কলকাতার শুরুয়াতি ক্রিজে পেসার উমেশ যাদব

কলকাতার শুরুয়াতি ক্রিজে পেসার উমেশ যাদব

Wednesday September 23, 2015,

3 min Read

বলুন তো ভারতীয় দলের পেসার উমেশ যাদবের সঙ্গে কলকাতার কী সম্পর্ক? যদি বলেন ক্রিকেট, তাহলে বুঝতে হবে আপনার ধারনার সঙ্গে উমেশের ভাবনার তফাৎ শত যোজন। ঠিক উত্তরটা শুনবেন? একটা স্টার্টআপ, ‘ফ্যশানোভ’। 

কলকাতার এই স্টার্টআপই ২৭ বছরের ভারতীয় পেসারকে জুড়ে দিয়েছে কলাকাতার সঙ্গে। কীভাবে? কলকাতার অনলাইন ফ্যাশন স্টার্টআপ ‘ফ্যাশনোভ’এ অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর ভারতীয় দলের এই পেসার। এবং এটাই কোনও স্টার্টআপে উমেশের প্রথম বিনিয়োগ।

image


কী এই ‘ফ্যাশনোভ’? ‘ফ্যাশনোভ’ হল হাইপারলোকাল ফ্যাশন পোর্টাল। ২০১৪র অক্টোবরে লঞ্চ হয়। স্টার্টআপ ফ্যাশানোভ ডটকম মূলত ফ্যাশন বুটিকের খোঁজ দেয়, পণ্য এবং মান নিয়ে পর্যালোচনা করে, সেই অনুযায়ী রেটিং দেয় এবং সর্বোপরি একটি বাণিজ্যিক পোর্টাল। MICA আহমেদাবাদের দুই প্রাক্তনী শরদকুমার ও তণুশ্রী খাণ্ডলওয়ালের যৌথ উদ্যোগে গড়া ‘ফ্যাশনোভ’ আদতে ক্রেতাদের স্থানীয় ফ্যাশন স্টোর ও বুটিকের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেয়।

কিন্তু বিনিয়োগের জন্য কলকাতাকে কেন বাছলেন উমেশ? তাঁর উত্তর, ‘‘ফ্যাশনোভ’ মূলত অসংগঠিত খুচরো ফ্যাশন বাজারকে সংগঠিত করে, অনলাইন এবং অফলাইন শপিংয়ের মধ্যে ফাঁকটুকুতে সেতুর কাজ করে দেয়। দায়িত্ববোধ, দক্ষতা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল উৎসাহ, যেটা আমি এই টিমের মধ্যে দেখেছি। তাই দেরি করিনি। বিনিয়োগের জন্য রাজি হয়ে গেলাম’। তাঁর সংযোজন, অফলাইন স্টোরগুলি অর্থাৎ বিভিন্ন বাজারে যে দোকান রয়েছে তাতে অনলাইন অর্থাৎ ই-শপিং সুবিধা জুড়ে দিয়ে ভারতীয় ফ্যাশনের বিশাল খুচরো বাজার তৈরি করার ভালো সুযোগ রয়েছে কলকাতায়।

‘ফ্যাশনোভ’এর দাবি, তারাই প্রথম সংস্থা যারা এই পরিষেবা দিচ্ছে। ইতিমধ্যে সংস্থাটি বিটা ভার্সান (পরীক্ষামূলক সফটওয়ার তৈরি করে সংস্থার বাইরে কয়েকজন ইউজারকে দেওয়া হয়) তৈরি করে নিয়েছে। আটশোর বেশি বুটিকে তিনটি শহর -কলকাতা, মুম্বই, দিল্লিতে ডাটাগুলি ঘুরছে।

image


‘ফ্যাশনোভ’ শহরের ফ্যাশান বুটিকগুলির তালিকা তৈরি করে, তাদের প্রডাক্ট সম্পর্কে তথ্য দেয়। আর এই কাজটা করতে গিয়ে আরও একটা সুবিধা করে দেয়। সেটা হচ্ছে পণ্য এবং দোকান বা বুটিকের অনলাইন ভিসিবিলিটি (দৃশ্যমানতা)বাড়ায়। ফ্যাশন সচেতন মানুষ এই ওয়েবসাইট থেকে জানতে পারবেন তাঁর শহরের মধ্যে বাড়ির কাছের ফ্যাশন স্টোর এবং পণ্যের খোঁজ কোথায় পাওয়া যাবে। ঠিক উলটো দিক থেকে ফ্যাশন স্টোর বা বুটিকগুলির জন্য অনলাইনে ভালো বিজ্ঞাপনও বটে। অনলাইন পোর্টালটি ফ্যাশন সম্পর্কিত নানা প্রশ্নের উত্তর যেমন দেবে, তেমনি দোকান বা বুটিকে যাওয়ার রাস্তাও বাতলে দেবে। এক ঢিলে দুই পাখি। পোর্টালের মাধ্যমেই পণ্য এবং ডিজাইনগুলি সারা বিশ্বের কাছে পরিচিতিও পাবে।

