জেনে নিন বাংলার উদ্যোগ মানচিত্র

জেনে নিন বাংলার উদ্যোগ মানচিত্র

Sunday May 08, 2016,

9 min Read

হাতের কাজে হাতযশ। বাংলার নানা প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা হস্তশিল্পীদের ক্ষেত্রে এই কথাই প্রযোজ্য। পোশাক, কৃষিকাজ বা মিষ্টান্ন। সবেতেই নিজস্ব ভাবনার ছাপ রেখেছেন প্রান্তিক এলাকার প্রতিনিধিরা। তাদের উদ্যোগ বাংলার আলাদা পরিচিতি তৈরি করেছে। বাপ-ঠাকুরদার পেশা আঁকড়ে নিজেদের মতো করে এগোচ্ছেন এই আন্ত্রেপ্রেনিওররা। রাজ্যের জেলাওয়াড়ি সেই উদ্যোগ মানচিত্র থেকে বাছাই করা ৭১টি পদ। এখানে দেওয়া হল সংক্ষিপ্ত পরিচিতি। অনেকগুলি নিয়ে বিশদে আলোচনাও হয়েছে, হচ্ছে, হবে।
image


১. কোচবিহারের শীতলপাটি :‌ উত্তরবঙ্গের এই জেলার সুনাম শীতলপাটির জন্য। কোচবিহারের এক নম্বর ব্লকের ঘুঘুমারির ঢলুয়াবাড়ি এলাকায় পাটিশিল্পীদের বাস। প্রায় ৩০ হাজার মানুষ এই পেশার সঙ্গে যুক্ত। পাটি বুনে জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছেন কয়েকজন। কয়েক বছর আগে নিজেদের উদ্যোগে সমবায় সমিতি তৈরি হওয়ার পর শিল্পীরা কিছুটা সংগঠিত হয়েছেন। কয়েকজন ব্যক্তিগত উদ্যোগে ইউরোপের দেশগুলিতে পাটির প্রসারে চেষ্টা চালাচ্ছেন।

২. সোনালী সুতোয় সোনারহাসি:‌ কোচবিহার এক ও দুই নম্বর ব্লকে পাট থেকে নানারকম সামগ্রী তৈরি করে পয়সার মুখ দেখছেন শতাধিক শিল্পী। অধিকাংশের এটি পৈত্রিক পেশা।

৩. মিষ্টিরনাম প্রাণহরা:‌ কোচবিহারের মাথাভাঙার প্রেমের ডাঙা এলাকা প্রাণহরা মিষ্টির জন্য খ্যাতি। এলাকার প্রায় ৫০টি পরিবার এর সঙ্গে যুক্ত।

৪. চলো ঘুরি জলপাইগুড়ি:‌ এই জেলায় কর্মসংস্থানের বড় জায়গা পর্যটন। গরুমারা পর্যটনকেন্দ্রকে ঘিরে মানুষেরে রুটি-রুজি আবর্তিত। এই জেলার কালোনুনিয়া চাল এবং আনারস বিখ্যাত। চাল দেখতে কালো হলেও, ভাত হয় ধবধবে এবং সুস্বাদু। যে কোনও সুগন্ধী চালকে টেক্কা দেয় কালোনুনিয়া। দামি এই চাল চাষ করে জলপাইগুড়ি জেলার প্রায় হাজার খানেক কৃষক এখন স্বনির্ভর।

৫. কেন নয় আলিপুরদুয়ার:‌ ডুয়ার্সকে ঘিরে এই জেলার যাবতীয় কর্মকাণ্ড। জলদাপাড়া অভয়ারণ্য, বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের অধীন রাজাভাতখাওয়া, জয়ন্তী, হাতিপোতায় প্রায় বছরভর পর্যটকদের আনাগোনা। কালচিনি, মাদারিহাটে বাঁশ থেকে নানারকম ঘর সাজানোর সামগ্রী তৈরি করে কয়েকশো আদিবাসী পরিবার।

৬. দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দার্জিলিং:‌ রাজ্যের সেরা চায়ের ঠিকানা। অসংখ্য বাগিচা। কমলালেবুর বাগানও কম নয়। নকশালবাড়ি এলাকায় অর্কিড ও পাতাবাহার চাষের প্রবণতা বাড়ছে। যা মূলত উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলি এবং দক্ষিণবঙ্গের জেলায় রফতানি হয়। এই ব্লকের প্রায় ৫০০ মানুষ এই নতুন কাজে যুক্ত।

