কার্টুন দিয়ে দুনিয়াকে দেখিয়ে দেবেন অঙ্কুশ

কার্টুন দিয়ে দুনিয়াকে দেখিয়ে দেবেন অঙ্কুশ

Thursday March 03, 2016,

3 min Read

২৫ বছরের অঙ্কুশ নন্দী। সৃজনশীলতা চুঁঁইয়ে পড়ছে। রাতদিন অ্যানিমেশনেই ডুবে থাকতে ভালোবাসেন। প্যাশান টা এমনই ভারতীয় অ্যানিমেশনকে দুনিয়ার দরবারে প্রতিষ্ঠিত করতে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন। সাতজন বন্ধুকে নিয়ে রীতিমত একটি কোম্পানি খুলে ফেলেছেন। অ্যানিমেশন ও ফিল্ম প্রোডাকশনসের যাবতীয় খুঁটিনাটির ওপর সংস্থাটি কাজ করছে। যাকে বলা যেতে পারে, জুতো সেলাই থেকে চন্ডীপাঠ। ইংরেজি আদ্যক্ষরে সাত বন্ধুর নামে সংস্থার নাম‌। যেমন, পিএসএসএএমটিইকে মিডিয়া লিমিটেড। শুধু তাই নয় বড়সড় আকারে আন্তর্জাতিক মানের অ্যানিমেশন ফিল্ম ফেস্টিভালের আয়োজন করেন এই তরুণ উদ্যোগপতি। গত বছর শুরু হয় এই উদ্যোগ। দারুণ সাড়া পড়েছিল। চলতি বছরের ১৫ এবং ১৬ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে অ্যানিমেশন ফিল্ম ফেস্টিভালের আসর বসবে। তার কাজও ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। 

গত বছর নয়াদিল্লিতে অঙ্কুশের কোম্পানির তরফে প্রথমবার অ্যানিমেশন ফিল্ম ফেস্টিভাল আয়োজিত হয়। সারা পৃথিবী থেকে ওঁদের কাছে আসা ৫০ থেকে ৬০টি ছবির ভিতর ৫টি ‌ছবিকে বেছে নিয়ে ফেস্টিভালে দেখানো হয়। ফেস্টিভালে দেখানোর জন্যে নিজেদের তৈরি ছবি পাঠিয়েছিলেন ফ্রান্স, ইজরায়েল, চায়না, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশের অ্যানিমেটররা। অঙ্কুশ বললেন, গত বছরের ফেস্টিভালে কান্ট্রি থিম ছিল ইজিপ্ট, ইজরায়েল আর ফ্রান্স। যৌথভাবে। আর এবছর কথা চলছে কোরিয়ার সঙ্গে। দূতাবাসের সায়ের অপেক্ষা।

অঙ্কুশ বলছিলেন, অ্যানিমেশনের ছাত্রদের পাশে থাকার জন্যেই তিনদিনের এই ফেস্টিভাল করা হচ্ছে। নয়াদিল্লির মিউনিসিপ্যাল কনভেনশন সেন্টারে আগ্রহী দর্শকরা ওই তিনদিন বেশ কিছু অ্যানিমেটেড সিনেমা দেখতে পাবেন।

image


অ্যানিমেটেড সিনেমার বাজার বিপুল। মুম্বইয়ে, বেঙ্গালুরুতে কাজ হচ্ছে প্রচুর। কিন্তু সেসব কাজে অনেক সময়ই মেড ইন ইন্ডিয়ার স্ট্যাম্প লাগছে না। ফলে অ্যানিমেশনের দুনিয়ায় ভারতীয় অ্যানিমেটররা যোগ্য মর্যাদা পাচ্ছেন না। আমরা চাই ভারতীয় স্রষ্টারা তাদের কাজ নিয়ে আসুন। প্রতিযোগিতায় অংশ নিন, এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে সেগুলো দর্শকরা দেখুক। শর্ট ফিল্ম, আর্ট ফিল্ম, ডকুমেন্টারি ফিল্ম, কমার্শিয়াল সিনেমার পাশাপাশি ভারতে অ্যানিমেশনও চমৎকার সম্ভাবনা ময়। সেকথা সকলেই মানেন। কিন্তু তাঁর জন্যে কোনও উৎসব তেমন একটা হয় না। আমরা সেই ফাঁকটুকুই পূরণ করতে উঠে পড়ে লেগেছি।আমাদের সঙ্গে অনেক সংস্থার কথা চলছে। অনেক সংস্থাই আমাদের সঙ্গে যুক্ত হতে উৎসাহী। অ্যানিমেশন নিয়ে যারা সিরিয়াস তেমন সংস্থার সঙ্গে হাতে হাত দিয়ে এই আন্তর্জাতিক অ্যানিমেশন ফিল্ম ফেস্টিভালটা আমরা করতে চাই। এক নাগাড়ে বলে যাচ্ছিলেন ২৫ বছরের তরুণ। মুখে হাসি। চোখে স্বপ্ন। আর লুকোনো উদ্বেগ। এই কাজ একা একটি সংস্থার পক্ষে বেশ কঠিন। নিজের বাণিজ্যিক মডেলটা খোলসা করে না বললেও অঙ্কুশ বুঝিয়ে দিলেন সময় খুব কম। অনেকটা পথ দৌড়তে হবে। এই কাজে ওর স্পনসরশিপ চাই, বিজ্ঞাপণ চাই আর চাই ভারতীয় দর্শকদের সহযোগিতা। 

