‘রক্তের সম্পর্ক’ গড়ে দিলেন পোচা দম্পতি

‘রক্তের সম্পর্ক’ গড়ে দিলেন পোচা দম্পতি

Friday August 28, 2015,

4 min Read

মেডিক্যাল সায়েন্সের সঙ্গে কস্মিনকালেও যোগাযাগ ছিল না দুজনের কারও।ভারতীয় রেলের কর্মী খুশরো পোচা। স্ত্রী ফারমিন পোচা নাগপুরে জে এন টাটা পারসি গার্লস হাই স্কুলের শিক্ষকা। পোচারা ওয়েবসাইট দুটির মধ্যে প্রথমটি শুরু করেন Indianblooddonors ১৯৯৯ সালে এবং Plateletdonors দ্বিতীয়টি ২০১২ সালে।

ফারমিন এবং খুশরো পোচা

ফারমিন এবং খুশরো পোচা


জীবনে ঘটে যাওয়া বেশ কিছু ঘটনা থেকে স্বামী-স্ত্রীর মাথায় ওয়েবসাইট খুলে বিপদে রক্তের সন্ধান দেওয়ার পরিকল্পনা আসে।১৯৮৪সালে একটি দুর্ঘটনায় খুশরোর ঠাম্মা আহত হয়ে কোমায় চলে যান।নাগপুরে ইন্দিরা গান্ধি মেডিক্যাল কলেজে তাঁকে ভর্তি করা হয়।একদিন ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ মহিলা ওয়ার্ডে প্রচন্ড চেঁচামেচি শুনে ছুটে যান খুশরো। দেখেন, এক রোগীর আত্মীয়রা ডাক্তারকে মারধর করছেন। একজনকে জিজ্ঞেস করায় তিনি চিৎকার করে বলেন, ‘আমার স্ত্রীকে খুন করেছে ওরা’। এরপর ডাক্তারের কাছে আসল ঘটনা জানতে চাওয়ায় তিনি খুশরোকে বলেন, রোগীর হিমোগ্লোবিন কমে গিয়েছিল, আত্মীয়দের ২ ইউনিট রক্ত সংগ্রহের জন্য বলেছিলেন। ‘কিন্তু ওরা রক্তদাতা যোগাড় করতে পারেননি।রক্তের অভাবে হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে মারা যান রোগী।‘ওই ঘটনা আমাকে খুব নাড়া দিয়েছিল’, বললেন খুশরো। ঠিক ১৫ বছর বাদে ১৯৯৯ সাল নাগাদ আরও একটি ঘটনা ঘটল।এক রোগীর জন্য রক্ত খুঁজতে গিয়ে খুশরো জানতে পারেন ব্লডব্যাঙ্কগুলি যেসব গ্রুপের রক্ত আছে বলে দাবি করে, তা আসলে থাকে না। একজন রক্তদাতা খুঁজে পেতে সবরকম চষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে দুদিন পর ওই রোগী মারা যান।

image


‘এই ঘটনার পর আমি ভাবতে থাকি, যারা চিকিৎসার জন্য এক জায়গা থেক অন্য জায়গায় অবান্ধব, অপরিচিত পরিবেশে যান, যেখানে সাহায্যের জন্য কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না, সেখানে তাঁদের কী অবস্থা হয়? বিশেষ করে ক্যান্সারের রোগী,যাদের প্রায়ই রক্ত বদলাতে হয় তাদের কী অবস্থা?থ্যালাসামিয়ায় আক্রান্ত শিশু অথবা যাদের প্রতি মাসেই রক্ত বদলাতে হয় তাদের কী অবস্থা হয়’? নিজেকে প্রশ্ন করতেন খুশরো। স্ত্রী ফারমিনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন এবং সিদ্ধান্ত নেন,কিছু একটা করতেই হবে।সমস্যা মেটানোর একটা উপায় খুঁজছিলেন দুজনে। কিন্তু বুঝে উঠতে পারছিলেন না কোথা থেকে শুরু করবেন।ঠিক সেই সময় ডট কমরা (ওয়েবসাইট)আসতে শুরু করছিল। ‘প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ ওয়েবসাইট খুলে ফেলছিল। কানাডায় খুড়তুত বোনকে মেল করতে সবে ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু করেছিলাম আমি।সাইবার ক্যাফেতে তখন ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য ঘণ্টায় ১০০ টাকা দিতে হত’, মনে করে বলছিলেন খুশরো। এরকমই একদিন মেল দেখতে দেখতে বুদ্ধিটা মাথায় আসে খুশরোর। ইন্টারনেটের মাধ্যমে যার রক্তের প্রয়োজন এবং যিনি রক্ত দেবেন, দুজনকে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার কেমন হয়? যেই ভাবা সেই কাজ। পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিতে পোচা দম্পতি এবার নিজেদের সারা জীবনের সঞ্চয়ে হাত দিলেন। দিনগুলির কথা মনে করতে গিয়ে খুশরো বলেন, ‘ওয়েবসাইটের মাথা মুণ্ডু কিছুই জানতাম না।কীভাবে এগোতে হবে তাও না। 