৭. রায়গঞ্জী তুলাইপাঞ্জি:‌ তুলাইপাঞ্জি চালের জন্য এই জেলার সুনাম দেশজুড়ে। রায়গঞ্জের মোহিনগঞ্জ এলাকায় সবথেকে ভাল মানের এই চাল তৈরি হয়। পাশাপাশি কালিয়াগঞ্জেও এই চালের চাষ হচ্ছে। যুক্ত প্রায় ৫ হাজার মানুষ।

৮. কার্পেট গ্রাম:‌ রায়গঞ্জের মালগাঁও রাজ্যের কার্পেট গ্রাম হিসাবে পরিচিত। এখানকার ৫০ জন শিল্পী কার্পট বানান।

৯. গঙ্গারামপুরের চাক্কি দই:‌ এক সময় হাঁকডাক থাকলেও, গঙ্গারামপুর তাঁতের সুদিন আর নেই। তবুও ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছেন প্রায় হাজার দুয়েক পরিবার। গঙ্গারামপুরের দইয়ের বেশ নাম। চাক্কি দই নামে এর পরিচয়। এখানকার দই এতটাই জমাট যে হাঁড়ি উল্টে দিলে একটুও পড়বে না।

১০. মালদহে আমই সত্য:‌ জেলার ভাল-মন্দ আমের ফলনের ওপর নির্ভরশীল। ফজলি আমের সবচেয়ে বেশি চল থাকলেও প্রায় ১৫০ প্রজাতির আম রয়েছে মালদহ জেলায়। আম চাষে সরাসরি যুক্ত প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ। পাকা আম বিক্রি আছেই, ‌পাশাপাশি আমের আঁচার, আমসত্ত্বের মতো সামগ্রী তৈরি করে উপাজর্নের পথ খুঁজেছেন তারা।

১১. কালিয়াচকে রেশম লক্ষ্মী:‌ রাজ্যের রেশম উৎপাদনে সবার আগে মালদহের কালিয়াচক। দেশে দ্বিতীয়। রেশম গুটি থেকে থেকে সুতো বানিয়ে এই ব্লকের প্রায় পনেরা হাজার মানুষ রুট-রুজির পথ পেয়েছেন।

১২. চাঁচলের জলে মাখনা খই:‌ চাঁচলের হরিশ্চন্দ্রপুরে এই চাষের রমরমা। মাখনা একরকম খই। এটি জলে চাষ হয়। বেশ লাভজনক। বিহার, উত্তর প্রদেশ হরিশ্চন্দ্রপুরের মাখনার ওপর নির্ভরশীল।

১৩. মালদহের রাজ্যপাট রসকদম্ব ও কানসাট: মালদহ জেলার নিজস্ব ঘরানার মিষ্টি। অতিথিদের এই দুই স্বাদে চমকে দেন মালদহবাসী। কড়া পাকের রসের মিষ্টিতে পোস্তর প্রলেপে হয় রসকদম্ব। ছানার কড়া পাক মৌচাকের জালের মতো হলে তাতে ক্ষীর দিয়ে কানসাট মিষ্টি তৈরি হয়।

১৪. নবাবিয়ানার মুর্শিদাবাদ আম এখানেও লা-জবাব: মালদহের থেকে আমের অহঙ্কারে কোনও অংশে কম যায় না মুর্শিদাবাদ। একসময় নবাবদের নিজস্ব বাগানে আম থাকলেও এখন সব সর্বজনীন। প্রায় ১৪০ রকমের আম মেলে নবাবের জেলায়।

১৫. লোভনীয় লিচু: বিহারের মুজফফরপুরের সঙ্গে পাল্লা দেয় মুর্শিদাবাদের লিচু। মূলত লালবাগ, লালগোলা ও ভগবানগোলায় লিচুর রমরমা।

১৬. মির্জাপুরের সিল্ক-রুট: বড়ঞা ব্লক, রঘুনাথগঞ্জের মির্জাপুর ও গনকরে এই সিল্কের রমরমা। জেলার প্রায় ১০ হাজার শিল্পী এই পেশার সঙ্গে জড়িয়ে।

