বেকার সমস্যার মুশকিল আসান তিন বন্ধুর স্টার্টআপ

বেকার সমস্যার মুশকিল আসান তিন বন্ধুর স্টার্টআপ

Saturday September 19, 2015,

4 min Read

খুব ছোটবেলায় আমার বাবা-মা যখন আলাদা হয়ে যায় আমি মায়ের সঙ্গে থাকতাম। তিন বছর বয়সে বাবা মারা যায়, বছর দুই পর মা-ও। সেই থেকেই আমার জীবন অনিশ্চয়তায় ভরা। এই বন্ধুর বাড়ি থেকে ওই বন্ধুর বাড়ি, তাঁদের পরিবারের দয়ায় বেঁচে থাকা এইভাবেই কেটেছে জীবনের অনেকগুলি বছর।আজকাল যখন অনেক রাতে বাড়ি ফিরি, মনে হয় সেই ভেসে বেড়ানো এখনও আমার শেষ হয়নি। কিন্তু তারপরই মনে হয় আমার জীবনের নিয়ন্ত্রণ আমারই হাতে, তখন বেশ গর্ব হয়, ভাল লাগে।

আসানজব #AasaanNahiHai ফেসবুক ক্যাম্পেইনে খুঁজে পাওয়া যায় এমনই সব গল্প।

নভেম্বর, ২০১৪-য় aasaanjob.com শুরু করেন আইআইটি-পাওয়াই এর তিন প্রাক্তনী, দীনেশ গোয়েল, গৌরব তোশনিওয়াল ও কুণাল যাদব।

বাঁদিক থেকে ডান দিকে  গৌরব তোশনিওয়াল, দীনেশ গোয়েল ও কুণাল যাদব

বাঁদিক থেকে ডান দিকে গৌরব তোশনিওয়াল, দীনেশ গোয়েল ও কুণাল যাদব


প্রতিষ্ঠাতারা এমন কিছু একটা শুরু করতে চাইছিলেন যা মানুষকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করবে। এবং লাভ হবে। রিক্রুটমেন্ট সেক্টরে তাঁরা সেই সুযোগ দেখতে পান, তাঁদের মতে এটি একটি অসম্ভব বড় বাজার যেখানে খুব বেশি কোম্পানি কাজ করেনি। গ্রে-কলার্ড ইন্ডাস্ট্রির চাকরি প্রার্থীদের চাকরির সুযোগ পাইয়ে দেওয়ার জন্যেই এই কর্মখালির পোর্টাল খোলা।

আপাত প্রতিদ্বন্দ্বী বলতে বাবাজব, ন্যানোজবের মতো কোম্পানিগুলি অবশ্য ব্লু কলার্ড কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে দারুণ কাজ করছে। যেমন ড্রাইভার থেকে গৃহপরিচারিকা, হাজার রকমের চাকরি প্রার্থীকে কাজের যোগাযোগ করিয়ে দিচ্ছে। বুকমাইবাই-এর মাধ্যমে রয়েছে অফিশিয়াল গৃহপরিচারিকা রাখার সুযোগ।

তাই শুরু থেকেই অন্য সেগমেন্ট খুঁজছিলেন গৌরবরা। বেছে নেন গ্রে কলার্ড প্রার্থীদের। ইতিমধ্যেই ভাল সাড়া পেয়েছেন ওঁরা। প্রচুর ক্লায়েন্ট পেয়েছেন। প্রায় ৪০০ ক্লায়েন্টকে উপযুক্ত কর্মী সরবরাহ করেছে ওদের পোর্টাল। যার মধ্যে ২২০টি সংস্থা নিয়মিত কর্মী নিয়োগ করে ওদের পোর্টালের মারফত।

ক্লায়েন্টদের মধ্যে রয়েছে গ্রফর, ইউরেকা ফোর্বস, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক, হোলাশেফ ও পার্সেলড এর মতো কোম্পানি। দীনেশ জানালেন, পণ্য সরবরাহ বা ডেলিভারিতে সবথেকে বেশি চাকরির যোগাযোগ দেয় আসানজব। তারপর রয়েছে ফিল্ড সেলের কর্মী নিয়োগ। এখন প্রায় ৭৫,০০০ নথিভুক্ত গ্রাহক রয়েছে এই পোর্টালে, এবং সংখ্যাটা প্রতিদিনই বাড়ছে।

মুম্বই, নভি মুম্বই ও থানে এই তিনটি জায়গায় কাজ করে আসানজব, আগামী তিন মাসে দিল্লিতে ও সামনের বছর বেঙ্গালুরুতে কাজ শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়াও চাকরি প্রার্থীদের আসানজবে নাম নথিভুক্ত করানোর জন্য প্রতিনিধি রয়েছে মহারাষ্ট্রের আটটি জেলায়।

