৭৪৫ দিন পর পাসপোর্ট জিতলেন বিজয়

৭৪৫ দিন পর পাসপোর্ট জিতলেন বিজয়

Thursday December 24, 2015,

3 min Read

অপরাধই বটে! দীর্ঘদিনের নিয়ম, যদিও অলিখিত, তা বলে মানবেন না? শাস্তিও তাই বেশ কড়াই। রীতিমতো খুইয়ে যেতে বসেছিলেন নাগরিকত্ব! কলকাতার বিজয় নাহাটা অবশ্য তাতে দমবার পাত্র নন। গুনে গুনে ৭৪৫ দিন লড়াই করে আদায় করলেন অধিকার!

image


কী হয়েছিল বিজয়ের? আর দশজন ভারতীয়র মতোই পাসপোর্টের আবেদন করেছিলেন। নিয়ম মেনে যা যা করণীয় সবটাই হয়েছে। আবেদনপত্রের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, অফিসারদের প্রশ্ন, তার উত্তর-সব হয়েছে। ওই সময় পাসপোর্ট হাতে পাওয়াটা বেশ জরুরি ছিল। যাতে তাড়াতাড়ি কাজ এগোয় তাই আশপাশের লোকজনের কথা শুনে দুয়েকজন কেরানি গোছের লোককে দুপয়সা দিতেই হয়েছিল। ফর্ম জমা দেওয়ার পর ভেরিফিকেশনের পালা। অফিসার বাড়ি এলেন তথ্য যাচাইয়ে। যা যাকাগজপত্র দেখতে চাইলেন সবই দেখিয়েছিলেন সেন্ট জেভিয়ার্সের এই প্রাক্তনী। এই পর্যন্ত সব লিখিত নিয়মেই চলছিল। এবার বাঁহাতি রেয়াজ অলিখিত নিয়ম!

কী সেই নিয়ম? ভেরিফিকেশনের জন্য অফিসাররা এলে নাকি ‘চায়-পানি’ (ঘুষ) দিতে হয়। না হলে যাবতীয় সত্য বচন মিথ্যে হয়ে যায়। কাগজপত্র দেখিয়ে আপনি যাই প্রমাণ দিন না কেন অফিসারের পকেট না ভরলে নাকি ‘পাসপোর্ট’ বৈতরণী পার হওয়া অসাধ্য। বিজয়ের ক্ষেত্রেও তাই হল। এমনিতেই পাসপোর্ট অফিসের কেরানিদের ঘুষ দিতে বাধ্য হয়ে অপরাধবোধে ভুগছিলেন। 

অনেকের ‘সদুপদেশ’ সত্বেও বেঁকে বসলেন যুবক। ভেরিফিকেশন অফিসারকে ঘুষ দিলেন না। 

ফল যা হওয়ার তাই হল। পাসপোর্ট পাওয়া তো দূর কী বাত, নিজের নাগরিকত্বও খোয়াতে বসেছিলেন! ‘আমার কী দোষ ছিল? আমি ভেরিফিকেশন অফিসারকে ঘুষ দিইনি...নিজের ক্ষমতা দেখালেন সেই অফিসার। আমার সব কাগজপত্র দেখানোর পরও তিনি পরিষ্কার করে কিছু বলছিলেন না। কেউ কেউ বলছিল, ঘুষ দেওয়াটা নাকি অলিখিত নিয়ম। কেউ কেউ আরও এককাঠি এগিয়ে বলেছিল ‘ভালোয় ভালোয় পাসপোর্ট পেতে হলে গান্ধিগিরি দেখানোর বা সিংঘম সাজার দরকার নেই’। কিন্তু আমিও ঠিক করে নিই, একবার ঘুষ দিয়ে অপরাধ করেছি, এবার আর নয়’।

লড়াইয়ে নামলেন কলকাতার যুবক। এক দাদার কথা শুনে সরাসরি মেলই করে বসলেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে। শুধু তাই নয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং, প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজুজুকেও। একই মেল সিসি করে পাঠিয়ে দিলেন। সঙ্গে সব ডকুমেন্ট এবং সেই অফিসারের নাম। ৬ ডিসেম্বর ২০১৫-য় মেল পাঠান বিজয়। ঠিক তার দশ দিন পর ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের বাড়িতে পৌঁছে যায় পাসপোর্ট!

৭৪৫ দিনের একটা লড়াই শেষ করেন বিজয়। বিদেশ মন্ত্রক, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ভোলেননি। লড়াইয়ে জিতে পরিচিতদের প্রশংসাও পেয়েছেন। আর বীর বিজয়ের হুঙ্কার, 

‘আম আদমী সোতা হুয়া শের হ্যায়...উঙ্গলি মাত কর...জাগ গ্যায়া তো চির ফাড় দেগা...’

বিজয় লড়াই করার সাহস দেখিয়েছেন, তাই জিতেছেন। কিন্তু পাসপোর্ট তো সব নাগরিকের অধিকার। তার জন্য অফিসারকে ঘুষ কেন? কেনই বা এই অলিখিত নিয়ম? ঘুষ না দিলে নাগরিক নয় এমন তকমা পাওয়ার সম্ভাবনা বলা ভালো ভয় দেখানো...কেন? কেন? কেন? বিজয়ের জয় তুলে দিয়েছে এমন হাজারো প্রশ্ন। আর আমরা সাধারণ নাগরিক আশায় থাকি, মৌরসি পাট্টা একদিন ভাঙবেই। যেমন খানিকটা হলেও ‘হেয়ার লাইন ফ্র্যাকচার’ ধরাতে পেরেছেন বিজয়!