image


কিছু ম্যাগাজিন পড়ে যৎ সামান্য জ্ঞান হয়েছিল। সেটাকে পুঁজি করে আমার এক বন্ধু আইটি সংস্থায় কাজ করত, তার সঙ্গে যোগাযোগ করি।যেহেতু ওয়েবসাইটটি একটা মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে করা,তাই বন্ধুটি ছাড় দিয়ে ১৫০০০ কাজ করতে রাজি হয়। ক্রেডিট কার্ডে ডোমেন বুক করা হল।সেই ক্রেডিটকার্ড আমার ছিল না। অগত্যা কানাডায় বোনকে বললাম ডোমেন বুক করে দিতে। অবশেষ ১৭ অক্টোবর, ১৯৯৯,ডোমেন নথিবদ্ধ হল।এবার দরকার হোস্ট, যেখানে ওয়েবসাইট টা দেখা যাবে। আমাকে বলা হল www.interland.com হোস্ট করতে’। তাদের ক্ষমতার মধ্যে একটাই প্যাকেজ বা প্ল্যান ছিল যাতে ৩ মাসের জন্য ২৫০ এমবি-এর এসকিউএল সার্ভার পাওয়া যাবে। আরও বাকি আছে। এবার একটা কম্পিউটার প্রয়োজন, যেখান থেকে সাইটে নজর রাখা এবং মেলের জবাব দেওয়া হবে। একটা সেকেন্ড হ্যান্ড কম্পউটার খুঁজছিলেন। ১২,৫০০ টাকায় পেয়েও গেলেন। এবং ২০০০ এর জানুয়ারিতে অবশেষে ওয়েবসাইট তৈরি হল। এক বন্ধু সাহায্য করলেন লঞ্চের জন্য ওয়েবসাইটের লোগো, পোস্টার এবং বিজ্ঞাপন বানিয়ে দিতে। এখন আর কারও মুখাপেক্ষী হতে হয় না পোচা দম্পতিকে। ভারতের তিনটি সংস্থা তাদের ওয়েবসাইটের অনেকটাই খরচ বহন করে। হোস্ট স্পনসর করে Net4India, Awaaz.de নিখরচায় ০৭৯৬১৯০৭৭৬৬ এর একটি আইভিআরএস হেল্পলাইন দিয়েছে এবং Innoz.in দিয়েছে এসএমএস হেল্পলাইন।

যাদের রক্তের প্রয়োজন পাঁচটি উপায়ে ডোনারদের খুঁজে নিতে পারেন

  1. গুগুল প্লে থেকে এনরয়েড অ্যাপ ডাউনলোড করে নিন Indian Blood Donors. এখানে রোগী অথবা তাদের আত্মীয়রা নিজের এলাকা বা শহরে রক্তদাতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
  2. ০৭৯৬১৯০৭৭৬৬ এইনম্বরে আইভিআরএস হেল্পলাইনে যোগাযোগ করুন। হিন্দি বা ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন।এটা সেই সব সাধারণ মানুষের জন্য যারা ইন্টারনেট ব্যাবহার করতে পারবেন না বা এসএমএসও করতে পারবেন না।
  3. ৫৫৪৪৪ এই নম্বরে SMS BLOOD টাইপ করুন( এয়ারসেল, এয়ারটেল, ভোডাফোন, টাটা ডোকোমো,আইডিয়ার গ্রাহকরা এসএমএস করুন ৫৫৫৭৭ নম্বরে SMS BLOOD টাইপ করুন)।
  4. নিজের শহরে ডোনার খুঁজতে টাইপ করুন SMS DONOR (এসটিডি কোড)(রক্তের গ্রুপ),পাঠিয়ে দিন ৯৬৬৫৫০০০০০ নম্বরে
  5. নিজের এলাকায় ডোনার খুঁজতে টাইপ করুন SMS DONOR PIN (৬ সংখ্যার পোস্টাল পিন কোড)(রক্তের গ্রুপ), পাঠিয়ে দিন ৯৬৬৫৫০০০০০ নম্বরে

ওয়েবসাইটিট সবাইকে এতটাই উদ্বুদ্ধ করছে যে, সারা দেশে হাজারো স্বেচ্ছাসেবী রয়েছেন, যারা সচেতনতা তৈরি করতে ওয়েবসাইটের পোস্টার ডাউনলোড করে হাসপাতালে হাসপাতালে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। পোচা দম্পতি ওয়েবসাইট থেকে এক পয়সাও আর্থিক সুবিধা পান না।তবে এই মহতী উদ্যোগে অংশ নিতে পেরে তাঁরা যে মানসিক শান্তি পেয়েছেন সেটা অমূল্য। পোচারা এবার আরও একধাপ এগোতে চান। তাঁদের ইচ্ছে পাঁচ বছর পর মোবাইল ফোনের জন্য একটা অ্যাপ নিয়ে আসবেন যেটি রক্তদাতা বন্ধুদের মধ্যে যোগাযোগ তৈরি করে দেবে।