দারিদ্র হজম হয়নি, তাই হজমি গুলির ব্যবসায় নাসিম

দারিদ্র হজম হয়নি, তাই হজমি গুলির ব্যবসায় নাসিম

Friday February 19, 2016,

2 min Read

নদিয়ার কৃষ্ণনগরের নাসিম মল্লিক এখন এলাকার ছেলেমেয়েদের কাছে রোল মডেল। এম এ প্রথম বর্ষের ছাত্র। কিন্তু জানেন কি মাধ্যমিক পাশ করার পর পয়সার অভাবে ওঁর লেখাপড়া বন্ধ হতে বসেছিল। কথায় আছে না, ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়। ঠিক তাই! অদম্য এই ছেলেটা ওই ছোট্ট বয়সে ব্যবসা শুরু করে। দারিদ্র হজম হচ্ছিল না অভাবী এই মেধাবীর। তাই টেস্টি হজমিগুলি তৈরি করে কপালকে কিস্তিমাত দিয়েছেন নাসিম। তাই আর পড়াশুনো বন্ধ করতে হয়নি। আর পাশাপাশি এতদিনে নসিবও পাল্টে গিয়েছে।

image


আর পাঁচ জনের মতো কৃষ্ণনগরের নাসিমও স্বপ্ন দেখেছিল লেখাপড়া করে একটা ভালো চাকরি করবেন। কিন্তু দিনমজুর বাবা আকবর মল্লিকের পক্ষে ছেলের লেখাপড়ার খরচ চালানো সম্ভব হচ্ছিল না। মাধ্যমিক পাশ করার পর আর পড়াতে পারবেন না জানিয়ে দেন নাসিমের বাবা। বছর ষোলোর ছেলের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। বন্ধুরা পড়বে আর সে জমির হাল ধরবে এটা কিছুতেই হজম হচ্ছিল না। হাল ছাড়ার পাত্র ছিলেন না নাসিম। শেষ হতে যাওয়া স্বপ্নকে বাঁচাতে এমন এক ব্যবসা করতে চাইছিলেন যা দিয়ে পড়াশোনার খরচ চালিয়েও পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পারবেন। মাথায় আসে এক নতুন আইডিয়া। খাবারের শেষে অনেকেরই প্রিয় হজমিগুলি ও মুখশুদ্ধি তৈরির ব্যবসা করবে বলে ঠিক করেন। কলকাতা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসেন। বন্ধুর কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা ধার নিয়ে নেমে পড়েন ব্যবসায়। প্রতিষ্ঠানের নাম দেন ‘নাসিম ফুড প্রোডাক্ট’। প্রথমে নিজের বাড়িতেই বিভিন্ন ধরনের হজমিগুলি তৈরি করতেন। আমলকী, আদা, জোয়ান, আনারদানা, আম, হরিতকী, আমচুর পাউডার এসব দিয়ে নিত্য নতুন স্বাদের হজমিগুলি আর মুখশুদ্ধি তৈরি করতেন। প্রথমে স্থানীয় বাজারে নিজেই ফেরি করতেন। তারপর ধীরে ধীরে দোকান ধরলেন। এখন কলকাতার বাজারে প্রচুর চাহিদা নাসিমের ফুড প্রোডাক্টের। একা আর সামাল দিতে পারেন না। তাই কয়েকজন কর্মীকে নিয়ে এই কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।

বাবাও আর দিন মজুরি করেন না। চাষের কাজ ছেড়ে দিয়ে ছেলের ব্যবসায় সাহায্য করছেন। সংসারের অভাবও আর নেই। ধার তো কবেই শোধ দিয়েছেন। পাশাপাশি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করেছেন এলাকার কয়েকজন যুবকের। যতই ব্যস্ততা থাকুক পড়াশুনো বন্ধ করেননি নাসিম। কৃষ্ণনগরের ডি এল রায় কলেজে মাস্টার ডিগ্রি করছেন নাসিম। পড়াশোনার সঙ্গে সমান তালে ব্যবসাও চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর জীবনে এই দুটিই চাকা। সরকারি সাহায্য পেলে বেকারদের বিনা খরচে এই প্রোডাক্টের প্রশিক্ষণ দেওয়ারও ইচ্ছা রয়েছে তাঁর।