TYGR-এর পিঠে চড়েই ঘুরে বেড়াবে কলকাতা

কোমরের বেল্ট শক্ত করে বাঁধুন। তৈরি হন। কারণ কলকাতা বদলে যাবে খুব শিগগিরই। রাস্তায় রাস্তায় দেখতে পাবেন সেই বদল। যা এতদিন দেখেননি। দেখার সৌভাগ্য হয়নি। নীল-সাদা জোছনার আলোয় কলকাতার রাস্তায় ঝিকমিক করে উঠবে ডোরাকাটা বাঘের চিহ্ন। শুধু রাতে নয়। সারাদিন ধরে ছুটে বেড়াবে বাংলার বাঘেরা। বেহালা থেকে ব্যারাকপুর। সোনারপুর থেকে শেওড়াফুলি। সর্বত্রই ব্যাঘ্র অভিযান। জানেন কি আপনিও হতে পারেন ‘হি ম্যান’।... কী ভাবছেন? ধরে নিন এবার সত্যিই হতে চলেছে পজিটিভ পরিবর্তন।

TYGR-এর পিঠে চড়েই ঘুরে বেড়াবে কলকাতা

Monday June 20, 2016,

4 min Read

image


বছর দুয়েক আগে যখন কলকাতায় ওলা-উবের উঁকি দিল তখন থেকেই এই শহরের হলুদ ট্যাক্সির মুখ চুন। এক দু হাজার নয় কুড়ি পঁচিশ হাজার হলুদ ট্যাক্সি। এতদিন রজনীকান্ত স্টাইলে কলার তুলে ঘুরে বেড়ানোতে যারা অভ্যস্ত ছিলেন। প্যাসেঞ্জারকে মুখের ওপর যাব না বলার হিম্মত রাখতেন। মিটারের গ্যাঁড়াকল করে লোক ঠকানোর অপযশ বয়ে বেরিয়েও কেউ যাদের কিচ্ছু করতে পারেনি। কিন্তু নিঃশব্দে ওলা-উবের-মেরু ওঁদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। সব তড়পানি, সব আস্ফালন, হাওয়া বেরনো বেলুনের মত ফুরিয়ে যেতে বেশি সময় লাগেনি। ওদের চোখের সামনে দিয়ে ওলা-উবের দৌড়চ্ছে। “দেখবি আর জ্বলবি/ লুচির মত ফুলবি” টাইপের বায়বীয় ঈর্ষা নিয়ে হলুদ ট্যাক্সির রজনীকান্তরা মাছি তাড়াচ্ছেন আজকাল। ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দিন কাবার হয়ে যাচ্ছে। ঠেকায় না পড়লে কেউ ট্যাক্সি বলে হাঁক দিচ্ছে না। এই শহর যত স্মার্ট হচ্ছে ততই নীরবে ট্যাক্সি বুক করে ফেলছে। সস্তায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ক্যাব চড়ার অনন্য অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করছে অনায়াসে।

একথা অস্বীকার করার কিছু নেই যে প্রতিযোগিতায় ইতিমধ্যেই পিছিয়ে গেছে কলকাতার ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে যাওয়া হলুদ ট্যাক্সি। এবার জেনে রাখুন পাশা পাল্টানোর সময়। তাদেরও পরিত্রাতা আসছে। এটাও একটা অ্যাপলিকেশন। নাম TYGR অ্যাপ। বাঘের মুখ আঁকা। হলুদ কালোর ডোরা কাটা। হলুদ ট্যাক্সির হতাশার সলিউশন।

