সাইকেলে ‘কামাল’, ৩২ দিনে ঘুরে ফেললেন ৩২ জেলা
Saturday September 12, 2015,
4 min Read
মনের জোর এক অসাধারণ জ্বালানি। চালিকা শক্তি। লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য একেবারে শেষ বিন্দু দিয়ে কিছু করার মরিয়া চেষ্টা আর লক্ষ্যের প্রতি অগাধ বিশ্বাস-বৃথা যায় না। কামাল হাজিজ সেরকমই একজন। ‘যখনই আমার কাছে ৫০০০০ টাকা মতো জমে যায়, ছটফট করতে থাকি। টাকাটা দিয়ে কী করা যায়’, বলেন কামাল। এর মধ্যে তিনি তামিলনাড়ুর ৩২টি জেলা সাইকেলে ঘুরছেন। ২০১৫র ২৪মে পর্যন্ত ২৮টি জেলা ঘোরা হয়ে গিয়েছে। ভাবা যায়! মাত্র ২০ দিনে ২৪০০ কিলোমিটার সাইকেলে! যার মানে দাঁড়ায় প্রতিদিন ১২০ কিলোমিটার। ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার হিসেবে ধরলে প্রতিদিন নাগাড়ে ৮ ঘণ্টা সাইকেল চালিয়েছেন। তামিলনাড়ুতে মে-র গরমে এই কাজ করতে কতটা মানসিক জোর দরকার ভাবতে পারেন?
একজায়গায় স্থির থাকতে পারেন না। বেশ কিছুদিন ধরে ভাবছিলেন কামাল কী করা যায়। অবশেষে শেকড় খুঁজে পেলেন তাঁর স্টার্টআপ ওএমআর-প্যাডেল ম্যানেজার-এ। চেন্নাইয়ে সাইকেলে চড়ে জিনিস ডেলিভারি দেওয়ার লোক তেমন পাওয়া যায় না। সেই শূণ্যস্থান পূরণ করতে কাজটা শুরু করেছিলেন কামাল। চেন্নাইয়ের আইটি হাব ওএমআর থেকে শুরু, ত্রিবানমিউর থেকে সিরুসেরি পর্যন্ত। ‘আমি একাই কাজটা শুরু করি। কী কী করতে হবে জেনে নিতাম। তারপর সাইকেলে চেপে ঘুরে ঘুরে নানা নথি, পেনড্রাইভ আরও অনেক কিছু তুলতাম, আবার পৌঁছে দিতাম। ওএমআর প্যাডেল ম্যানেজারের ইউএসপি হল বলার ১ ঘণ্টার মধ্যে ডেলিভারি পেয়ে যাবেন’, কামাল বলেন। তিন মাস পর কামালের মনে হল, এভাবে চলবে না। তাঁকে অন্য ব্যবসার কথা ভাবতে হল। এবার বিজ্ঞাপনের বিলবোর্ড নিয়ে ঘোরা শুরু হল। কিছুদিন ঠিক চলল।তবে একা হাতে একটা সংস্থার সব কাজ চালানো সহজ ছিল না। কাহিল হয়ে পড়তেন কামাল। দিনে What’s on! কনটেন্ট রাইটার হিসেবে কাজ করে তারপর এই ধকল সহ্য করতে পারলেন না। ‘কনটেন্ট রাইটিং ছাড়াও বাকি কাজটা করতে গিয়ে প্রতিদিন আমাকে ৬০ থেকে ১০০ কিলোমিটার সাইকেল চালাতে হত। তাছাড়া ২০১৪ য় গোটা চেন্নাই জুড়ে ১০০০০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়েছি। অভিযানে বেরনোর আইডিয়াটা আরও শক্তভাবে গেড়ে বসল ইয়োরস্টোরির উৎসাহমূলক আর্টিকেলগুলি পড়ে পড়ে’,জানান কামাল।
এই অভিযানের কোনও নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ছিল না।‘চেন্নাইয়ের ভেলাচেরি থেকে ২০১৫র ৩মে আমি যাত্রা শুরু করি। ২০১৫র ২৭ মে শেষ হয়। আমার আগে এই পথ কারও মাথায় আসেনি। আমিই প্রথম , সাইকেলে চড়ে যার ভারতের কোনও একটা রাজ্যের সব জেলা ঘোরা হয়ে গিয়েছে। তামিলনাড়ুর ৩২টি জেলা ঘুরেছি’। অভিযানের উল্লেখযোগ্য দিকগুলি তুলে ধরতে গিয়ে কামাল বলেন, এই ভ্রমণের একটা মজার দিক হল, শুধু হাইওয়ে ধরে সাইকেলে চেপে জেলার গা ঘেঁষে চলে যাওয়া নয়, প্রত্যন্ত গ্রামের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলতে চলতে স্থানীয় মানুষ, তাদের আচার, খাদ্যাভ্যাস বোঝার সুযোগ মেলে। ‘মন থেকে একজন চলিচ্চত্রকার হিসেবে সেইসব অভিজ্ঞতা নিয়ে ভ্রমণের তথ্যচিত্রও তৈরি হচ্ছে’, জানান কামাল।
