টাকা-কার্ড ভুলে যান, সঙ্গে থাক স্মার্ট ওয়ালেট

টাকা-কার্ড ভুলে যান, সঙ্গে থাক স্মার্ট ওয়ালেট

Wednesday December 09, 2015,

4 min Read

বাজারে গিয়ে হঠাৎ দেখলেন ওয়ালেটটাই সঙ্গে করে আনতে ভুলে গিয়েছেন। চেনা কারও কাছ থেকে ধার করতে পারলে সে যাত্রায় ঝামেলা চুকল, নয়তো বাড়ি ফেরত। আরও একটা জিনিস আপনাকে এই সমস্যা থেকে সুরাহা দিতে পারে। সেটা হল মোবাইল। সঙ্গে মোবাইল থাকালে ওয়ালেটের কথা ভাবতে হবে না আপনাকে। প্রযুক্তির যুগে এটাই এখন স্মার্ট পেমেন্টের সহজ উপায়।

image


সারা ভারতে দোকান-বাজারে নগদ টাকায় লেনদেন দেন ছাড়া ভাবতে পারি না। অথচ উন্নত বিশ্বে কার্ড এবং ক্যাশ ভুলে মোবাইল পেমেন্টই অপরিহার্য হয়ে উঠছে। ভারতও পিছিয়ে থাকবে কেন? দ্য আলট্রা ক্যাশ অ্যাপ। বাড়িতে ওয়ালেট ভুলে ফেলে এলেও বাজার করা আটকাবে না এই অ্যাপের দৌলতে। বেঙ্গালুরুতে ২০১৪র সেপ্টেম্বরে এই অ্যাপ নিয়ে আসেন দুই উদ্যোক্তা উমেশ সিঙ্ঘল এবং বিশাল লাল। আলট্রা ক্যাশ অ্যাপের মাধ্যমে যে কেউ কোনও দোকানে নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকউন্ট বা ডেবিট অথবা ক্রেডিট কার্ড থেকে সরাসরি বিল মেটাতে পারেন। তার জন্য কোনও ডিজিটাল ওয়ালেটে টাকা ট্রান্সফারের দরকার পড়ে না। আলট্রাক্যাশে ইউবোনা টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়।বর্তমানে ২৫ জনের টিম এই অ্যাপ সামলায়। বিশাল বলেন, ‘আলট্রাক্যাশ হল পেটেন্ট-পেন্ডিং টেকনোলজি। আলট্রা হাই ফ্রিকোয়েন্সি সাউন্ড ওয়েভ ব্যবহার করে নির্বিঘ্নে পেমেন্ট ডাটা এক ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইসে পাঠানো হয় এই অ্যাপের মাধ্যমে। এর অভাবনীয় প্রযুক্তির সাহায্যে শুধু ট্যাপ অ্যান্ড পে অপশন সব ডিভাইসেই সমান স্বচ্ছন্দ। তার জন্য কোনও বিশেষ হার্ডওয়ার বা এনএফসি চিপের প্রয়োজন পড়ে না’।