মনে করা হচ্ছে এর হাত ধরেই কলকাতায় একটা ট্যাক্সি বিপ্লব হতে চলেছে। খুব শিগগিরই। শুরু হয়ে গেছে পাইলট। সংস্থার দুই কর্ণধার আদিত্য পোদ্দার এবং দীপাঞ্জন পুরকায়স্থর সঙ্গে কথা হচ্ছিল। ওরা বলছিলেন, এই শহরের কুড়ি হাজারের বেশি হলুদ ট্যাক্সি এবার দৌড়বে স্মার্ট রুটে। বসে বসে আর মাছি তাড়াতে হবে না। টাইগার অ্যাপ চালু করার পাইলটেই দারুণ সাড়া পেয়েছেন ওঁরা। এক হাজার ট্যাক্সি রাস্তায় নামাতে উবেরের সময় লেগেছিল প্রায় বারো মাস। সেখানে মাত্র একমাসেই টাইগারে রেজিস্টার করা ট্যাক্সির সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। এই অ্যাপ যেমন ট্যাক্সি চালকদের পরিত্রাণ দেবে তাই নয় যাত্রীদেরও দেবে দুর্দান্ত সব অফার। আরও সহজ হবে বেশি রাতে বাড়ি ফেরা। প্লে স্টোর থেকে TYGR অ্যাপটি ডাউনলোড করলেই আপনি বেসিক আইডিয়াটা পেয়ে যাবেন। প্ৰথমবার রেজিস্টার করতে হবে। তারপর থেকে লগ-ইন চাইবে। আপনি কী হিসেবে লগইন করছেন জানতে চাইবে অ্যাপ। কেননা ড্রাইভার এবং প্যাসেঞ্জার দুজনের জন্যে একটাই অ্যাপ।

কী থাকছে TYGR অ্যাপে?

আপনি TYGR অ্যাপ মারফত যেতে চাইলে, আপনাকে ডেসটিনেশন দিতে হবে। আপনাকে এবং ড্রাইভারকে রুট ম্যাপ দেখিয়ে দেবে অ্যাপ। আপনার আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকা টাইগার ট্যাক্সিগুলো ফুটে উঠবে স্ক্রিনে। ড্রাইভারদের কাছে নোটিফিকেশন চলে যাবে আপনা আপনি। যে বা যারা আপনার দেওয়া গন্তব্যে যেতে তৈরি কেবলমাত্র তারাই আপনাকে ইচ্ছা প্রকাশ করে নোটিফিকেশন পাঠাবে। আপনার কাছে চলে আসবে সেই লিস্ট। এবার আপনি বেছে নিতে পারবেন আপনার পছন্দের গাড়ি, পছন্দের ড্রাইভার। ম্যাপ থেকেই আপনি কল করতে পরবেন ড্রাইভারকে। গাড়ির চিহ্নে ট্যাপ করেই কল করা যাবে। এই গোটা পরিষেবা আপনাকে বিনে পয়সায় দিচ্ছে TYGR অ্যাপ সংস্থা। এমনকি ট্যাক্সি চালকরাও প্যাসেঞ্জার ধরার এই অভিনব টেকনিক পাচ্ছেন একেবারে বিনে পয়সায়।

আপনি যদি প্যাসেঞ্জার হন তাহলে আপনি অ্যাপে একবার রেজিস্টার করলেই অ্যাপটি আপনাকে মনে রাখবে। আপনার ইমার্জেন্সি ফোন নম্বর, ইমার্জেন্সি মেসেজ পাঠানোর নম্বরও মনে রাখবে। বিপদে আপদে মেসেজ চলে যাবে ইমার্জেন্সি নম্বরে।