নড়াচড়া দুসাধ্য একটা ছোট্ট পরিসরে কামালের বাস। এই অভিযানগুলি তাঁকে বুক ভরে নিশ্বাস নেওয়ার সুযোগ দেয়। কীভাবে উৎসাহ পান কামাল? বলেন, ‘গৌরভ সিদ্ধার্থ, কার্তিক ভার্মা, মার্ক ব্যুমন্টের মতো ব্যাক্তিত্ব যারা সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক ক্ষমতার অনেক বাইরে গিয়ে সাইকেল চালিয়েছেন তাঁদের কাছ থেক আমি প্রেরণা পাই। বাকিটা আমার ভেতরকার অনুসন্ধিৎসা’। এবং ব্যাপারটাকে কামাল যেভাবে ব্যাখ্যা করেন তা হল-এই সবে শুরু। তাঁর চোখ বিছানো অনেক দূর পর্যন্ত। কন্যাকুমারী থেকে কুছের রান, সেখান থেকে শ্রীনগর হয়ে আইজল পেরিয়ে হায়দরাবাদ থেকে চেন্নাই। এতটা লম্বা পথ। তবু তিনি আত্মবিশ্বাসী। ‘এই যাত্রাটা হবেই। এবং সেটা যে আমি করতে পারি, প্রমাণ করে দেব। তাই চ্যালেঞ্জটা নিলাম’, বলেন আত্মবিশ্বাসী কামাল।
কামাল নিজের রাজ্য নিয়ে গর্বিত। তিনি বলেন, কত মানুষ সাইকেলে চেপে দেশ ভ্রমণে বেরোয়, বিশ্ব ভ্রমণে যায়। কিন্তু নিজের রাজ্যটা ঘুরে দেখার কথা ভাবে না। তিনি প্রমাণ করে দিতে চান, তামিলনাড়ুতে অদ্ভুত সুন্দর সব জায়গা রয়েছে যেখানে যাওয়া যেতে পারে। ‘ছোটবেলা থেকে এমন সবকিছু করতে চেয়েছি যা অন্যরা করে না। লয়োলা কলেজে পড়ার সময় তাই ভিসুয়াল কমিউনিকেশন সাবজেক্ট হিসেবে বেছেছিলাম। সেখান থেকে আমার স্বপ্নের ক্যারিয়ার শুরু করি। সবসময় অভিযান এবং চলচ্চিত্র নির্মাণ-এই দুটিকে মিশিয়ে ফেলার ঝোঁক ছিল। সেটাই কাজ দিয়েছে’, জানান কামাল।
দেখতে গেলে কামালের এই অভিযান পরিবর্তনের জন্য একটা পদক্ষেপ। ‘আনেক কিছুর বদল ঘটাতে চাই। হতে পারে নতুন কিছু উদ্ভাবনের আদলে, হতে পারে মানসিকতার পরিবর্তন ঘটিয়ে অথবা আমার শুরুয়াদ প্রথম প্যান ইন্ডিয়া ফিল্ম-চার্ট আনচার্টেড টেরিটোরিস’, জানান কামাল। তামিলনাড়ু জুড়ে তাঁর সাইকেল অভিযান শেষ হয়েছে। নতুন কিছু শুরু করার আগে কদিন বিশ্রাম নিতে চান। একগুচ্ছ পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। হতে পারে ভারতের নানা শহরের চিত্র তুলে ধরতে ভিডিও কনটেন্ট মার্কেটিং কোম্পানি খুলবেন অথবা বিজ্ঞাপন সংস্থা বা ডায়াবেটিক সংক্রান্ত কোনও পণ্য সংস্থা খুলবেন। প্রত্যেকটা আইডিয়া একে অপরের বিপরীত মেরুতে অবস্থান করে যদিও এবং প্রত্যেকটা মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। কিন্তু কামালের উৎসাহে ঘাটতি নেই। অদূর ভবিষ্যতের কথা বলতে গিয়ে জানান, ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভ্রমণের তথ্যচিত্রটি প্রকাশ করার প্ল্যান রয়েছে। অর্থের জোর নেই ততটা, তবে মনের জোর আছে। আর আছে আমার পরিবার আর বন্ধুদের অকৃপণ সহযোগিতা’।