২০১৭ হোক দৃঢ়চিত্তের মানুষের বছর। ৫৬ ইঞ্চির পুরুষতন্ত্র নয়। কেবল সুযোগসন্ধানী নারীবাদও নয়। ২০১৭ হোক স্বচ্ছতার একটি ইউনিট। এই প্রসঙ্গে আমরা একের পর এক চরিত্রপূজা করব। যে বা যারা আমাদের প্রতিনিয়ত অনুপ্রেরণা দেন। তাদের কথা স্মরণ করব আমরা। সেই সিরিজে আজ আলোচিত হবেন জেন অস্টিন।
দৃঢ়চেতা এক লেখিকা। প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিসের জেন অস্টিন। তাঁকে নতুন করে চিনিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। কিন্তু সম্প্রতি সমালোচকরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন ব্যক্তি অস্টিনকে। নারীবাদী নাকি নারীবাদী নন, এই প্রশ্নই বড় করে উঠে আসছে। তাঁর রচিত চরিত্রের ভিতরই তিনি বিশ্ব সাহিত্যে অমর হয়ে থাকবেন। তাই চরিত্রগুলি নতুন নতুন আলোয় বিশ্লেষণ যেমন চলছে। তেমনি আবিস্কৃত হচ্ছে চরিত্রগুলির স্বাধীনচেতা রূপ।
১৭৭৫ সালে ইংল্যান্ডের হ্যাম্পশায়ারে জন্মানো জেন অস্টিন আজও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। টানা ৪২ বছর ধরে লেখালেখি করেছেন। ১৮১৩ সালে তাঁর লেখা প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস সেই অনবদ্য বই যার কথা বারবার ঘুরে ফিরে আসে নানান আলোচনায়, বিশ্লেষণে। নারীবাদী হিসেবে প্রকাশিত হন জেন। তারপর আর মাত্র চার বছর বেঁচেছিলেন এই লেখিকা।
আধুনিক নারীবাদীরা জেনের লেখালেখির ভিতর যে নারীবাদ রয়েছে, তাকে তেমন গুরুত্ব দিতে রাজি নন। বরং তাঁদের কাছে এটা এক ধরনের ক্লাসিক ফিমেল ফ্যান্টাসি। কিন্তু লয়েড ডব্লুউ ব্রাউনের মতো অনেকেই জেনের লেখালেখি সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন, বিংশ শতাব্দীতে যে নারীবাদী ঘরানার উত্থান তার সূত্রটি ছিল অষ্টাদশ শতকে লেখা জেনের সাহিত্যে। এ প্রসঙ্গে জেনের পক্ষে প্রমাণ হিসাবে সমালোচকরা উপস্থাপন করছেন জেনের উপন্যাসের চরিত্র কিংবা উপন্যাসের উপজীব্যকে।
এক্ষেত্রে উল্লেখ করা যেতে পারে ওঁর সৃষ্ট একটি চরিত্রের কথা। তাঁর নাম এলিজাবেথ বেনেট। যুক্তিবাদী চরিত্রের মেয়ে এলিজাবেথকে দিয়ে জেন দেখিয়েছেন এলিজাবেথের স্বাধীন নারী সত্তাটিকে। অর্থের প্রলোভন যাকে ভোলাতে পারেনি। এলিজাবেথ নিজের আর্থিক নিরাপত্তার জন্যে বিয়ে করতে অস্বীকার করেছিল মিস্টার ডার্সির মতো ধনাঢ্য ব্যক্তিকে।
এমন দৃঢ় চরিত্র জেনের সমগ্র সাহিত্য জুড়েই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এছাড়া, জেন তাঁর কলমে ফুটিয়ে তুলেছিলেন পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে একজন লেখিকা হিসাবে তাঁর প্রতিবাদও। সে হিসাবে বলা যায়, নারীবাদের বীজটি সাহিত্যে রোপণ করার প্রধান কৃতিত্ব তাঁরই। জেনের জীবনের আর একটি দিক এক্ষেত্রে উল্লেখ করার মতন। তিনি নিজেও অবিবাহিত ছিলেন। তিনি নিজেও কখনও আপোষ করেননি।আধুনিককালের সমালোচকরা বলছেন, জেন তাঁর লেখালেখিতে আর একটি জিনিস স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন। তা হল ব্যক্তি স্বাধীনতা বা ব্যক্তিগত চয়নের অধিকার। জেন অস্টেনের উপন্যাসগুলির লাইন উদ্ধৃত করে এখন সেটাই দেখাচ্ছেন সমালোচকেরা। ইওরস্টোরির পাতায় জেনকে নিয়ে লেখার অবকাশ তৈরি হওয়ার প্রধান কারণ আমরাও চাই দৃঢ়চিত্ত জেগে উঠুক।