যোগব্যায়াম যে ভীষণ উপকারী একটি অভ্যাস সেতো প্রায় সকলেই একমত। কিন্তু যাঁরা উদ্যোগপতি কিংবা উদ্যোগপতি হতে চান তাঁদের জন্য যোগাভ্যাসের কিছু মৌলিক তাৎপর্য আছে। স্টার্টআপ আর অ্যান্তেপ্রেনিওরদের অনেক পরিশ্রমী হতে হয়। নিত্য যোগব্যায়াম চর্চা তাঁদের মানসিক এবং শারীরিক বল বৃদ্ধি করে। তাঁদের আরও বেশি বেশি করে সৃজনশীল আর উৎপাদনশীল করে তোলে। প্রতিকূলতার সাথে লড়বার শক্তি দেয়। মনকে চাঙ্গা করে আর চাপমুক্তও রাখে। বৌধ্যিক, মানসিক এবং সর্বোপরি স্নায়বিক নানান দিক থেকে যোগার গুরুত্ব অপরিসীম। প্রতিদিন কয়েক মিনিটের যোগাভ্যাস আপনার দেহ আর মনকে একটি শক্তিঘরে রূপান্তরিত করে।
ভেষজবিজ্ঞানীরা যোগাকে অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার সারানোর আর মনোযোগ বাড়ানোর হাতিয়ার হিসাবে প্রয়োগ করেন। গবেষণা অনুযায়ী যোগা মগজে রক্ত সঞ্চালন আর অক্সিজেনের প্রবাহকে দ্রুত করে। যোগা আপনাকে শারীরিক আর মানসিক দু ধরণের অবসাদ থেকে মুক্তি দেয়। একটি দীর্ঘ এবং গভীর যোগা সেশানের পর জীবনের প্রতি আপনি নতুন ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করতে পারবেন।
বেশিরভাগ অ্যান্তেপ্রেনিওরই স্বাস্থ্য সচেতন। কিন্তু মানসিক শুদ্ধিকরণ করাটাও দরকার। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে এটাই সত্যি যে, ব্যস্ত স্টার্টআপের জীবনে প্রতিকূলতা অগণিত হারে বেড়েই চলে। যে প্রবল মনোবল আর শারীরিক তৎপরতা এই জীবন দাবী করে তার বেশির ভাগটাই দিতে পারে একমাত্র নিত্য যোগাভ্যাস।
প্রচলিত বিশ্বাসের বিপরীতে এটা বলা হয় যে শ্রম করা অনেক সময় স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো। আদিম মানুষের বেঁচে থাকার রসদই ছিল কায়িক শ্রম। প্রাগৈতিহাসিক কালে এই শ্রমই আদিমানুষকে ঘাতক শত্রু, ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে দূরে রাখত। আমাদের পূর্বপুরুষদের ধন্যবাদ, আজ তাঁদের কারণে আমাদের জিনে পরিশ্রমী সত্তা এখনও রয়েছে। প্রত্যেক অ্যান্তেপ্রেনিওরের কিছু ভ্রান্ত ধারণা থাকে। তবে নিজের ব্যবসা দাঁড় করাতে যখন আপনি শুরু থেকে অবিরাম লড়াই করছেন, জেনে রাখবেন শরীর হল প্রথম বিষয় যা ধাক্কা খাবে। হাড়ভাঙ্গা খাটুনি আর বহু বাধাবিপত্তি টপকে যাবার পরীক্ষার জবাব দিতে হবে আপনার শরীরকেই।
শ্রম শরীরের জন্য ক্ষতিকারক নয়। কিন্তু অতিরিক্ত সমস্ত বিষয়ই বিপজ্জনক। শ্রম আমাদের অঙ্গে অনেক অ্যাসিড সঞ্চারিত করে। একটি গবেষণা বলছে আফ্রিকার জঙ্গলে সিংহের তাড়া খাওয়া জিরাফ কিংবা জেব্রার যে পরিমাণ মানসিক ধকল হয়, সেই পরিমাণ মানসিক বিধ্বস্ত অবস্থা হয় ট্রাফিক জ্যামে ফেঁসে থাকা সেই ব্যক্তির যাঁর কাজে যেতে ভীষণ দেরি হয়ে যাচ্ছে।
জীবনে প্রথমবার যোগাভ্যাস করা একজন মানুষও প্রথম সেশানের পর বেশ শান্তি আর আরাম অনুভব করেন। যাঁরা নিয়মিত এই চর্চার ভিতর আছেন তাঁরা অবশ্যই মানসিক চাপকে তাঁদের সিস্টেম থেকে কমাতে পেরেছেন। যোগা কিছু টেকনিক আর ধ্যানের মাধ্যমে মানুষের মনের চঞ্চলতাকে কমিয়ে দেয়। শুনতে সোজা লাগলেও, কিছু না ভেবে থাকতে পারা খুবই কঠিন। যোগা মনকে শান্ত করে। নীরব করে। মন বিশ্রাম পায়। বিশ্বাসের উর্দ্ধে গিয়ে মন এবং শরীরের ঐকতান ঘটে।
যোগব্যায়াম চর্চার সময় শরীরের সাথে স্নায়বিক যোগসূত্রগুলো সঠিকভাবে সাম্যাবস্থায় থাকে। শরীরে পবিত্র এনার্জির অবিরত ধারা বয়। মন, দেহ এবং মাথা আরাম পায়। যোগা স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। পড়াশোনা করার ইচ্ছে বাড়ে। দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট হয়। বিশ্লেষণ ক্ষমতা বাড়ে। যোগা মানুষের ভাববিনিময় প্রথা আর মানসিক গভীরতাকেও উন্নত করে।
আজকের যুগে মানুষ উৎপাদনশীলতার পূজারী। বড় বড় আইডিয়া তাঁদের মাথায় ঘুরপাক খায়। মনে রাখতে হবে সেখানে আমাদের ভিতরের মানুষটাকেই তৎপর হতে হবে সর্বাধিক। যোগা আপনার আত্মার সাথে আপনাকে জুরে দেয়। এই স্কিলটাকেই আয়ত্তে রাখতে হাঁকিয়ে মরেন অ্যান্তেপ্রেনিওররা।
যোগা উত্তেজনা আর অবসাদ কমায়। নিজের প্রতি সন্দেহকে মেরে ফেলে। আত্মিক এবং শারীরিক চেতনা বৃদ্ধি করে। ফলে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে। ভিতরের সৃষ্টিশীল মানুষটি বাইরে বেড়িয়ে এসে সহজেই ছুঁতে পারে সীমানা। প্রত্যেকটি মানুষের মধ্যেই একজন অনন্য স্রষ্টা আছেন। যোগা তাঁকেই চিনিয়ে দেয়। সামাজিক কর্মদক্ষতা, নিজের ওপর ভরসা, মনোযোগ সব লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে। ব্যক্তি তিরিক্ষি মেজাজকে না বলতে শেখেন। টেনশান আমাদের ভিতর থেকে খোকলা করে দেয়। একজন হাসিখুশি মানুষের বদলে পড়ে থাকে একটি ফাঁপা খোলস। আমাদের কাজ করার প্রবৃত্তি কবর চাপা পড়ে। প্রেরণা হারিয়ে যায়। যোগা এইপ্রকার পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দেয়। ফিরিয়ে আনে প্রাণোচ্ছল মানুষটিকে যিনি মানসিক বল আর সৃজনশীলতার আনন্দে টগবগ করে ফুটছেন।