ক্ষুদ্র উদ্যোগে ভরসার রং জুগিযেছেন যিনি

একজন সাধারন মানুষকে ব্যবসার সুযোগ করে দিতে কে পারে? তাকে সমাজে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার সুযোগ করে দেওয়াটাও তো এক সামাজিক কর্তব্যই। সবার পক্ষে ব্যাঙ্ক থেকে লোন নেওয়াটাও তো সম্ভব হয়ে ওঠেনা। অরুণাবাঈ বাঁসোদে মহারাষ্ট্রের মুন্ডাওয়ার একজন ৫২ বছর বয়স্ক ফল বিক্রেতা। তিনি পাইকারের কাছ থেকে টাটকা ফল কেনেন এবং বাড়ি বাড়ি বিক্রি করেন। গত এক বছর ধরে তিনি এই কাজটি করে চলেছেন এবং বেশ কিছু বাঁধা খরিদ্দার পেয়েছেন। এখন তিনি তাঁর ব্যবসাটিকে আরও বাড়াতে চান, আরও বেশি ফল কিনে এবং নতুন জায়গায় পৌঁছে যেতে চান। এর জন্যে তার প্রয়োজন ৮০০০ টাকার মূলধন।

ক্ষুদ্র উদ্যোগে ভরসার রং জুগিযেছেন  যিনি

Tuesday September 08, 2015,

3 min Read

একসাথে বিনিয়োগ করার মতো এত টাকা তাঁর কাছে নেই। আপনার কাছে যদি এই টাকা থেকে থাকে যা আপনি এক বছরের জন্যে দিতে পারেন এবং প্রায় এক বছর পর আপনি সেটা কিছু সুদ সমেত ফেরত চান, তাহলে আপনি কি তাঁকে ধার দেবেন? আমাদের মধ্যে অনেকেই এরকম সামাজিক বিনিয়োগ করতে পছন্দ করবে যাতে অরূনা বাঈ এর মতো কারও মুখে হাসি ফোটে এবং তিনি তাঁর ব্যবসা আরও বৃদ্ধি করতে পারেন।

Rang De, এরকমই একটি জনগণের টাকায় পরিচালিত সামাজিক বিনিয়োগের প্ল্যাটফর্ম। এর কাজ হল, দূরবর্তী স্থানের কোনও অভাবী মানুষ এবং কোনও বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক এমন মানুষদের মধ্যে যোগাযোগ তৈরি করা। Rang De শুরু হয়েছিল স্মিতা রামকৃষ্ণ ও রামকৃষ্ণ এন-কে এর হাত ধরে ২০০৮ সালে। তারা মনে করেছিলেন, এরকম ছোটো ছোটো পরিমা‌ণ ধার দিলে তাতে খরচের পরিমানটাও কম হবে এবং ভারতে দারিদ্রতাও হ্রাস পাবে।

image


কিছুদিন আগেই আমরা স্মিতার কাছে Rang De এর সম্পর্কে বিভিন্ন সুন্দর গল্প শুনছিলাম এবং তাঁর সামাজিক কাজের ৫ বছরের সফরের কথা। অর্থনীতিতে B.A. এবং MSOW করার পর স্মিতা বিভিন্ন অলাভজনক সংস্থায় কাজ করেন। এই ধরনের সংস্থার কাজকর্ম সম্পর্কে তাঁর এক বিশেষ আদর্শবাদী ধারণা ছিল। সামাজিক ক্ষেত্রে কাজ করাটা তার কাছে খুব স্বাভাবিক ভাবেই হয়েছে, কিন্তু তিনি কখনই ভাবেননি যে একজন সামাজিক ব্যবসায়ী হয়ে উঠবেন।

অলাভজনক ক্ষেত্রে কাজ করার সময় বেশ কিছু ঘটনা এবং অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বুঝেছেন কেন আজকের সভ্য সমাজ আর কোনও বদান্যতা দেখায় না। “হিসাবের দায়িত্ব এবং স্বচ্ছতা সভ্য সমাজের কাছে সবচেয়ে জরুরি বিষয়। কিন্তু যখনই সেটা কাজের ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয়, তখন তা আর কেউ করে না”- বললেন স্মিতা।

