পাড়াগাঁর মেয়েদের স্বনির্ভর করেছে অমৃতবেড়িয়ার একটি ক্লাব

পাড়াগাঁর মেয়েদের স্বনির্ভর করেছে অমৃতবেড়িয়ার একটি ক্লাব

Saturday March 12, 2016,

2 min Read

ক্লাব তো অনেক হয়। আমার আপনার চারপাশে প্রতিটি পাড়ায় একটি করে। কোথাও একাধিক। আমরা সবাই, নতুন দল, যুবক সঙ্ঘের অভাব নেই। চাঁদার জুলুমবাজি, শনিবারের আসর, হই হই রই রই ক্রিকেট ম্যাচ, বক্তিমার দারুণ রক। দুদিন অন্তর পিকনিক, লায় লাপ্পা ডিজে সন্ধ্যার ক্লাবের তালিকা লম্বা। কিন্তু আজ আপনাদের অন্যরকম একটি ক্লাবের গল্প শোনাব। সদিচ্ছার একটি উদাহরণ।

image


পূর্ব মেদিনীপুরের বলতে গেলে প্রত্যন্ত গ্রাম অমৃতবেড়িয়া। ঘরের ঘেরাটোপে অভ্যস্ত এখানকার মেয়ের দল জানতে পারেনি, জানার কথাও নয়, বাইরের পৃথিবীটা বদলে গিয়েছে। সুকেশ মিশ্র, গ্রামেরই এক বাসিন্দা প্রথম সেই বন্ধ দরজায় ঘা মারলেন। গ্রামের যে ক্লাবটি এতদিন খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নিয়ে মেতেছিল ২০০৬ সালে যুক্ত হয় NABARD-এর সঙ্গে।অমৃতবেড়িয়া পল্লী উন্নয়ন সংঘ গড়ে ওঠে। প্রাথমিকভাবে মহিলাদের আটটি দল নিয়ে কাজ শুরু হয়। মহিলাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া, লোনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হত। ২০০৮ সালে ক্লাবঘরেই গ্রামের মহিলাদের জন্য পাট দিয়ে নানা পণ্য তৈরির প্রশিক্ষণ শুরু হয়। শুধু প্রশিক্ষণ নয়, তার পাশাপাশি হাতের কাজের প্রদর্শনী, মেলার আয়োজন, রাজ্যের বাইরে নানা মেলায় অংশগ্রহণ চলতে থাকে। সেখান থেকে আয়ের পথ খুঁজে পান মহিলারা। ধীরে ধীরে স্বনির্ভর হতে শুরু করেন তাঁরা। গ্রামের ভাগ্যের চাকাটা ঘুরে যায়।

বর্তমানে মহিষাদল ও নন্দকুমার দুটি ব্লকের ৮টি গ্রামপঞ্চায়েত, ৩২টি গ্রামের সাড়ে তিন হাজার মহিলা যুক্ত হয়েছেন অমৃতবেড়িয়া পল্লী উন্নয়ন সংঘের সঙ্গে। হাতের কাজ শিখে বাড়ির মেয়েরাও এখন রোজগেরে। গৃহবধূর চেনা পরিচিতির বাইরে এসে আত্মবিশ্বাসী গাঁয়ের বধূ।

টুকরো গেঁথে এমন আস্ত একটা আয়োজন। তবে সমস্যাও আছে। আর্থিক সমস্যা। ‘এতবড় একটা সংস্থা চালানো চাট্টিখানি কথা নয়। রোজগার বলতে মেলার বিক্রি থেকে যা আয় সেখান থেকে একটা সামান্য অংশ। সরকারের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছি। আসলে অজ পাড়া গাঁ বলে সেভাবে প্রচার পায় না। দেখি কতদিন চালিয়ে নিতে পারি’, বলছিলেন সংস্থার পথদ্রষ্টা সুকেশ মিশ্র। আর যারা কাজ করে রোজগার করছেন সেই সুমিতা, রমা, সীমারা বলছেন, ‘নতুন জীবন পেলাম। স্বামীর সঙ্গে সংসারের খরচ ভাগ করে নিতে পারছি। নিজেদের না মেটা শখ খানিকটাতো মিটছে। ছেলেমেয়েকে পড়াশোনা করাতে পারছি। বুঝতে পারছি সংসারে আমাদের গুরুত্ব বেড়েছে’।

ঠিক এটাই চেয়েছিলেন সুকেশবাবু। মহিলাদের আর্থিক মুক্তি। সঙ্গে আত্মিক মুক্তি। ঘরের গণ্ডি পেরিয়ে বাইরে এসে নতুনভাবে জগৎটাকে দেখছেন অমৃতবেড়িয়ার মহিলারা।