অ্যাপ লঞ্চের পর চার মাসেরও কম সময়ে আলট্রা ক্যাশের ৩৫ হাজার অ্যাপ ডাউনলোড হয়েছে। ৫০ হাজারের বেশি ট্রানজেকশনে ২ কোটি ৫০লক্ষ টাকা লেনদেন হয়েছে। বিশাল জানান, ট্রানজেকশন ভ্যালুর দিকে তাকাতে গেলে দেখা যাচ্ছে মাসে মাসে ১৫০ থেকে ২০০ শতাংশ হারে অ্যাপের ব্যবহার বাড়ছে। রেস্তোরাঁ থেকে ক্যাফে, মুদির দোকান থেকে স্টেশনারি, ইলেকট্রনিকস এবং অনলাইন শপে সহ পাঁচশোর বেশি ব্যবসায়িক সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ আলট্রাক্যাশ। ‘আলট্রাক্যাশের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, পেমেন্টের সময় নেট থাকার দরকারই নেই। তাছাড়া গ্রাহকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বা কার্ড যেকোনও জায়গা থেকে পেমেন্ট হতে পারে’, বলেন বিশাল। দুই উদ্যোক্তার দাবি, আলট্রাক্যাশ টেনকোলজি দ্রুত গতি সম্পন্ন, সহজে কোড ট্রান্সফার হয়, নিরাপদ এবং টাইম সেনসেটিভ। সেকেন্ডের ভগ্নাংশে ২৫৬ বাইট পেমেন্ট ডাটা ট্রান্সফার করা যায়। ‘বর্তমানে খুচরো বাজার ডিজিটাল পেমেন্টের জন্য পয়েন্ট অব সেল বা পিওএসের ওপর নির্ভর করে। এর গতি বেশ মন্থর। বিশাল বলেন, পিওএস সিস্টেমে ব্যঙ্কের ওপর নির্ভর করতে হয়। ফলে গতি কমে যায়। ভারতে ২০ মিলিয়ন ব্যবসায়ী এবং অসংখ্য হোম বিজনেস। অথচ মাত্র দশ লক্ষ রেজিস্টার্ড পিওএস মেশিন। আটল্ট্রাক্যাশের মাধ্যমে যে কোনও ব্যবসায়ী স্মার্টফোনের মাধ্যমে ডিজিটাল পেমেন্ট জোয়ারে সামিল হতে পারেন’,বলেন বিশাল।

আইআইটি-বিএইচইউ-এর দুই প্রাক্তনী বিশাল এবং উমেশ প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট, স্ট্রেটেজিক প্ল্যানিং, ইন্টিলেকচুয়াল প্রোপার্টি ক্রিয়েশন এবং কনজিউমার সার্ভিসে যথেষ্ট দক্ষ। মোবাইল পেমেন্ট, সিস্টেম আর্কিটেকচার এবং সিকিউরিটি সহ বেশ কিছু পেটেন্ট রয়েছে তাঁদের কাছে। আলট্রাক্যাশ লঞ্চ করার আগে দুজনে অনন্ত দেড় বছর খরচ করেছেন দেশের পেমন্ট অপশন এবং তার নানা নিয়মকানুন বুঝে নিতে। বিশাল জানান, ‘প্রথম দিকে পেমেন্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে নানা জটিলতা মেটানো, প্রযুক্তির ব্যবহার করে নিরাপদ, দ্রুত, বিশ্বস্ত লেনদেনের উপায় খুঁজতেই সময় কেটে যেত’।

গ্রাহকের লেনদেন নিরাপদ করতে আলট্রাক্যাশ মূলত পেমন্ট গ্রেড এনক্রিপশন অ্যালগোরিদম ব্যবহার করে। বিশাল জানান, ন্যাশনাল পেমেন্ট কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়ার আইএমপিএস (ইমিডিয়েট পেমেন্ট সার্ভিস) এ ব্যাঙ্কিং এর মাধ্যমে আলট্রাক্যাশ নিরাপদ লেনদেন নিশ্চিত করে। আরবিআই-এর মোবাইল পেমেন্ট গাইডলাইন মেনে পিসিআই-ডিএসএস অনুমোদিত নিয়মে লেনদেন হয়। ডেবিট বা ক্রেডিটকার্ডের ক্ষেত্রে যতবার সোয়েপ হবে তার জন্য ব্যবসায়ীকে বাড়তি ট্যাক্স গুনতে হয়। আলট্রাক্যাশ সেই খরচ অনেকটাই বাঁচিয়ে দেয়।

