স্যুপ, স্যালাডের হোম ডেলিভারি, দিল্লিতে রমরমা হ্যাপি হাক্কার

স্যুপ, স্যালাডের হোম ডেলিভারি, দিল্লিতে রমরমা হ্যাপি হাক্কার

Friday December 18, 2015,

3 min Read

সপ্তাহান্তের একমাত্র ছুটি। অলস দিন কাটানোর কথা ভাবছেন? পিৎজা বার্গার নয়, ইচ্ছা করছে লাঞ্চে খাবেন স্বাস্থ্যকর স্যালাড আর স্যুপ। কিন্তু হাতা-খুন্তি না নেড়ে বাড়িতে বসে এমন ইচ্ছাপূরণ একমাত্র আলাদীনের জিনির পক্ষেই সম্ভব।

মোটেই না। এমন ভাবনা বদলে দেবে হ্যাপি হাক্কা। চার বন্ধু গৌতম ঘাই, আরুশি বইশ, পুনিত সাইনি এবং চান্দের মোহন প্রচলিত এই ট্রেন্ড বদলের ঝুঁকি নিলেন। প্রাথমিকভাবে হ্যাপি হাক্কা পুনিত, গৌতম আর চান্দেরের মস্তিষ্কপ্রসূত। পরে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন আরুশি।

কিন্তু হ্যাপি হাক্কার ইউএসপি কী হবে? ”আমরা দেখলাম যে ভারতীয় বাজারে একটা শূন্যতা রয়েছে। এখানে ডেলিভারির সুবিধা সম্পন্ন কোনও চাইনিজ ফুড জয়েন্ট নেই।ঠিক করলাম, সুলভ দামে চাইনিজ খাবার পরিবেশন করে এমন বিকল্পের সন্ধান দেওয়াই আমাদের ইউএসপি হবে।” বলছিলেন গৌতম ।

ঠিক হল, একটি সেন্ট্রাল হটলাইন নম্বরের সাহায্যে খাবারের অর্ডার নেওয়া হবে। মোবাইল অ্যাপের সাহায্যেও অর্ডার দিতে পারবেন গ্রাহকরা।


image


অর্ডার দেওয়া থেকে ডেলিভারি নেওয়া

গৌতম জানালেন, হ্যাপি হাক্কাকে এমন একটি কুইক সার্ভিস রেস্টুরেন্ট বা কিউএসআর হিসেবে তুলে ধরতে চেয়েছি যেখানে ডেলিভারির বিষয়টি অগ্রাধিকার পাবে। বাড়ি হোক বা অফিস—চাইনিজ ফ্লেভার মিস করতে হবে না আপনাকে। শুধু খাবার সরবরাহ করাই নয়, সঙ্গে কাটা-চামচ, টিস্যু থাকবে যাতে মিটিংয়ে যাওয়ার পথে গাড়িতেও খাবার খেতে পারেন। আবার বাড়িতেও থালা-বাটি ধোয়ার ঝক্কি পোহাতে না হয়।

প্যাকেজিংয়ের পাশাপাশি খাবারের গুণগত মানের দিকেও বিশেষ গুরুত্ব দেয় হ্যাপি হাক্কা। খাবার পুরোপুরি প্রিজারভেটিভ মুক্ত এবং অর্ডার পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তৈরি করে দেওয়া হয়। গৌতম জানালেন, “আমরা প্রচুর শাকসবজি ব্যবহার করি রান্নায়।আর তেলের পরিমাণও যৎসামান্য রাখার চেষ্টা করি। মেনুতে বেশ কিছু হেলদি স্যুপ আর স্যালাড আছে। এমনকী, চাইলে ব্রাউন রাইসও নিতে পারেন গ্রাহক।” খাবারের দাম শুরু ৫১ টাকা থেকে, সর্বোচ্চ দাম ২৮৯ টাকা। লাঞ্চ বা ডিনারের ক্ষেত্রে মিল পাবেন ৯৯ টাকায়। দুজনের জন্য মিল পড়বে ৪০০ টাকা। অর্থাৎ সাধ্যের মধ্যেই সাধপূরণ হবে ভোজনরসিকদের।