এই সংস্থা অ্যাগ্রিগেটর হিসেবে কাজ করবে না। ফলে টাকা পয়সার লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত থাকছে না টাইগার। কলকাতার বাইরে চালকদের কাছ থেকে মাসিক কিংবা বার্ষিক চাঁদা নেওয়ার পরিকল্পনা আছে। কিন্তু সেটাও যৎসামান্য। এখন প্রশ্ন হল ‘অ্যাপটির রোজগার হবে কোথা থেকে?’ প্ৰশ্নের সহজ উত্তর হল ওরা মিডিয়ার রেভেনিউ মডেলটিকেই বিজনেস পলিসি হিসেবে নিয়েছেন। প্রয়োজনে বিদেশের ট্যাক্সির মাথায় যেমন সুদৃশ্য এলইডি ডিসপ্লে স্ক্রিন লাগানো থাকে তেমনি এখানেও সেটা লাগানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্যাসেঞ্জারের মোবাইলেও সময়ে সময়ে ফুটে উঠবে বিভিন্ন সংস্থার বিজ্ঞাপন। এবং এটাই রেভেনিউ মডেল। আর যাত্রীরা পাচ্ছেন হাইপার লোকাল ইনফরমেশন। আপনার ডাইনে বাঁয়ে কোথায় কী আছে তার হদিস। যত এগোবেন তত পাবেন তথ্য। দোকানপাট থেকে হাসপাতাল ওষুধের দোকান, থানা, প্রয়োজনীয় সব তথ্য দেওয়া সম্ভব হবে ওই অ্যাপের মারফত। ফলে কলকাতাকে স্মার্ট সিটিতে বদলে দেবে টাইগার অ্যাপ। বদল আসবে মান্ধাতার আমলের এই হলুদ ট্যাক্সির হাত ধরেই।

শুধু কি হলুদ ট্যাক্সি?

TYGR এই অ্যাপটির মারফত আপনি আক্ষরিক অর্থেই যেকোনও যানবাহন পেতে পারেন। আপনার নাগালে কী কী আছে সেই সব অপশনই দেখিয়ে দেবে এই অ্যাপ। প্রাথমিক ভাবে শুধু হলুদ ট্যাক্সির কথা মাথায় রেখেই অ্যাপটি তৈরি করা হয়। কিন্তু যাত্রী পরিষেবার প্রয়োজনীয়তার তাগিদে পরিকল্পনায় ঢুকেছে, দূরপাল্লায় যাওয়ার গাড়ি, প্রাইভেট ট্যাক্সি, বাইক এমনকি বাসও। কলকাতায় তৈরি হওয়া এই অ্যাপটি শুধু কলকাতায় সীমাবদ্ধ থাকবে না। খুব শিগগিরই দেশের অন্য শহরগুলিতেও ছড়িয়ে পড়বে। এমনকি বিদেশের বেশ কয়েকটি শহরের মেয়রের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। রীতিমত উষ্ণ অভ্যর্থনাও পেয়েছেন দীপাঞ্জন আদিত্যরা।

সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ী আদিত্যর জন্ম কলকাতায়। ভারতে ট্রান্সপোর্টের ব্যবসা আছে। সেই সুবাদেই কলকাতায় ফেরা। কলকাতার ট্যাক্সির এই সঙ্কটের দিনে নস্টালজিয়ার হলুদ ট্যাক্সিকে সহযোগিতা করার প্রাথমিক ইচ্ছেটা আসে ওঁর মাথাতেই। সঙ্গে পেয়ে যান আরেক কলকাতার ছেলে দীপাঞ্জনকে। দীপাঞ্জনের কথা আগেও পড়েছেন। YIBEAL এর সিইও এবং বিনিয়োগকারী দীপাঞ্জনও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরাম ছেড়ে এই শহরের টানেই ফিরেছেন কলকাতায়। দুজনের ব্যবসা শুরু করার এই শহরই প্যাশন পয়েন্ট।

পায়ে পড়ি বাঘ মামা কোরনাকো রাগ, মামা –তুমি যে এ ঘরে কেতা জানত?... গোছের কাকুতি মিনতি করার সময় আসছে ওলা উবের-এর। জেনে রাখুন বাংলার বাঘই কিন্তু রাস্তা শাসন করবে। আপনিও শুনতে পাবেন সেই ব্যাঘ্র হুঙ্কার। বাঘের পিঠে চড়েই গুপি-বাঘা এবার অফিস যাবে। রোজ।