প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ

বাজারে যথেষ্ট সুযোগ থাকলেও শুরুটা মোটেই সহজ ছিল না। প্রাথমিক গবেষণার সময়ই কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতারা বুঝতে পারেন যদিও সম্ভাব্য গ্রাহকদের ৭০ শতাংশই অ্যানড্রয়েড ফোন ব্যবহার করেন, কিন্তু তাঁরা প্রযুক্তি ব্যবহারে খুব বেশি স্বচ্ছন্দ নন। ফলে আসানজবের প্রযুক্তিগত ব্যবহার গ্রাহকদের বোঝানোই মূল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। “এছাড়াও বেশিরভাগ সময়ই চাকরি প্রার্থীদের নিয়ে খুশি হয়না কোম্পানিগুলি, এই ইন্ডাস্ট্রিটাই এরকম”, বললেন দীনেশ। অনেক সময়ই আবার চাকরির আবেদন করেও ইন্টারভিউতে অনুপস্থিত থাকেন প্রার্থী।

বিনিয়োগ সংগ্রহ

জানুয়ারিতে আইডিজি ভেঞ্চার ও ইনভেনটাস ক্যাপিটাল পার্টনারের থেকে ১.৫ মিলিয়ন সিড রাউন্ড বিনিয়োগ সংগ্রহ করেছে তাদের সংস্থা। দীনেশ জানালেন বিনিয়োগ সংগ্রহের পর তিনটি মূল লক্ষ্য ছিল, প্রথমত টিম গঠন, যা শেষ হয় এপ্রিলে। বেশিরভাগ ভার্টিক্যাল হেডরাই আসেন আইআইটি থেকে। এখন ৩০ জনের টেকনিক্যাল টিম (ইঞ্জিনিয়ারিং ও ডিজাইন) সহ মোট ১৩০ জন সদস্যের টিম নিয়ে কাজ করছে aasaanjob.com।

টিম আসানজব.কম

টিম আসানজব.কম


দ্বিতীয় লক্ষ্য ছিল প্রাথমিক গ্রাহক ও ক্লায়েন্ট সংগ্রহ ও শেষতম হল পণ্য উৎপাদন।

পণ্য তৈরি

পণ্য তৈরির প্রথম সাড়ে তিন মাস পণ্যের ব্যবহারযোগ্যতা পরীক্ষা করে টিম আসানজব.কম. জুলাই মাসে সেই পরীক্ষার ওপর ভিত্তি করে পরিবর্তন আনা হয়।

দীনেশ বললেন, “পণ্যটি তৈরির সময় আমরা আমাদের গ্রাহকদের প্রয়োজন ও অভ্যাসের ওপর জোর দিই, তাঁদের রোজকার ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে করে পণ্যটিকে উন্নত করা চেষ্টা করি। তাই প্রযুক্তি আমাদের কাছে শুধু মাত্র মাধ্যম, কিন্তু আমাদের মূল অভিমুখ গ্রাহকদের সঙ্গে সঠিক পদ্ধতিতে যোগাযোগ স্থাপন।

এই উদ্দেশ্যেই চালু করা হয়েছে ৯০ সেকেন্ডের অডিও বিবরণ। অনেক সময়ই এই ক্ষেত্রের চাকরি প্রার্থীরা বিবরণ পড়ে চাকরিটি সম্পর্কে সঠিকভাবে বুঝতে পারেন না, অডিওটি শুনে সহজেই তাঁরা তা পারবেন। এছাড়াও চালু হয়েছে WAP ওয়েবসাইট, যা সাধারণ ওয়েবসাইটের থেকে ০.৬ শতাংশ হাল্কা। ইতিমধ্যেই হিন্দিতে চালু হয়েছে আসানজব.কম, পরবর্তী লক্ষ্য মারাঠি ভাষায় ওয়েবসাইটটি লঞ্চ করা এবং তারপর হিন্দি ও মারাঠি ভাষায় মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন।

গ্রাহকদের সরাসরি কথা বলার জন্য শুরু করা হয়েছে চ্যাটের সুযোগ। আগামী পরিকল্পনা হল, ওয়েবসাইটটি এমনভাবে সাজানো যাতে চাকরি প্রার্থী ও চাকরি দাতা অনুমতি সাপেক্ষ সরাসরি নিজেদের মধ্যে কথা বলতে পারেন।

পরবর্তী পরিকল্পনা

দিল্লির একটি কোম্পানির সহয়তায় প্রার্থীদের সত্যতা যাচাই করাই হবে পরবর্তী পদক্ষেপ। চাকরি দাতা ও চাকরি প্রার্থী উভয়েই নৈতিকতার ক্ষেত্রে নানা সমস্যার মুখাপেক্ষী হন। দীনেশ জানালেন, ফিডব্যাকের বিষয়টিকে আরও উন্নত করার চেষ্টা করছেন তাঁরা, এর ফলে চাকরি প্রার্থীর আগের কাজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে সহজেই জানতে পারবেন চাকরি দাতা। কোনও চাকরি প্রার্থী যদি চাকরির আবেদন করেও ইন্টারভিউ দিতে না যান তাহলে তাঁর নামের পাশে লাল পতাকা চিহ্নের কথা ভাবছে আসানজব, একইভাবে কোনও চাকরি দাতা যদি প্রার্থীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন তাহলে তাঁদের নামের পাশেও বসবে লাল পতাকা।

এই মাসের শেষেই দ্বিতীয় রাউন্ডের বিনিয়োগ সংগ্রহ করবে আসানজব.কম, চলছে কথাবার্তা, জানালেন দীনেশ।