সূর্যের মত বাঁচার মন্ত্র

সূর্যের মত বাঁচার মন্ত্র

Sunday January 03, 2016,

4 min Read

কেউ জীবনে কোটিপতি হতেই পারবেন এমন কোনও কথা নেই। অর্থবান হওয়াই সাফল্যের একমাত্র মাপকাঠি নয়। তবে কোটিপতি তাঁরাই হন যাঁরা জীবনে চলার পথে বেশকিছু অভ্যাসকে সঙ্গী করে নেন। পণ্ডিত ও সফল মানুষদের সঙ্গে কথা বলে এমনই কিছু অভ্যাস বর্ণনার চেষ্টা করছে ইয়োর স্টোরি।

- প্রতিদিন এমন লোকজনের আশপাশে থাকার অভ্যাস করা উচিত যাঁরা তোমাকে ভালবাসে, তোমার প্রতি সহানুভুতিশীল। এ অভ্যাস ধীরে ধীরে রপ্ত হয়ে ‌যায়। একজন বনশাই মাস্টার জানেন গাছকে ওয়ার্ক অফ আর্টের পর্যায়ে উন্নিত করতে ডালপালা কতটা বাড়লে কেটে দিতে হয়।

image


‌- যা তোমার পক্ষে ক্ষতিকর সেগুলো এড়িয়ে চল। হাসপাতালের বেড বা কবরে চিরশয্যা কাউকে বড়লোক করতে পারেনি।

- রাগ হলে বা মানসিক চাপে থাকলে তা থেকে মুক্তি পেতে এমন কিছু খোঁজ যা তোমায় আনন্দ দেয়। তবে সবার আগে এটা বোঝা জরুরি যে তোমার রাগ হচ্ছে বা তুমি মানসিক চাপে আছ।

- ‘লিমিটলেস’ সিনেমায় নায়ক এমন একটা ট্যাবলেট খেতেন ‌যা খেলে তাঁর মস্তিষ্ক সুপারম্যানের মত কাজ করত। প্রতিদিন ১০টি করে নতুন নতুন আইডিয়া লেখা চালিয়ে ‌যাও। এটা তোমার মস্তিষ্কের জন্য ওই ট্যাবলেটের কাজ করবে। ছ’মাস কর। সুফল হাতে নাতে বুঝতে পারবে।

- বহু মানুষের জীবনে একটাই লক্ষ্য স্থির করেন এবং তার পিছনে ছুটে চলেন। কিন্তু প্রতিদিন নতুন নতুন ভাবনা ভাবা উচিত। এতে ভাবার অনুশীলন হয়।

- নিরন্তর দোষারোপ করা, নালিশ করা বা সব কথার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়ার অভ্যাস সময়ের অপচয়।

- বিশ্বের অন্যতম ধনী ওয়ারেন বাফেটের ৫/২৫ নীতি বহুল প্রচলিত। বাফেটের পরামর্শ, কেউ জীবনে কী কী করতে চায় তার ২৫টির একটি তালিকা প্রস্তুত করা উচিত। এবার সবদিক বিবেচনা করে এর মধ্যে থেকে ৫টি চূড়ান্ত করতে হবে। এই ৫টি করণীয় লক্ষ্য নিয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে বাকি ২০টা ভুলে ‌যাওয়া জরুরি। জীবনে ‌যতদিন বাঁচবে ওই ২০টা নিয়ে আর কখনও চিন্তা করা চলবে না। নাহলে ওই ২০টা তার অনেকটা সময় নষ্ট করে দেবে। যে সময়টা আসলে তার বাছাই ৫টা করণীয় কাজের সময় থেকেই বাদ ‌যাবে।

- শুধু এখনকার কাজ এখনই করই একমাত্র মন্ত্র নয়। সব কাজের একটা ফলো আপ বা অনুসরণ পদ্ধতি থাকা উচিত। ধরা যাক কয়েকজনের সঙ্গে সামনের দিন বৈঠক রয়েছে। এই বৈঠক কীভাবে এগোবে তা নিয়ে একটা স্পষ্ট ধারণা থাকা উচিত। এককথায় সবদিকে নজর থাকা এবং আগাম করণীয় পদক্ষেপ ভাবা গুরুত্বপূর্ণ।

- তুমি যে ঘরে রয়েছ, সে ঘরে উপস্থিত সবচেয়ে বুদ্ধিমান মানুষটির পাশেপাশে থাক। তার কাজ নিয়ে প্রশ্ন না তুলে মুখ বুজে কেবল সে কী করছে সেদিকে নজর রাখ। এতে আখেরে নিজের ভাল হয়। এটা একটা ভাল অভ্যাস।