অঙ্কুশ বলছিলেন, অ্যানিমেশনের কাজ বিকল্প জীবিকা হিসাবে ক্রমাগত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। মুম্বই, বেঙ্গালুরুর মত কলকাতাতেও তার জোয়ার এসেছে। শুধু কলকাতা শহরেই ৫০টিরও বেশি অ্যানিমেশন‌ শেখার স্কুল রয়েছে। এছাড়া, জেলা সদরগুলিতেও অ্যানিমেশন শেখানোর জন্য নতুন নতুন স্কুল খোলা হচ্ছে। বাজারে অ্যানিমেটরের চাকরি আছে টেলিভিশন চ্যানেল অথবা ফিল্ম প্রোডাকশন হাউসগুলিতে। কলকাতার বাইরে মূলত দিল্লির উদাহরণ দিয়ে বলছিলেন সেখানে স্কুলের বাচ্চাদের লেখাপড়ার কারিকুলামের মধ্যেও অ্যানিমেশন ঢুকে পড়েছে। কলকাতায় এটা এখনও চালু হয়নি। ওরা চান শিশু স্তর থেকে অ্যানিমেশন নিয়ে একটা প্রাথমিক প্রশিক্ষণ চালু হোক। অ্যানিমেশন নিয়ে সরকারি স্তরে লেখাপড়া করা যায় পুণে ফিল্ম ইন্সটিটিউট ও ন্যাশনাল স্কুল অব ডিজাইনিংয়ে। ফিল্ম ইন্সটিটিউটের কোর্সটি ডিপ্লোমা কোর্স।

বাবা ব্যবসায়ী। রেলের অর্ডার সাপ্লাইয়ের পুরনো ব্যবসা। ফিল্ম প্রোডাকশনেও উৎসাহ আছে। বাবাকে দেখেই উদ্যোগপতি হতে শেখা অঙ্কুশের। তাই ওর পক্ষে কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টরের দায়িত্ব সামলানোটা কঠিন ছিল না। তাছাড়া, ওঁর পড়াশোনাও অ্যানিমেশন নিয়ে। দিল্লির অ্যানিমেশন ফিল্ম কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেন। ফলে, কাজের চাপ ওই ভালোবেসে নেওয়া। একারণে চাকরি করার চেয়ে নিজে কিছু করার ঝুঁকি নেওয়া সত্ত্বেও তেমন চাপ অনুভব করছেন না অঙ্কুশ।

অ্যানিমেশন ফিল্ম ফেস্টিভালে যোগদানকারীদের চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথমত, পূর্ব ও দক্ষিণ ভারত। এক্ষেত্রে জোনাল ফিনালে কলকাতায় বিড়লা সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি মিউজিয়ামে আয়োজিত হচ্ছে আসছে জুলাইয়ে। উত্তর ও পশ্চিম ভারতের প্রতিযোগীদের নিয়ে সেপ্টেম্বরে দিল্লিতে জোনাল ‌ফিনালে হবে। যাঁরা জয়ী হবেন ডিসেম্বরে দিল্লির ফেস্টিভালে মূলত তাঁদেরই ছবি দেখানো হবে। 

অঙ্কুশের কথায়, প্রোডিউসররা এখনও বিশ্বাস করেন, অ্যানিমেশন ছবি বানালে দর্শকরা সম্ভবত নেবেন না। তাই ঝুঁকি নেন না। তবে অঙ্কুশের বরাভয়, ঝুঁকি নিলে ঠকবে না ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি।পরবর্তী সময়ে এই কাজটা করে দেখিয়ে দিতে চান অঙ্কু‌শ এবং ওর সংস্থা।