১৭. খাগড়ার অহঙ্কার কাঁসা-পিতলের সংসার: ব‌হরমপুর লাগোয়া খাগড়া এলাকায় কাঁসা-পিতলের রমরমা। তৈরি হওয়ার পাশাপাশি বাজারও এখানে। যুক্ত প্রায় পাঁচ হাজার শিল্পী।

১৮. ঠান্ডা পড়লে তিলের খাজা: শীতের গন্ধ পেলেই তিলের সঙ্গে গুড়ের পাকে এই বিশেষ ধরনের খাজা তৈরির ব্যস্ততা শুরু হয়। মুর্শিদাবাদের তিলের খাজা রাজ্য ছাড়িয়ে পৌঁছে যায় হায়দরাবাদ, ছত্তিসগঢ় ও বিহারে।

১৯. ছানাবড়ার বহরমপুর, খ্যাতি রটেছে বহুদূর: বহরমপুর শহর থেকে এই মিষ্টির উঠে আসা। ভিনদেশিরা বহরমপুরে এলে ছানাবড়ার স্বাদ থেকে বঞ্চিত হতে চান না। ফলে ছানাবড়া বহরমপুরের একটি ব্র্যান্ড। যাকে ঘিরে এই শহরের মানুষের জীবন জীবিকা আবর্তিত।

২০. ছুঁচ সুতোর বোলপুর: বিশ্বকবির জেলায় হস্তশিল্পের যত সুনাম কাঁথাস্টিচকে কেন্দ্র করে। নানুর ও বোলপুর ব্লকে নকশা কাঁথায় নিজেদের স্বপ্ন বুনে চলেছেন কয়েক হাজার মহিলা। এদের কেউ কেউ বিদেশেও পাড়ি দিয়েছেন।

২১. বীরভূমের মোরব্বা: জেলা সদর সিউড়িতে এর বাড়বাড়ন্ত। আম, বেল, তরমুজ, লিচু, করমচা থেকে এমন কোনও ফল নেই যা নিয়ে মোরব্বা হয় না। মিষ্টির চাকে ফলের স্বাদ বদলে দেয় সিউড়ির নিজস্ব ফর্মুলার এই মোরব্বা।

২২. বাঁকুড়া মানেই মাটির ঘোড়া: তালডাংরার পাঁচমুড়ার পরিচিতি টেরাকোটার জন্য। প্রায় ৫০০ শিল্পী তাদের হাতের কাজে মোহিত করে চলেছেন।

২৩. আর বিখ্যাত বালুচরি: অনেক উত্থান-পতন হলেও বিষ্ণুপুরের নিজস্ব ঘরানার এই শাড়ি বাংলার অন্যতম অহঙ্কার। এই মুহূর্তে বিষ্ণুপুরে ১৮০টি তাঁত চালু আছে। দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করেই বেশি রমরমা।

২৪. এখনও লণ্ঠন: চাহিদা কমলেও রাজ্যে লণ্ঠনের সবথেকে বড় জোগানদার বিষ্ণুপুর। প্রায় হাজার খানেক শিল্পী এখনও পূর্ব পুরুষের পেশা ‌টিকিয়ে রেখেছেন।

২৫. ডোকরার নামডাক: বাঁকুড়ার বিকনা গ্রামের হাজার খানেক শিল্পী ডোকরার সঙ্গে যুক্ত। রাজ্যের বিভিন্ন মেলা-প্রদর্শনীতে যোগ দিয়ে সুদিন ফিরে পেয়েছেন শিল্পীরা। ডাক পাচ্ছেন ভিনরাজ্যে।

২৬. পাগড়ির বিদেশপাড়ি: সোনামুখীতে যে পাগড়ি হয় তা মূলত রফতানি হয় সৌদি আরব ও পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলিতে। নয় নয় করে প্রায় এক হাজার পাগড়িশিল্পী রয়েছেন সোনামুখীতে।

২৭. বাঁকুড়ার মিষ্টিমুখ: বেলিয়াতোড়ের মেচা সন্দেশ এবং ছাতনার প্যাড়া স্বাদে গন্ধে অতুলনীয়।