অলাভজনক সংস্থাতেও অস্বচ্ছতা থাকতে পারে, এটা দেখেই স্মিতা একটা উদাহরণ তৈরী করতে চান। অলাভজনক সংস্থারও একটি প্রভাব ও ক্ষমতা থাকতে পারে যার পিছনে একটি সামাজিক বহনযোগ্য ব্যবসার মডেল আছে। Rang De ১০০ টাকার মতো স্বল্প মূল্যও ধার দিয়ে সাহায্য করে। এর পিছনে উদ্দেশ্য ছিল, সারা ভারত থেকে বিনিয়োগকারী জোগাড় করা ও দেশের ১৪ টি রাজ্য জুড়ে ব্যবসা করা। বিনিয়োগকারীদের ছোট ছোট পরিমাণে বিনিয়োগ করার সুযোগ করে দিয়ে তাদের সন্দেহ দূর করা। Rang De-এর মডেলের প্রতি বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করতে এবং দারিদ্র দূরীকরণে এর প্রভাব বিস্তার করতে এই কাজ করা হত। একজন সামাজিক বিনিয়োগকারী নিজের পছন্দমতো এক ঋণগ্রহীতাকে online-এ ধার দিতে পারেন। Rang De মাঠে নেমে কাজ করার মত যোগাযোগও আছে। ঋণগ্রহীতাকে টাকা দেওয়া এবং সেই লোন সময়মত শোধ করার বিষয়টি দেখা হয়। Rang De এই সকল ক্ষেত্রে মাত্র ১% টাকা ঋণগ্রহীতার থেকে নেয়।

জনগণের মূলধন ভারতে এখনও বর্ধিষ্ণু এবং Rang De এই নিয়ে ভালোই কাজ করেছে। এক্ষেত্রে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করা। কারণ প্রথম থেকেই আমরা বিশ্বাস না করতেই শিখি। বিভিন্ন কেলেঙ্কারির ঘটনা আমাদেরকে অবিশ্বাসী বানিয়ে তুলেছে। এই স‌ব কারণেই Rang De প্রথম থেকেই তার সমস্ত তথ্য সবার সামনে মেলে ধরেছে।

image


“আমরা জনগনের মূলধন নিয়ে পরীক্ষা করছিলাম, এবং আমরা ব্যর্থ হওয়ার জন্যও প্রস্তুত ছিলাম। বলতে গেলে, এই ব্যর্থ হওয়ার প্রস্তুতিই ছিল আমাদের সবথেকে বড় শক্তি। যখন আমরা শুরু করছিলাম, অনেকে বলেছিলেন যে আমি আর রাম পাগল হয়ে গেছি। সবচেয়ে দারুন ব্যপার হল, আমরা ভাবিইনি যে আমরা এত দূর আসতে পারব” – বলছেন স্মিতা।

স্মিতা জানালেন, যে এই ৫ বছরে প্রতিটা দিনই ছিল এক একটা চ্যালেঞ্জ। কিন্তু সেটাই ছিল তাঁদের কাছে এগিয়ে যাওয়ার মূলধন। আজকে Rang De-এর এই অবস্থানের জন্যে স্মিতা তার সহকর্মী রামকে বিশেষভাবে সম্মান করেন। “রামকে ছাড়া Rang De আজকে এই পর্যায়ে পৌঁছাতেই পারত না। অমরা নানা ধরনের কাজ নিয়ে আসি, যেগুলি আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে”- বলছেন স্মিতা।তিনি বিশ্বাস করেন নিজের আবেগকে কিছুটা পরিকল্পনার সঙ্গে অনুসরণ করে এবং কিছুটা ঝুঁকি নিতে পারলে, সামাজিক ব্যবসায়ীরা বিশেষ উচ্চতায় পৌঁছাতে পারবেন।