হ্যাপি হাক্কার প্রসার

হ্যাপি হাক্কা প্রতিদিন গড়ে ৪০০ থেকে ৪৫০ টি অর্ডার পায়।যার মধ্যে ৮০ শতাংশই স্থায়ী খদ্দের। সংস্থার নিজস্ব কিচেনেই খাবার তৈরি হয়। সেখান থেকে আউটলেটে সরবরাহ করা হয়। এরপর সংশ্লিষ্ট আউটলেটই গ্রাহকের কাছে অর্ডার পৌঁছে দেয়। ফলে অনেকটাই সাশ্রয় হয়। দিল্লিতে এমন পরিষেবা এই প্রথম। হ্যাপি হাক্কার মতোই পরিষেবা পাওয়া যায় মুম্বইয়ের নুডল প্লে এবং চারকোল বিরিয়ানি-তে। গৌতমের দাবি, খাবার অর্ডার দেওয়া থেকে ডেলিভারি—গোটা প্রক্রিয়াটি এতটাই সহজ যে গ্রাহকদের অভ্যেসে পরিণত হয় হ্য়াপি হাক্কা।

ম্যানেজমেন্টের নেপথ্যে

হ্যাপি হাক্কার ম্যানেজমেন্ট যাঁরা সামলান, তাঁদের প্রত্যেকেই বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে এসেছেন। যেমন, গৌতম। ২০০৩ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত এসএসসিবিএস থেকে ইনফরমেশন টেকনোলজিতে স্নাতক।ইউরোপের বৃহত্তম ট্র্যাভেল সংস্থা ই-বুকার্সে কাজ করেছেন। জেনিভার রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদেও কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। উপদেষ্টা পদে ছিলেন আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ংয়ে।

হ্যাপি হাক্কার সেলস এবং অপারেশনসের দায়িত্বে থাকা আরুশি ইঞ্জিনিয়র হিসেবে পেশাজীবন শুরু করেন। এক বছর কাজ করেছেন একটি নির্মাণ সংস্থায়।

হ্যাপি হাক্কা মূলত যাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত সেই পুনিত কর্মজীবন শুরু করেছিলেন এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং দিয়ে। এরপর তিনি চলে যা‌ন অ্যাডভার্টাইজিংয়ে। ২০১১ সালে কনট্র্যাক্ট অ্যাডভার্টাইজিংয়ে থাকাকালীন কিছুদিন কাজ করেছিলেন দক্ষিণ ভারতীয় খাবারের কিউএসআর চেন-এ। সেখানেই তাঁর মাথায় হ্যাপি হাক্কার আইডিয়া আসে। বর্তমানে সংস্থার মার্কেটিং এবং স্ট্র্যাটেজি সামলান পুনিত।

চান্দের আবার হ্যাপি হাক্কার আর্থিক দিকটি দেখভাল করেন। অপারেশনস এবং ফিন্যান্স সেক্টরে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। তিন বছর কাজ করেছেন সাবওয়েতে।

শুধু দিল্লিতেই ৫টি স্টোর রয়েছে হ্যাপি হাক্কার। গোটা দেশে আগামী ২ বছরে ৫০ টি আউটলেট খোলার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের।“আমাদের মূল লক্ষ্য গোটা দেশে ২০০টির বেশি আউটলেট খোলা। দিল্লির পাশাপাশি, জয়পুর, আগ্রা, চণ্ডীগড়, লুধিয়ানা, জলন্ধর এবং মিরাটে ছড়িয়ে দিতে চাই হ্যাপি হাক্কাকে।”

ইওরস্টোরির মত

কিউএসআর মডেলকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার ক্ষেত্রে পথপ্রদর্শক যদি কেউ হয়, তা হল ডমিনোজ পিৎজা।পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যায় ৭৫০শতাংশ ব্যবসা বেড়েছে ডমিনোজ‍-এর। শুধু খাবারের গুণগত মানই তাদের ইউএসপি নয়, প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে পিৎজা সরবরাহের প্রক্রিয়াকে বিপ্লবের পর্যায় নিয়ে গেছে তারা। খাবারের অর্ডার দেওয়া, ট্র্যাক করা, দাম মেটানো এবং অর্ডার হাতে পাওয়া --- এই গোটা পদ্ধতিটি এতটাই মসৃণ যে গ্রাহককে কোনওরকম বেগ পেতে হয় না।ভারতের ক্ষেত্রেও এই একই নিয়ম প্রযোজ্য। ফলে হ্যাপি হাক্কাকেও সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছতে হলে এই সমস্ত দিকেই নজর রাখতে হবে।

লেখক সিন্ধু কাশ্যপ

অনুবাদ শিল্পী চক্রবর্তী