২৮. পুরুলিয়ার লাক্ষ্মা দেশের লক্ষ্মী: ঝালদা ও বলরামপুরের বাসিন্দাদের অন্যতম পেশা লাক্ষ্মা চাষ। লাক্ষ্মার সৌজন্যে রুটি-রুজির পথ পেয়েছেন দুই ব্লকের প্রায় দশ হাজার মানুষ। বলা হয় পৃথিবীর লাক্ষ্মা মৌলিক চাহিদা মেটায় বাংলার পুরুলিয়াই। 

২৯. চিরুনি: মোষের সিং থেকে চিরুনি তৈরি করেন ঝালদার কয়েকশো শিল্পী। এই চিরুনি খুবই সৌখিন, দামও বেশি।

৩০. ছৌ শিল্পের বাই প্রোডাক্ট: বাঘমুন্ডির চড়িদার মুখোশের দুনিয়াজোড়া নাম। ছৌ নাচ এবং মুখোশ তৈরির ওপর প্রায় দশ হাজার শিল্পী নির্ভরশীল।

৩১. তসরের সেরা ঠিকানা: রঘুনাথপুরেরর কয়েকটি জায়গায় তসর শিল্পীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন। তেমন চাহিদা না থাকায় অনেকেই এই পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন।

৩২. মন্দিরা আর ভাবরা: বড়বাজারে মন্দিরা এবং পুরুলিয়া শহরের ভাবরা নিজস্ব ঘরানার মিষ্টি।

৩৩. বর্ধমানের তাঁত: সমুদ্রগড় ও পূর্বস্থলীর বহু শিল্পী তাঁতের ওপর নির্ভরশীল। প্রায় ২০ হাজার শিল্পী তাঁতের শাড়ি, ধুতি, গামছা তৈরিতে যুক্ত রয়েছেন।

৩৪. জিভে জল আনা মিঠাই: মিহিদানা-সিতাভোগ এবং ল্যাচাং এই জেলার অহঙ্কার।

৩৫. ফুলিয়া-শান্তিপুরের তাঁত: ফুলিয়া-শান্তিপুরের তাঁতের শাড়ি রাজ্যের হস্তশিল্পীদের মান চিনিয়েছে। পাওয়ার ও হ্যান্ডলুম মিলিয়ে দুই এলাকায় প্রায় লক্ষাধিক তাঁত রয়েছে। যুক্ত প্রায় ৩ লক্ষ শিল্পী।

৩৬. কৃষ্ণনগরের মাটির পুতুল: কৃষ্ণনগর শহর লাগোয়া ঘূর্ণির মাটির পুতুলের খ্যাতি সর্বত্র। পাশাপাশি ঘূর্ণির প্রতিমাশিল্পীদেরও বেশ কদর রয়েছে।

৩৭. বৈষ্ণব মৃদঙ্গ: মন্দির নগরী নবদ্বীপে ভক্তরা মৃদঙ্গের তালে তালে নগর পরিক্রমা করেন। আর এই বাদ্যতযন্ত্র তৈরি করেন নবদ্বীপের কয়েকশো শিল্পী। তাদের হাতের কাজ পৌঁছে গিয়েছে বিদেশেও।

৩৮. ফুলের চাষে এগিয়ে রানাঘাট: রানাঘাট, চাকদহ, করিপমুর, চাপড়া, ধানতলায় এখন ধান নয়, ফুলচাষই প্রধান পেশা। রাজ্যের ফুল উত্পাদনে প্রথম নদিয়া। গাঁদা, রজনীগন্ধার পাশপাশি জারবেরা, গ্ল্যাডিওলাসের মতো ফুল এই এলাকা থেকে ‌যায় কলকাতায়। সেখান থেকে ভিনরাজ্যে এমনকী বিদেশে। ফুলচাষে যুক্ত কয়েক লক্ষ চাষি।

৩৯. নিখুঁতি- সরপুরিয়া- সরভাজা: কৃষ্ণনগরের সরভাজা-সরপুরিয়ার যেমন নাম, তেমন শান্তিপুরের নিখুঁতিরও ‌নিখুঁত স্বাদ।

৪০. ধনেখালির তাঁতের সুনাম: একসময় খুব নাম-ডাক ছিল ধনেয়াখালির তাঁতশিল্পীদের। কিন্তু দিনে দিনে ম্লান হয়ে এসেছে তাঁদের পরিস্থিতি। হাতে-গোনা কয়েকটি পরিবার এখনও তাঁত বোনেন।

