা চিংড়ি অখাদ্য। তৈরি হয়েছে ফাইবার দিয়ে। আর ফাইবার দিয়ে রোজই নিত্য নতুন খাবার তৈরি করে এভাবেই নজর কাড়ছে দমদমের বাড়ুই পরিবারের 'বাড়ুই স্কাল্পচার'।

image


সংস্থার কর্ণধার শিবনাথ বাড়ুই এর ছেলে নিহাল বাড়ুই ব্যাবসার বাইরের দিকটা দেখাশোনা করেন। শুরু হয়েছে কয়েক বছর আগে। নতুন কিছু বানানোর তাগিদে। পারিবারিক ফাইবার স্কাল্পচারের পুরনো ব্যাবসায় জুড়ে গেল এই নতুন ডানা। নীহালের দাবি এরাজ্যে তাঁদের হাত ধরেই বাজারে প্রথম পা রেখেছে এফ আর পি দিয়ে তৈরি বাঙালির পরিচিত রান্নার পদ। এফ আর পি বা ফাইবার রিইনফোর্সড পলিমারের সঙ্গে আমরা পরিচিত। কিন্তু তা দিয়ে যে দৈনন্দিন বাঙালি খাবার তৈরি করা সম্ভব তা ওঁরাই নাকি প্রথম করে দেখিয়েছেন। ওঁদের ওয়ার্কশপে নতুন টেকনোলজি কাজে লাগিয়ে পলিমারের টেক্সচার বদলে একদম রিয়েল লাইফের খাবারের টেক্সচার আনা হয়। প্রথম, প্রথম লোকজন এই প্রোডাক্টের বিষয়ে একদমই জানতেন না। তারা দেখে অবাক হতেন। নীহাল বলছিলেন, "আমরা প্রথমে যে মেলাগুলোতে স্টল দিতাম তাতে দু একটা খাবারের আইটেম বানিয়ে নিয়ে যেতাম। মেলার লোকজনের কাছ থেকে ভাল রেসপন্স পাই। তারপর আমরা খাবারের আরও বেশ কিছু প্রোডাক্ট বানাই। দেখলাম লোকজন নতুনকে আপন করে নিচ্ছেন। সেই শুরু। আর থামিনি। এখন প্রচুর কাস্টমার নিয়মিত আমাদের কাছ থেকে জিনিস কিনছেন। কেউ কেউ আবার তদের পছন্দমত আমাদের আইটেম তৈরী করে দিতে বলছেন।" আগে লোকজন মূলত ঘর সাজানোর জন্য এই প্রোডাক্ট কিনতেন। কিন্তু এখন সামাজিক অনুষ্ঠানেও এর চল বাড়ছে। তত্ত্ব বা গায়ে হলুদের মত সামাজিক অনুষ্ঠানেও বিকোচ্ছে তাঁদের প্রোডাক্ট। নতুন বরকে বোকা বানাতে ফাইবারের খাবারের আইটেম কিনছেন অনেকে।

তবে শুরুর দিকটা কিন্তু এরকম ছিল না। আগে এফ আর পি প্রোডাক্ট হিসাবে শুধু ফল, সব্জির বা ঘর সাজানোর চলতি প্রোডাক্টেরই দেখা মিলত বাড়ুই স্কাল্পচারে। তবে এখন সময় পাল্টেছে। পাল্টেছে দমদমে তাদের ওয়ার্কশপে কাজের ধরণও। এখন বেশী কাজ মূলত খাবারের প্লেট তৈরির। ক্লায়েন্ট তালিকাও বেশ দীর্ঘ। এই পূজোয় ইমামির রান্নার তেলের স্টলে যত ভাপা ইলিশ বা সর্ষে চিংড়ির প্লেট দেখেছেন তার সবই তাঁদের দমদমের ফাইবার হেঁসেল থেকেই তৈরি। এছাড়া বহুজাতিক বিপণী স্পেনসার্সের জন্যেও ফুড প্রোডাক্টের রেপ্লিকা তৈরি করেছেন তাঁরা। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সাবালক হয়েছে ব্যাবসার ধরণ। অনলাইন ব্যাবসার বিরাট বাজার ধরতে স্লাপডিলে নথিভুক্ত হয়েছেন তাঁরা। তবে নিহালের কথায়, "স্নাপডিলের থেকে এখনও সেরকম সাড়া পাইনি। খুব বেশি অর্ডার আসেনি অনলাইনে।"

তবে ব্যাবসায় ওঁরা এক নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। নিহাল জানালেন,"আমাদের কাছ থেকে কাজ শিখে কিছু কারিগর স্বাধীনভাবে এই প্রোডাক্ট বানানোর ব্যবসায় নামছেন। এছাড়াও কিছু ফাইবার গ্লাস শিল্পীও এই ব্যবসার দিকে ঝুঁকছেন। তবে আমাদের ইউ এস পি হল খাবারের আইটেমের ভ্যারিয়েশন। কয়েকমাস অন্তর নতুন প্রোডাক্ট আনার চেস্টা করি আমরা। গতমাসে লঞ্চ করা তেল কই এখন হটকেকের মত বিকোচ্ছে। সব ধরনের ক্রেতার পকেট ও চাহিদার কথা ভাবি। সেই কারণে ৬০ টাকার সিঙ্গল মাছের আইটেম থেকে ১,২০০ টাকা দামের গলদা চিংড়িও বানাই আমরা।"

পাড়ুইদের হাত ধরে এভাবেই ফাইবারের ঘর সাজানোর উপকরণ এক নতুন বাজারের সন্ধান পেয়েছে। বাজার ছেয়ে যাচ্ছে ক্রমশই এফ আর পির তৈরি পণ্যে। সেজন্যই মাঝে মাঝে নিজেকে ধন্যবাদ দেন শিবনাথ বাড়ুই। ভাগ্যিস! ফাইবার প্রোডাক্টের বাঁধা ছকে আটকে না থেকে নতুন কিছু করার ঝুঁকিটা নিয়েছিলেন।