- যে কাজটা করতে ভালবাস সেটা প্রত্যেকদিন করার অভ্যাস কর। লিখতে ভাল লাগলে প্রত্যেকদিন লেখা উচিত। খেলতে ভাল লাগলে প্রত্যেকদিন সময় বার করে খেলা উচিত।

- প্রশ্ন করার অভ্যেস থাকা উচিত। প্রখ্যাত সিনেমা প্রযোজক ব্রায়ান গ্রেজার নিজের পরিচয় দিয়ে অনেককে ফোন করতেন। আর মনে আসা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতেন। এভাবে তিনি একদিন রন হাওয়ার্ডের সঙ্গে মিলে ইমাজিন এন্টারটেনমেন্ট তৈরি করেন।

- ধরা যাক একটি ছেলে বা মেয়ে ভাল টেনিস খেলে। সে ভাল সার্ভও করে। সার্ভে কখনও ভুলভ্রান্তি হয়না। কিন্তু সার্ভ ঠিক রাখতে এক হাল্কাভাবে করে যে তা প্রতিপক্ষ খুব সহজেই ফেরত পাঠাতে পারে। এবার ওই ছেলে বা মেয়েটিকে তার প্রশিক্ষক গতিতে সার্ভ করতে বললেন। কী হবে? তার লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়া শুরু হবে। কিন্তু সে শিখবে কোথায় ভুল হচ্ছে। এই ভুল হতে হতেই সে একদিন সঠিক এবং জোড়াল সার্ভ শুরু করে দেবে। তার সার্ভ একদিন না একদিন ঠিক হবেই।

- সকলের ঘুমের দরকার। আট থেকে ন‍ঘণ্টা ঘুম ভাল। ঘুম থেকে ওঠার পর মস্তিষ্ক পাঁচ ঘণ্টা প‌র্যন্ত ভুল ভাল কাজ করে। দুপুরের দিকে একটা ১০-১৫ মিনিটের চোখ বোজা মস্তিষ্কের কর্ম ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। তাই যাঁরা বলেন দিনে চার পাঁচ ঘণ্টা ঘুমোন, তাঁদের কথায় কান না দেওয়াই ভাল।

- না বলার ক্ষমতাও থাকা জরুরি। এটাও একটা অভ্যাস।

- যা করতে চাও প্রত্যেক দিন তার সঙ্গ রাখা উচিত। অল্প হোক, তবু প্রত্যেকদিন তার সংস্পর্শটা দরকার। হয়তো প্রথম প্রথম সে কাজে কিছুই হবে না। শুধুই ব্যর্থতা ছায়ার মত সঙ্গে সঙ্গে ঘুরে বেড়াবে। কিন্তু একদিন না একদিন সাফল্য আসবেই। শুধু ওই সংস্পর্শে থাকার অভ্যাসটা ত্যাগ করলে চলবে না।

- রাতারাতি সফল হওয়া মানে কোনও কিছুর পিছনে অন্তত ২০টা বছর দেওয়া। তবেই আসে সেই কাঙ্খিত রাতারাতি সাফল্য। কিন্তু এই সাফল্য ছোঁয়ার আগে অনেক ছোট ছোট সাফল্য জীবন ছুঁয়ে যায়। সেই ক্ষুদ্র সাফল্যগুলোকে উদযাপন করতে শেখা উচিত। এই উদযাপনগুলো অন্তিম লক্ষ্য ছোঁয়ার উৎসাহকে অনেক বাড়িয়ে দেবে।

- সাফল্যের জন্য ভালবাসা জিনিসটা খুব জরুরি। যেমন ধরা যাক কেউ কাউকে পছন্দ করে না। কিন্তু অপছন্দ সত্ত্বেও তার ভাল চায়, আবার মৃত্যু পথযাত্রী কাউকে কোনও কিছু না ভেবে ভালবাসা, কাউকে ভালবাসলে তার কথা শোনা, তাকে সাহায্য করা, এমনভাবে ভালবাসার হাজারো উদাহরণ আছে। মূল কথা হল ভালবাসাকে ভুললে চলবে না।

- সঠিক জীবনের অন্যতম মন্ত্র হল এখনকার কাজ এখনই করা। এ অভ্যাসের বিকল্প নেই।

সবশেষে নিজেকে এই অনুমতি দেওয়া উচিত তুমি সবসময় সঠিক নাও হতে পার। এই অনুমতি দেওয়া উচিত তুমি সবার পছন্দের নাও হতে পার। এই অনুমতি দেওয়া উচিত তুমি সবসময় শান্তিতে নাও থাকতে পার। কিন্ত পণ্ডিতদের মতে, একটা কথা ঠিক যে এই অভ্যাসগুলোকে জীবনে চলার পথে সঙ্গী করতে পারলে তুমি একজন মানুষ হতে পারবে। সেই মানুষ যে শুধু একটা আলোর রেখার মত বাঁচে না, বাঁচে একটা গোটা সূর্যের মত।