৪১. নৌকা হত বলাগড়ে: একটা সময় ছিল বলাগড়ের নৌকা মানে শক্তপোক্ত দুর্দান্ত জলযান। এখন সেই মহিমাও ম্লান হয়ে গেছে তবু এখনও ৫০টি পরিবার নৌকা বানান। গাছ কাটার নানারকম নিষেধাজ্ঞা সঙ্গে ফাইবারের বোটের রমরমায় তাদের আরও ক্ষয়িষ্ণু করেছে।

৪২. আর চন্দননগর বলতেই মনে পড়ে যায় আলোর রোশনাই: চন্দননগরের আলোশিল্পীদের পরিচয় নতুন করে করানোর প্রয়োজন নেই। অধর দাস যে পরিচিতি তৈরি করেছিলেন এই প্রজন্মরা বাবু পালরা তাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। ছোট-বড় কারখানা মিলিয়ে চন্দননগরের আলো শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে প্রায় দশ হাজার শিল্পী।

৪৩. তারকেশ্বরের সাদা বোঁদের খুব খ্যাতি: নিজস্বতায় অনন্য। চন্দননগরের সূর্য মোদকের জলভরা সন্দেশ মিষ্টি জগতের বিস্ময়। জনাইয়ের প্রাণহরাও কম যায় না। তবে তারকেশ্বরের সাদা বোঁদে সব থেকে জনপ্রিয়।

৪৪. পশ্চিম মেদিনীপুরে পট শিল্পের রমরমা: একসময় ভিক্ষা করতে গিয়ে গান গেয়ে পটে ছবি আঁকতেন শিল্পীরা। এখন আর করুণার পাত্র নন পিংলার পটশিল্পীরা। এলাকার প্রায় দুশোটি পরিবার পটশিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে।

৪৫. বেলপাহাড়ির পাথর শিল্প: পাথর কেটে নানাধরনের সামগ্রী বানিয়ে নিজেদের জাত চিনিয়েছেন বেলপাহাড়ির শিল্পীরা। পাথরের কাজ করে দিন গুজরান করেন অন্তত দু হাজার শিল্পী।

৪৬. বাবুই ঘাসের কারুকাজ: বাবুই ঘাস দিয়ে নয়াগ্রামের বেশ কিছু শিল্পী হস্তশিল্পের নমুনা রেখেছেন। মূলত ঘর সাজানোর জিনিস টুপি, শোপিস তৈরি হয়।

৪৭. রামজীবনপুরের কাঁসার বাসন: রামজীবনপুরে কাঁসার বাসন তৈরি হয়। জড়িয়ে ২০০টি পরিবার।

৪৮. দাসপুরের শিং শিল্প: শিং দিয়ে নানারকম সৌখিন সামগ্রী তেরা করে নিজস্ব ঘরানা তৈরি করেছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরের শিল্পীরা।

৪৯. সবংয়ের মাদুর: সবং এলাকার অন্যতম বড় কুটিরশিল্প মাদুর। যুক্ত ৩০ হাজার মানুষ।

৫০. বাবরসা পেড়া: ক্ষীরপাইয়ের বাবরসা ও গড়বেতার পেড়া সন্দেশ জেলার মিষ্টির স্বাদ চিনিয়েছে।

৫২. পূর্ব মেদিনীপুরের কাজুবাদাম: উপকূলবর্তী জেলা হওয়ায় কাজু চাষের রমরমা। রামনগর ও কাঁথি মিলিয়ে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত প্রায় ২০ হাজার মানুষ।

৫৩. পানের বরোজে ঢাকা গ্রাম: জেলার প্রায় সর্বত্র কমবেশি পান চাষ হয়। পানের ওপর নির্ভরশীল লক্ষাধিক মানুষ।

৫৪. ঝিনুক শঙ্খের সৌখিন সংসার: দিঘা ও মোহনা এলাকার বাসিন্দারা এই হস্তশিল্পের সঙ্গে যুক্ত।

৫৫. মাদুরের দুনিয়া: রামনগর, এগরা, কাঁথি এলাকায় মাদুর বানিয়ে দিন গুজরান হয় প্রায় ১৫ হাজার শিল্পীর।

