প্রযুক্তিক্ষেত্রে নজির গড়ছেন অভিজিৎ

প্রযুক্তিক্ষেত্রে নজির গড়ছেন অভিজিৎ

Tuesday October 06, 2015,

5 min Read

'প্রয়োজনের থেকেও বেশী সহজ' - শুনতে অবাক লাগলেও এই বার্তা সঙ্গে করেই এগিয়ে চলেছে 'লুনা আর্গোনমিক্স'। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা সচরাচর যে ধরণের সংস্থার মুখোমুখি হয়ে থাকি তার চেয়ে অনেকটাই আলাদা এই 'লুনা আর্গোনমিক্স'। আজকের প্রযুক্তিনির্ভর দুনিয়ায় নিত্যনতুন সুযোগসুবিধা এসেই চলেছে। এই প্রযুক্তিকেই মানুষের ব্যবহারের জন্য আরও সহজ করে তোলার কাজ করছে এই সংস্থা। 'Panini keypad' এবং 'CleverTexting'-এর মতো সুবিধা মানুযের কাছে পৌঁছে দিয়েছে 'লুনা আর্গোনমিক্স' । এই সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ ভট্টাচার্য পেশায় টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ার এবং স্বভাবগতভাবে একজন উৎসাহী প্রযুক্তিবিদ। ২০০৮ সালে অভিজিৎ এবং তাঁর টিম প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নতুন কিছু করার চেষ্টা শুরু করেন। তাঁদের মূল লক্ষই ছিল প্রযুক্তি (Technology),প্রয়োগ (Application)এবং পরিষেবা(Service)র ক্ষেত্রে এদেশের মানুষ সাধারনত যেসব সমস্যার সম্মুখীন হন তা দূর করার চেষ্টা করা।

অভিজিৎ ভট্টাচার্য

অভিজিৎ ভট্টাচার্য


ব্যবসার উদ্দেশ্য

বর্তমানে মোবাইল ফোনে মেসেজ করার পরিষেবাকে সহজ করে তোলার কাজ করে চলেছে 'লুনা আর্গোনমিক্স'। ইতিমধ্যেই এই সংস্থা বাজারে এনেছে 'Panini keypad',যার সাহায্যে ভারতের এগারোটি ভাষায় sms লেখা এবং পাঠানো সম্ভব। মেসেজিংয়ের দুনিয়ায় compression অর্থাৎ সঙ্কোচন পদ্ধতি যুক্ত করে আলোড়ন ফেলেছে এই কিপ্যাড। এই পরিষেবার মাধ্যমে সহজেই একটিমাত্র মেসেজের মধ্যে অনেকগুলি শব্দ টাইপ করা যায়। এর ফলে কোনও ভারতীয় ভাষায় একটি মেসেজে যতখানি বার্তা পাঠানো সম্ভব ছিল এখন তার থেকে প্রায় তিনশো শতাংশ বেশি কথা লেখা যায়। এরই পাশাপাশি আন্ততর্জাতিক ভাষাগুলির কথা মাথায় রেখে 'CleverTexting' পরিষেবাও চালু করেছে 'লুনা আর্গোনমিক্স'। যার মধ্যে ভারতের মূল এগারোটি ভাষা ছাড়াও ইংরেজী, স্প্যানিশ, পর্তুগীজ, অ্যারাবিক, ফরাসি, রাশিয়ান, হিব্রু, স্বহিলি এবং ফিনিশভাষাকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। 'এক্ষেত্রে আমরা ভাষার পরিসংখ্যানগত হিসেব থেকে বোঝার চেষ্টা করি কোনও ভাষায় মেসেজ করতে গেলে একটি শব্দ লেখার পর ব্যবহারকারী ব্যক্তি কোন শব্দটি টাইপ করতে পারেন। এখন আর এই প্রযুক্তি কেবলমাত্র মোবাইল ফোনেই সীমাবদ্ধ নয়। কম্পিউটার, ইন্টারনেট, এটিএম, টিভি, রিমোট, সেট টপ বক্সেও এই সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে,' জানালেন অভিজিৎ ভট্টাচার্য।


সংস্থার লক্ষ্য

অভিজিৎবাবুর মতে, এই পৃথিবীতে চারশো কোটিরও বেশি মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। কিন্তু তাঁদের অধিকাংশই কোনও কিছু লেখা বা টাইপ করার জন্য ফোন ব্যবহার করেন না। এর অনেকগুলি কারণ থাকলেও ফোনে টাইপ করার পদ্ধতি খুব সহজ না হওয়া এবং অনেক ক্ষেত্রে নিজের ভাষায় টাইপের সুবিধা না থাকাই এর মূল কারণ। তাঁর সংস্থার দাবি, তাঁদের নির্মীত প্রযুক্তি এই দুটি সমস্যাকেই কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। 'একটা বিষয় স্পষ্ট, সময় যত এগোবে এবং জীবনযাত্রা যত দ্রূত হবে, মানুষের এধরণের প্রযুক্তির উপর নির্ভরতা ততই বাড়বে। তা সে মেসেজ পাঠানো, ইন্টারনেট ব্যবহার করাই হোক বা অন্য কোনও প্রয়োজন। সেই কারণেই আমাদের প্রযুক্তি গোটা বিশ্বের কাজে লাগবে। সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে সহজভাবে লেখার পরিষেবা পৌঁছে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য,' বললেন অভিজিৎ ভট্টাচার্য। তিনি আরও বলেন,'আমরা ন্যাশনাল আইডি কার্ড প্রজেক্ট-এর কাছেও আমাদের এই প্রযুক্তির কথা তুলে ধরেছি। এর ফলে ডিজিটাল পদ্ধতিতেও আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করা যাবে। এমনকী কম্পিউটারে এই পদ্ধতি ব্যবহারের জন্য আমরা মাইক্রোসফ্টকেও এর বিষয়ে জানিয়েছি।'


ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

ব্যবহারকীরেদর প্রত্যাশা পূরণ করতে চান অভিজিৎ। খুব অল্প সময়ের মধ্যে 'লুনা আর্গোনমিক্স' প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এমন সব উপকরণ এনে হাজির করেছে যা এখন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ ব্যবহার করছেন। 'আমরা চেষ্টা করব যাতে ভবিষ্যতেও আমাদের সামনে আসা সব সুযোগ দায়িত্বের সঙ্গে কাজে লাগাতে পারি। কেবলমাত্র সঠিক পথে এগোতে পারলেই আমরা প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ভারতের কোনও আবিস্কারকে সফলভাবে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে পারব। সেটা সঠিকভাবে করতে পারলে তবেই মানুষের কাছে দ্রুত গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে পারবে এই সংস্থা। আমাদের আরবের প্রোডাক্ট ইতিমধ্যেই বেশ জনপ্রিয়। আন্তর্জাতিক ভাষা সম্পর্কিত কয়েকটি জিনিসওধীরে ধীরে সকলের পছন্দের তালিকায় উঠে আসছে। '


কেন তাঁরা আলাদা?

এই প্রথম কোনও ভারতীয় সংস্থা ব্যবহারকারী প্রযুক্তির ক্ষেত্রে কাজ করছে। একেবারে অন্য ধরণের একটি সমস্যাকে বেছে নিয়ে সফলভাবে তার সমাধানের পথে এগোচ্ছেন তাঁরা। কোনও জিনিস প্রস্তুত করার পর সেটিকে পরীক্ষা করে ব্যবহারযোগ্য এবং সুবিধা প্রদানকারী হিসেবে নিশচিত প্রমাণ করতে পারলে তবেই তা বিক্রির পথে তাঁরা এগোন বলে দাবি অভিজিৎ ভট্টাচার্যর।


উদ্যোগপতি অভিজিতের সফর

একসময় ভারতীয় সেনায় সিগনালার-এর কাজ করতেন তিনি। উদ্যোগপতি হয়ে ওঠার চ্যালেঞ্জ অভিজিৎকে নাড়া দিয়ে গিয়েছিল। নিজের কিছু গড়ে তোলা, নিজের সঞ্চিত অর্থ কাজে লাগানোর মধ্যে যে স্বকীয়তা তা তাঁকে উৎসাহ দেয়। প্রথমদিকে একেবারে একা হাতে সব কিছুর বন্দোবস্ত করলেও ধীরে ধীরে তাঁর সংস্যার জন্য বিনিয়োগকারীদেরকেও পাশে পেয়েছন অভিজিৎ ভট্টাচার্য। 'নতুন কিছু করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ সময়। দীর্ঘদিনের পড়াশুনো, একেবারে অজানা কিছু তৈরী করতে বারবার চেষ্টা, ব্যর্থতার আশংকা এসবকিছু পেরিয়ে এগনো কঠিন। তবে আমার অতীত অভিজ্ঞতাই আমাকে এগিয় যেতে সাহায্য করেছে। আমি একজন সফল শেয়ারওয়্যার ডেভেলপার ছিলাম। তাই আমি জানতাম, কোনও পরিকল্পনা করে তা নিয়ে এগিয়ে যেতে পারলে সফলভাবে সম্পূর্ণ করতেও পারব,' বললেন অভিজিৎবাবু।


স্বীকৃতি

২০০৯ সালে CleverTexting-কে মোবাইল ফোনের সর্বপ্রথম আর্গোনমিক কীপ্যাডের স্বীকৃতি দিয়েছে The Ergonomist Society, UK। তাঁদের জার্নালে ২০০৯ সালের মার্চ মাসে এটাই ছিল কভার স্টোরি। Microsoft Bizspark programme-এও আমন্ত্রিত হয়েছিলেন তাঁরা।

Nokia Innovatios-২০০৯ এ Emerging Markets and Mobile Necessities বিভাগে সেরা দশ আবিস্কারের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছিল 'লুনা আর্গোনমিক্স'-এর Paninikeypad।


অভিজিতের বার্তা

অভিজিৎ ভট্টাচার্যর মতে ভারতে নিজে থেকে প্রযুক্তির মূল্যায়ণ করতে পারার ক্ষমতা খুব কমসংখ্যক মানুষের মধ্যেই আছে। 'প্রযুক্তির ক্ষেত্রে রিসার্চের কথা ভাবলে এবং তা নিয়ে এগোতে চাইলে স্কুলে পড়াকালীনই সেভাবে প্রস্তুত হওয়া উচিত। ধৈর্য এবং একাগ্রতার সঙ্গে সব বিষয় জানতে এবং বুঝতে চাইতে হবে। নম্বর নয়, জ্ঞান অর্জনের জন্য পড়াশুনো করতে হবে। দুটো সম্পূর্ণ আলাদা জিনিসকে একত্র করে কীভাবে তৃতীয় কোনও জিনিস তৈরী করা যায়, সেই চেষ্টা করতে হবে। তাহলেই সাফল্যের দরজা খুলে যাবে।' মনে করেন অভিজিৎ ভট্টাচার্য।

ইওর স্টোরি অভিজিৎ ভট্টাচার্যর সাফল্য কামনা করে। আমরা আশা করি তাঁর সাফল্যের দরজা সারা জীবন এভাবেই খোলা থাকবে।