ভাগ্যিস! তোতনকে জলে ফেলে দিয়েছিল রবীনদা

ভাগ্যিস! তোতনকে জলে ফেলে দিয়েছিল রবীনদা

Friday January 29, 2016,

3 min Read

গুলি খেলা, অন্যের বাড়ি থেকে কুল, নারকেল পাড়া। এসব দুষ্টুমি করেই বেশ কাটছিল জীবন। এক দাদা জোর করে বাড়ি থেকে টেনে নিয়ে গিয়ে ফেলল জলে। অথৈ জলে পড়া নয়, জলই অনিশ্চিত জীবনকে নিশ্চয়তার ডাঙায় তুলেছে। ওয়াটারপোলোয় রীতিমতো ঝড় তুললেন তোতন মণ্ডল। দুরন্ত গোলকিপিং করে দক্ষিণ ২৪ পরগনার তালদির মতো প্রত্যন্ত এলাকার খেলোয়াড় তোতন এখন ভারতীয় দলের নিয়মিত সদস্য।

image


জলে-জঙ্গলের মানুষ। জল যে অনেক কিছু দিতে পারে তা ছেলেবেলায় টের পাননি তোতন মণ্ডল, তাপস মণ্ডলরা। তালদির গোবিন্দনগরের দুই ভাই ছেলেবেলায় আর পাঁচজনের মতো গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়েছিলেন। দুজনেরই সুঠাম চেহারা। উচ্চতা ৬ ফুটের ওপরে। স্বাস্থ্যে বলীয়ান হলেও তাপস রং মিস্ত্রির লাইন ধরেন, ভাই তোতন পড়াশোনা করলেও তেমন বলার মতো কিছু নয়। বছর চারেক আগে ভাল খেলোয়াড়ের খোঁজে ওই বাড়িতে যান ওয়াটারপোলো কোচ রবিন বোলদে। তোতনদের বাবা ধনঞ্জয় মণ্ডল তালদি মাছের আড়তে ঝাড়ুদারের কাজ করেন। টেনেটুনে চলা সংসার। এই অবস্থায় ওয়াটারপোলোর মতো অচেনা খেলায় গিয়ে কী হবে তা নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় ছিলেন তোতনদের মা। নিজেকে উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরে রবিন তাঁকে আশ্বস্ত করেন কয়েক বছরের মধ্যেই ভাল জায়গায় পৌঁছবেন তাপস। হলও তাই। ওয়াটারপোলোয় দুর্দান্ত খেলে দু বছরের মধ্যে নেভিতে চাকরি পান তাপস। দাদার সাফল্য দেখিয়ে ভাই তোতনকেও জলে টেনে এনেছেন রবিন। রবিন দুই ভাইকে বুঝিয়ে ছিলেন মন দিয়ে জলে পড়ে থাকলে তাঁর মতো জাতীয় খেলার সুযোগ আসবে। চাকরি পাওয়াও কোনও ব্যাপার নয়। ওয়াটারপোলো যে অনেক কিছু দেবে তা রবিন স্যার ও দাদাকে দেখে বিলক্ষণ বুঝেছে তোতন।

গ্রাম্য বদমায়েশিতে হারিয়ে না গিয়ে তোতনের জীবন এখন শৃঙ্খলায় মোড়া। কলকাতায় প্রসেনজিৎ ভঞ্জের থেকে তোতন প্রশিক্ষণ নেয়। আধুনিক মানের প্রস্তুতির ব্যাপারটা দেখেন প্রসেনিজৎবাবু। তালদি স্টেশনে লাগোয়া পুকুরে রবিন বোলদের কাছে মাঝেমধ্যেই অনুশীলন করে সে। লেগে থাকার ফল পেয়েছে বছর উনিশের তোতনও। ন্যাশনাল ওয়াটারপোলো টিমের হয়ে সদ্য মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে খেলে এসেছে তালদির এই ছেলে। তার গোলকিপিং রীতিমতো প্রশসিংত হয়েছে। প্রশংসায় আটকে থাকা নয় তালদির এই খেলোয়াড়ের চোখ আরও পদক, মেডেলের দিকে। তোতনের কথায়, রবিনদাকে আদর্শ করে এগোনোর চেষ্টা করেছি। পাশে আছেন প্রসেনজিৎদা। অভাবের সঙ্গে লড়াই করার অভ্যাসটা ছোট থেকেই ছিল, সেই ক্ষমতাই আমায় অন্যদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জাতীয় দলে ঢোকার রাস্তা খোঁজার রসদ দিয়েছে। ইতিমধ্যে নেভির ট্রায়ালেও ডাক পেয়েছে তোতন। যাঁর পরশে তোতনদের সাদা-কালো জীবনে এত রং-এর বাহার তিনি কী বলছেন। পুকুরে ছেলেদের তালিম দিতে দিতে রবিন বোলদে বললেন, এদের নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন। পিছিয়ে পড়া এলাকা থেকে গিয়ে ওরা যখন সাফল্য পায় তখন তৃপ্তি দেয়। তোতন বড় মাপের গোলকিপার হবে। আরও অনেক তোতন তুলে আনা আমার লক্ষ্য।

তোতনরা তালদির যে পুকুরে অনুশীলন করে সেখানে পরিকাঠামো বলে কিছুই নেই। বর্ষার সময় পু কুর ভেসে যায়। এর মধ্যেই তোতনের মতো অনেক খেলোয়াড় উঠে আসছে এই পুকুর থেকে। প্রাক্তন জাতীয় খেলোয়াড় ও কোচ রবিনের উৎসাহে সুন্দরবন লাগোয়া এলাকার ছেলেরা ওয়াটারপোলোকে সঙ্গী করে নতুন দিগন্ত খুঁজে পেয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা তথা ভারতীয় ওয়াটারপোলো টিমের কার্যত সাপ্লাই লাইন হয়ে উঠেছে তালদির এই এঁদো পুকুর।