৫৬. মণ্ডপের সাজ: রাজ্যে মণ্ডপ শিল্পে সুনাম কাঁথির শিল্পীদের। এখানকার হাতের কাজ চমকে দেওয়ার মতো।

৫৭. পটাশপুরের গামছা: পটাশপুরে হাজার দেড়েক শিল্পীর মূল পেশা হল গামছা বানানো।

৫৮. পুতুল নাচের ইতিকথা: পুতুল নাচিয়ে রোজগারের পথ পেয়েছেন নরঘাটের কয়েকশো মানুষ। এখানে পুতুল নাচে‌র প্রশিক্ষণও হয়।

৫৯. খেজুড়ির ভুটভুটি: খেজুড়ির কালীনগরে ভুটভুটি তৈরি হয়। যা দিয়ে মাছ ধরা এবং যাত্রী পরিবহনে ব্যবহার হয়। জড়িয়ে প্রায় পাঁচশো শিল্পী।

৬০. গাঁদা, জবা, রজনীগন্ধার পাঁশকুড়া লাইন: পাঁশকুড়া পূর্বে ফুল চাষের রমরমা। হাওড়া বাজারে জবা, রজনীগন্ধা, গাঁদার মতো ফুলের সবথেকে বড় জোগানদার।

৬১. হাওড়ার জরি : উলুবেড়িয়ার জরির কাজ কুটির শিল্পের পর্যায়ে। এর সঙ্গে যুক্ত লক্ষাধিক শিল্পী।

৬২. উলুবেড়ের কক: উলুবেড়িয়ার কয়েকটি জায়গায় ব্যাডমিন্টনের কক তৈরি হয়।

৬৩. ফুলে ফুলে বাগনান: হাওড়া জেলার ফুলে‌র গোলা বলা যায় বাগনানকে। ফুল চাষের ওপর নির্ভরশীল কয়েক হাজার ফুলচাষি।

৬৪. উত্তর ২৪ পরগনায় সব্জি ভরসা: দামি‌ ও বিদেশি সব্জি চাষে রাজ্যে সামনের সারিতে বনগাঁ ও বারাসত। এই দুই মহকুমার মসলন্দপুর, গোবরডাঙা, হাবরার বাসিন্দাদের অন্যতম প্রধান পেশা সব্জি চাষ।

৬৫. মিষ্টি সম্পর্ক: বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া বসিরহাটের মাখা সন্দেশের খুবই নামডাক। মিষ্টি বিক্রি করেই সংসার চলে কয়েকশো পরিবারের।

৬৬. জয়নগরের মোয়া : জয়নগর নামের মাহাত্ম্য এমনই যে নামটাই ব্র্যান্ড। প্রায় ৩০ হাজার মানুষ মোয়া তৈরি ও ব্যবসার সঙ্গে রয়েছেন।

৬৭. মাছের আঁশের গয়না: কাকদ্বীপ, নামখানার প্রায় ৫০টি পরিবার এই কাজের সঙ্গে যুক্ত।

৬৮. চম্পাহাটির বাজি: চম্পাহাটির বাজির নাম সর্বত্র। আতসবাজির ওপর সারা বছর নির্ভরশীল চম্পাহাটির হাড়ালের প্রায় দু হাজার পরিবার। পুজোর মরসুমে সংখ্যাটা দাঁড়ায় প্রায় পঞ্চাশ হাজার। মহেশতলার নুঙ্গির শব্দবাজিরও নাম-ডাক আছে।

৬৯. বারুইপুরের পেয়ারা, লিচু: পেয়ারার আলোচনা হলে একটা জায়গার নামেই সবাই চেনে। তা হল বারুইপুর। আধুনিক পদ্ধতিতে চাষের জন্য বারুইপুরের পেয়ারা মেলে বছরভর। এই এলাকার লিচুর ফলনও বেশ ভাল।

৭০. সুন্দরবনের মধু: সুন্দরবনের বাসন্তী, গোসাবা ও ক্যানিং-এর কয়েকশো মৌলি মধু সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।

৭১. আমতলার, বারাসতের রুটি রুজি ড্রাইফুল: শৌখিন ফুল তৈরি করে বিকল্প আয়ের রাস্তা খুঁজেছেন দক্ষিণ বারাসত ও আমতলার কয়েকশো শিল্পী।