পদাতিক লীগে ফুটবল খেলবেন যৌনকর্মীর সন্তান

পদাতিক লীগে ফুটবল খেলবেন যৌনকর্মীর সন্তান

Friday March 04, 2016,

3 min Read

যৌনকর্মীদের সন্তান-সন্ততির জীবনে অজস্র সমস্যা থাকে। মা যৌনকর্মী হওয়ায় যৌনকর্মীদের সন্তানরা প্রায়শই হীনমন্যতায় ভোগেন। যদিও বর্তমানে এই রাজ্যের যৌনকর্মীদের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে। সন্তানকে লেখাপড়া শেখানোর গুরুত্ব উপলব্ধি করেছেন পেশাদার যৌনকর্মীরা। মায়েরা চান, তাঁদের সন্তান সমাজের মূলস্রোতের মানুষ হিসাবে নিজেদের গড়ে তুলুক। এ ব্যাপারে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি এগিয়ে এসেছে। যৌনকর্মীদের সন্তান-সন্ততির উন্নতি ও মানসিক বিকাশের জন্যে তাঁদের পড়াশোনা শেখানো-সহ স্বেচ্ছাসেবীদের তরফে একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

image


দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি যৌনকর্মীদের সন্তানদের জন্যে এবার এক অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে। দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির ছাতার তলায় কাজ করছে দুর্বার স্পোর্টস একাডেমি। আজ থেকে দুবছর আগে এই স্পোর্টস একাডেমি গড়া হয়েছে। এবছর একাডেমির উদ্যোগে চালু করা হয়েছে যৌনকর্মীদের সন্তানদের নিয়ে ফুটবল প্রতিযোগিতা।

দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির চিফ অ্যাডভাইজার ডক্টর স্মরজিত জানা জানিয়েছেন, এই প্রতিযোগিতায় মোট ১৬টি দল অংশগ্রহণ করেছে। টুর্নামেন্টের খেলাগুলি চলছে কালীঘাট, দেশবন্ধু পার্ক ও বারুইপুর, বসিরহাট, কালনা, শেওড়াফুলি, ডোমজুড়-সহ নানা এলাকার মাঠে। এর মধ্যে বারুইপুরের মাঠটি দুর্বারের নিজস্ব। মাঠটি লম্বায় ১০০গজের মতো। আর চওড়ায় ৭৫ থেকে ৮০ গজের ভিতর।

image


ফুটবল লীগের নাম রাখা হয়েছে দুর্বার পদাতিক লীগ। স্মরজিতবাবু জানালেন, দুর্বার পদাতিক লীগে যৌনকর্মীদের সন্তানরা ছাড়াও খেলছে ফুটপাথবাসী বা সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী র সন্তান-সন্ততিরা। ওঁদের সামাজিক মানুষ হিসাবে গড়ে তুলে সমাজের মূলস্রোতে ফেরানোটাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দেওয়া হিসাব অনুসারে, সারা পশ্চিমবঙ্গে প্রায় দেড় লক্ষ মেয়ে পেশাদার যৌনকর্মী। কলকাতা-সহ রাজ্যের সর্বত্রই তাঁরা ছড়িয়ে আছেন। পদাতিক ফুটবল লীগের খেলাগুলি দেখতে আসা মানুষের সাড়াও মিলেছে ভালোই। জানা গেল, প্রতিটি খেলা দেখছেন অন্ততপক্ষে কয়েকশো ফুটবলভক্ত। সেইসঙ্গে বাহবা দিচ্ছেন ফুটবল প্রতিভাদের।

স্বামী বিবেকানন্দ একদা বলেছিলেন, গীতা পাঠের চেয়ে ফুটবল খেলা ভালো। এ কথা মাথায় রেখে দুর্বার স্পোর্টস একাডেমিটি গড়ে তোলা হয়েছে। আইএফএ-তে দুর্বার ইয়ং অ্যাথলেটিক ক্লাব থার্ড ডিভিশনে খেলছে। ডক্টর জানার কথায়, ওঁরা যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে বছর খানেকের মধ্যে সেকেন্ড ডিভিশনে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে। আমরা সুপ্ত প্রতিভাগুলি বিকশিত করার চেষ্টা করছি।

image


দুর্বার পদাতিক লীগে অংশ নিয়েছে মোট ১৬টি দল। এই দলগুলি চালানোর ক্ষেত্রেও অভিনব এক উদ্যোগ নিয়েছে দুর্বার স্পোর্টস একাডেমি। জানা গেল, দলগুলির প্রতিটিই কেউ না কেউ কিনেছেন। এক-একটি দলের জন্য দাম পড়েছে ৭ হাজার টাকা। ওই টাকাটা অনুশীলন, খেলতে আসার খরচ-খরচা অথবা টিফিন খরচ বাবদ ব্যয় করা হচ্ছে। লীগে জয়ী দলকে একটি ট্রফি ও নগদ ১০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। সেইসঙ্গে রানার্স টিমও পাবে একটি ট্রফি এবং নগদ ৫ হাজার টাকা।

image


দুর্বার স্পোর্টস একাডেমির কর্তারা জানালেন, এই খরচ উঠে আসছে শুভানুধ্যায়ীদের মাধ্যমে। ওঁরাই এক-একটি ফুটবল টিম কিনেছেন। টিমের ক্রেতাদের ভিতর আছেন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সরকারি অফিসার থেকে শুরু করে সমাজের সর্বস্তরের সহৃদয় মানুষ। সারা বছর ধরেই দুর্বারের সদস্য যৌনকর্মীদের সন্তানদের খেলাধূলায় প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা চালু আছে। একজন অন্ততপক্ষে ৫০ থেকে ৬০জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। টুর্নামেন্ট চালু করার পরে ওই ফুটবলারদের ভিতর থেকে বাছাই করা হয়েছে প্রতিভাবান বা সম্ভাবনাময়দের।

সংশ্লিষ্ট যৌনপল্লিগুলির নামে দলের নাম রাখা হয়েছে। যেমন, কালীঘাট, বৌবাজার, সোনাগাছি, দমদম, খিদিরপুর, জোড়াবাগান, রামবাগান-শেঠবাগান ইত্যাদি। মোট ১৬টি টিমের ভিতর তিনটি টিমে যৌনকর্মীদের সন্তানরা ছাড়াও খেলছে সমাজের প্রান্তিক‌ জনগোষ্ঠীর সন্তানরা। যেমন, আমশাশোল টিমে যৌনকর্মীদের সন্তানদের পাশাপাশি খেলোয়ার হিসাবে আছে অতিদরিদ্র আদিবাসী পরিবারের সন্তানরা।

একটি ফুটবল টিমের ক্রেতা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী জানালেন, সমাজের কিছু উপকার করার জন্যেই ৭ হাজার টাকা দিয়ে টিমটা কিনেছি। কে বলতে পারে, ওঁদেরই মধ্যে কেউ কেউ একদিন ফুটবলার হিসাবে নাম করবে না? ইতিমধ্যে ১৭টি ম্যাচ হয়ে গিয়েছে। কোয়ার্টার ফাইনাল উঠেবে আটটি টিম। আর সেমিফাইনালে যাবে চারটি টিম। নিজেদের সন্তানকে এধরনের উদ্যোগের মধ্যে দিয়ে ‌সুযোগ পেতে দেখে খুশি যৌনকর্মীরাও। তাঁদের সকলেরই আশা, একদিন আমাদের সন্তানরা এই সমাজে মানুষের মতো মাথা তুলে বাঁচবে।