পরিশ্রমেই সফল হাইটেক "ব্ল্যাক-বেল্ট" অভিষেক

পরিশ্রমেই সফল হাইটেক "ব্ল্যাক-বেল্ট" অভিষেক

Tuesday February 09, 2016,

3 min Read

অসম্ভব বিনয়ী। ছোটোখাটো চেহারা। এবং হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়া কণ্ঠস্বর। এই হল চকিতে অভিষেক নন্দী। কিন্তু এই ছেলেটিকে যখন ইনটেল বা মাইক্রোসফটের কোনও টেক কনক্লেভ মাইক্রোফোন হাতে ‘স্পিকার’ হিসাবে দেখবেন, বাজি ধরছি, চিনতে পারবেন না। উপচে পড়া আত্মবিশ্বাস, বিষয় ভিত্তিক জ্ঞানের গভীরতা, বাচনভঙ্গি, প্রাঞ্জল শব্দের ব্যবহার – মনে হবে এ কোন অভিষেক! মেলাতে অসুবিধা হবে।

image


জীবনের এই দুই অদ্ভুত সত্ত্বার ধাঁধাটি বুঝতে গেলে ফিরে যেতে হবে ২০০৬-য়ে। নেতাজী সুভাষ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে পাস করে বেরিয়ে অভিষেক বুঝতে পারলেন, এম.এন.সি-তে ইন্টারভিউ পেতে গেলে ফার্স্ট ডিভিশন মার্কস থাকা জরুরি। যা তাঁর নেই। তাই অগত্যা পছন্দের সফটওয়ার সংস্থায় চাকরি করা হল না। ঢুকে পড়লেন উইপ্রো বিপিও-তে ডেল টেক সাপোর্টে। কিছু দিন পর এয়ারটেলে। এবার ব্রডব্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে। কিন্তু শান্তি নেই। রোজগার হয়ত শুরু হল। কিন্তু মন ভাল নেই অভিষেকের। সফটওয়ারের কাজ করা হচ্ছে না যে! নতুন কিছু শেখাও হচ্ছে না। পড়াশুনা করা যাবে, নতুন কিছু শেখা যাবে এমন একটা ভেবে চাকরি নিলেন এইচ.এস.বি.সি. গ্লোবাল রিসোর্সিং-য়ে। আইটি অ্যানালিস্ট পদে।সেখানেও অস্থিরতা। ‘দিল্লী চলো’। সেখানে আইটি অ্যাসোসিয়েট হিসাবে কাজের সুযোগ পেলেন। সফটওয়ার ডেভেলপমেন্ট এবং আইটি ইনোভেশন-দুটো নিয়েই কাজ করার সুযোগ এল। ‘এই সময়টা খুব খাটতাম। অফিস ছুটি হয়ে যাওয়ার পর প্রায়শই থেকে যেতাম। রাত অবধি রিসার্চ করতাম। পড়াশুনা করতাম নেটে। নতুন সফটওয়ার ইনোভেশানের চেষ্টা করতাম’। বলছিলেন অভিষেক। দিল্লীর পাটও চোকাতে হল। বেশিদিন উপেক্ষা করা সম্ভব হল না প্রাণের শহরের টান। ফিরে এলেন কলকাতায়। কলকাতায় ফিরেই খবর পেলেন ইনটেল অ্যাপ ইনোভেশান কনটেস্ট করবে। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন, অংশগ্রহণ করবেন। আর সেটাই হল, অভিষেকের জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। শুরু হল ইন্টারনেটে প্রগাঢ় রিসার্চ। C+ এর বই নিয়ে নাড়াচাড়া। প্রোজেক্ট করে ইনটেল অ্যাপ অ্যাপ স্টোরে জমা দিয়ে সার্টিফায়েড অ্যাপ ডেভেলপারের স্বীকৃতি পেলেন। অভিষেকের প্রোজেক্ট-৫০ টি সেরা অ্যাপের মধ্যে স্থান পেল। বাছলেন বিশ্ববিখ্যাত স্কট হ্যানসেলম্যান। ‘আমার বানানো অ্যাপ স্কটের পছন্দ হয়েছে, এটা আমার কাছে স্বপ্নের মতো। খবরটি পেয়ে প্রথমে বিশ্বাস-ই হচ্ছিল না। এই সাফল্যটা আমার আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দিল। নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর রাস্তা তৈরি করল’। চিক চিক করছিল অভিষেকের চোখ দুটো।

এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি অভিষেককে। কোডার প্রোজেক্ট লেখা শুরু হল। মাইক্রোসফট ভারচুয়াল একাডেমি ফাস্ট ট্র্যাক গ্লোবাল চ্যালেঞ্জে অংশগ্রহণ করলেন। এবং জিতলেন। ২০১৩-য় সেরা দশটা ডেমো-র মধ্যে স্থান পেল অভিষেকের কাজ। নাম উঠল কোডার প্রজেক্টে। ক্রমে ‘ইনটেল সফটওয়্যার ইনোভেটর’-য়ের সম্মান পেলেন। তারপর ইনটেল ব্ল্যাক বেল্ট ডেভেলপার। এবং সেই সঙ্গে ‘মাইক্রোসফট ভ্যালুড প্রফেশনাল(এম.ভি.পি)। ভারতে আমিই প্রথম প্রসঙ্গে এই তিনটে সম্মান পেয়েছি’। অভিষেকের মুখে চওড়া হাসি। সাফল্যের অভিব্যক্তি। তৃপ্তির সন্তুষ্টি। সানফ্রানসিসকো-তে উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে সেখানকার এটি-অ্যান্ড-টি পার্কে সম্মান না দেওয়া হয় অভিষেককে। সেই অনুষ্ঠানেই অভিষেকের সঙ্গে আলাপ হয় ইউ.এস.বি এবং পি.সি.আই এক্সপ্রেস স্লটের সহ আবিষ্কর্তা অজয় ভাটের সঙ্গে। করমর্দন করে শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় আবেগ তাড়িত হয়ে পড়েন অভিষেক।

অহরহ রিসার্চে মশগুল এখন অভিষেক। সাফল্যের স্বাদ তাঁকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে আরও বড় লক্ষ্যে। নরেন্দ্র মোদীর ডিজিটাল ইন্ডিয়া ইনোভেট চ্যালেঞ্জে তাঁর কাজ প্রথম ৫০ জনের তালিকায় ঢুকে পড়েছে। সরকারি খরচে আই.আই.এস আমেদাবাদে ট্রেনিং নিয়ে ফিরলেন। হালফিল, মার্কিন প্রকাশন সংস্থা তাঁকে দিয়ে দু-দুটি বই লেখাচ্ছে-গেমিং-য়ের উপর। ‘গীকমাঙ্কি স্টুডিওজ’ নামে নিজে একটা সংস্থা শুরু করেছেন ২০১৪-র ডিসেম্বর থেকে। এবং দেশে-বিদেশের টেক কনক্লেভে বক্তব্য রাখার ব্যস্ততা তো আছেই। অভিষেক বারবার বলেন, নতুন কিছু করতে চাই। কলকাতার জন্য কিছু করতে চাই। এমন মেধা-কে তাঁর প্রাণের শহর সত্যিই কি কোনও কাজে লাগাতে পারে না?