আলট্রাক্যাশের পার্টনার হতে গেলে নিয়ম মেনে কেওয়াইসি ফর্ম পূরণ করতে হবে। এরপর আলট্রাক্যাশ অ্যাপ ডাউনলোড করে গ্রাহকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে অ্যাটাচ করে দিতে হয়। আরও একটি সুবিধা হল, পিক আওয়ারে বিলিং পয়েন্ট বাড়াতে বাড়তি হার্ডওয়ার ব্যবহার না করেই যত সংখ্যক খুশি ফোনের সঙ্গে অ্যাপ জুড়ে নেওয়া যায়। আলট্রাক্যাশ ইতিমধ্যে আইসিআইসিআই, এইচডিএফসি এবং ইয়েস ব্যাঙ্কের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে। গ্রাহকের সুবিধার কথা ভেবে পদ্ধতি আরও উন্নত করার চেষ্টা চলছে বলে জানান বিশাল।

প্রতিনিয়ত বেড়ে চলা স্মার্টফোনের ব্যবহার, সারা দেশ জুড়ে থ্রি জি, ফোর জি পরিষেবার ফলে ভারতে ডিজিটাল পেমেন্ট ইন্ডাস্ট্রির নতুন অধ্যায় রচিত হচ্ছে। জিনোভের এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ২০১৯ সাল নাগাদ বর্তমানের মোবাইল বাণিজ্য (কমার্স)বাজার ৫৫ শতাংশ বেড়ে যাবে। ডলারের অংকে যা ২ বিলিয়ন থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ১৯ বিলিয়নে। সমীক্ষায় আরও দেখা গিয়েছে, ৯১ শতাংশ গ্রাহক ফোনে পণ্য এবং পরিষেবা খোঁজেন। মোটামুটি হিসেবে ভারতের ৫০ শতাংশের কাছাকাছি মোবাইল ব্যবহারকারীর বয়স ১৮ থেকে ৩০। ঠিক এই জিনিসটাই ডিজিটাল পেমেন্টকে আরও ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তুলছে। এদেশে ৪০ শতাংশের বেশি ই-কমার্স হচ্ছে মোবাইলের মাধ্যমে, আর ৫২ শতাংশের বেশি লেনদেনই ডিজিটাল পেমেন্ট।

ট্রান্সসার্ভের সিইও অণীশ উইলিয়াম বলেন, ‘দেশ নগদহীন অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মাত্র চার বছরে আইএমপিএস লেনদেন মানি অর্ডার, ডেবিট ও ক্রেডিটকার্ডে বদলে গিয়েছে’। বর্তমানে পেটিএম ফ্রিচার্জ এবং মোবিকুইক মোবাইল পেমেন্ট ইন্ডাস্ট্রির অগ্রদূত। নস্টেমেজো, সিট্রাসপে, ট্রান্সসার্ভের মতো আরও অনেক স্টার্টআপকে পথ দেখাচ্ছে তারা।

আগমী দু বছরের লক্ষ্যের কথা বলতে গিয়ে বিশাল জানান, ‘আমাদের লক্ষ্য হল নজরকাড়া মার্চেন্ট ইকোসিস্টেম তৈরি করা যাতে লক্ষ লক্ষ ব্যবসায়ী আলট্রাক্যাশ অ্যাপের মাধ্যমে ডিজিটাল পেমেন্ট পরিষেবা পাবেন। দ্বিতীয় এবং তৃতীয়স্তরের শহরগুলির ছোটছোট ব্যবসায়ীরাও যাতে এই সুবিধা পেতে পারেন তার চেষ্টা করছি আমরা। ২০১৭র মধ্যে মোট্রো শহরের ৭০ শতাংশ ব্যবসায়ী এবং দ্বিতীয় স্তরের ৪০ শতাংশ ব্যবসায়ী যাতে আলট্রাক্যাশ ডিজিটাল সিস্টেম ব্যবহার করতে পারেন সেই দিকেই নজর দিয়েছি’।

(লেখক-অপরাজিতা চৌধুরী, অনুবাদ-তিয়াসা বিশ্বাস)