ফান্ডিং নিয়ে তণুশ্রী জানান, ‘বিনিয়োগটা এমন একটা সময় এসেছিল যখন ‘ফ্যাশনোভ’ অ্যাপ লঞ্চ করতে চলেছিল এবং ওয়েবসাইটটাও খোলনলচে পালটে নতুন করে নিয়ে আসার প্রস্তুতি চলছিল’। ওয়েবসাইটিটকে আরও তথ্যসমৃদ্ধ করার চেষ্টা করছিলেন দুই উদ্যোক্তা। তাঁর সংযোজন, ‘পুঁজিটা প্রডাক্ট ডেভেলপমেন্টে ব্যবহার করা হবে বিশেষ করে নতুন অ্যাপ এবং নতুন করে ওয়েবসাইট লঞ্চের ক্ষেত্রে। তাছাড়া, তিনটি শহরে বিশ্বাসযোগ্য এবং তথ্যে পরিপূর্ণ ডাটা সংগ্রহের খরচও কম নয়। তাতেও অনেকটা পুঁজির দরকার হবে’।

টিম ফ্যাশনোভ

টিম ফ্যাশনোভ


১৮ থেকে ৪০, এই বয়সী পুরুষ-মহিলা সবাই এই ওয়বসাইটের টার্গেটগ্রুপ, যাদের অনলাইন সার্ফ করে জামা কাপড় কেনাই পছন্দ। ‘ফ্যাশনোভ’ আরও একটা জিনিসের দিকে লক্ষ্য রাখে। সেটা হল, যারা নতুন শহরে যান এবং শহরে সবচেয়ে ভালো শপিংয়ের জায়গা বা দোকানের খোঁজ করেন তাঁদের সুলুক দেয়। ক্রেতারা যাতে ভালো শপিং প্ল্যান করতে পারেন এবং সঠিক দামে সবচেয়ে ভলো জিনিস পান সেই সাহায্যটুকুই করাই এই ভেঞ্চারের লক্ষ্য।

স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম (বাস্তুতন্ত্র) নিয়ে বলতে গিয়ে ক্রিকেটার উমেশ বলেন, মেধার বিকাশ এবং প্রকাশের জন্য প্রযুক্তির বাড়বাড়ন্ত একটা প্ল্যাটফর্ম (মঞ্চ) তৈরি করে দিয়েছে। ভারত হল অপূরণীয় ক্ষমতায় ভরা তরুণ জাতি। ফলে স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমও সেভাবেই বাড়তে বাধ্য।

কিছু দিন যাবত ভারতীয় ক্রিকেট স্টার্টআপ ইন্ডাস্ট্রিতে উৎসাহ দেখাচ্ছে। এই বছরই এপ্রিলে আরও এক ক্রিকেটার যুবরাজ সিং তাঁর প্রথম বিনিয়োগ করছেন YouWeCan ভেঞ্চারে। YouWeCan স্টার্টআপ সুন্দর ও ভালো থাকার উপায় বলে দেয়। ক্রিকেট এবং স্টার্টআপের মধ্যে সম্পর্কের নতুন ধারা তৈরি করে দেয় Vyomo । Paytm আর BCCI এর মধ্যে ৩২ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি হয়েছে। আগামী চার বছর ভারতের সব দ্বিপাক্ষিক সিরিজগুলি স্পন্সর করবে Paytm । যাইহোক, উমেশ, যুবরাজদের হাত ধরে স্টার্টআপ এবং ক্রিকেট এই দুই ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে শক্ত বাঁধন তৈরি হয়েছে। তাঁদের দেখানো আলোর রেখা ভবিষ্যতে আরও অনেক ক্রিকেটারকে এই পথে চলার, স্টার্টআপগুলিকে বিনিয়োগের মাধ্যমে উৎসাহিত করার প্রবণতা তৈরি করে দেবে। সেই আশায় রইল কলকাতাও।