জিদই লক্ষ্যপূরণের চাবিকাঠি

জিদই লক্ষ্যপূরণের চাবিকাঠি

Monday December 21, 2015,

4 min Read

ভারতে একটি সুন্দর ভবিষ্যত কর্মজীবন হিসাবে সিভিল সার্ভিসের কোনও তুলনা নেই। সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চাকরি পাওয়া ওয়ার্ল্ড কাপ জেতার চেয়ে কম কিছু নয়। তবে এই জয়ের সবটাই ব্যক্তিগত কৃ‌তিত্ব। প্রায় এক বছর ধরে চলা এই পরীক্ষার বিভিন্ন স্তরে লাখ লাখ পরীক্ষার্থী অনেক স্বপ্ন নিয়ে লড়াই করেন। তারমধ্যে যাঁরা সর্বশেষ স্তর, অর্থাৎ ইন্টারভিউ পর্যন্ত পৌঁছতে পারেন, তাঁরা আইএএস বা ইন্ডিয়ান অ্যডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসে চাকরি পান। বাকি উত্তীর্ণরা পান আইপিএস বা আইএফএস-এর মত পদগুলিতে চাকরি।

কাশ্মীরের মেয়ে সংস্কৃতি জৈন দু’বার এই ইউপিএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও ইন্টারভিউ পর্যন্ত পৌঁছতে পারেন নি। ফলে ফের চেষ্টা। আর তৃতীয়বারে অভিষ্ট পূরণ। অবশেষে আইএএস পাস করলেন সংস্কৃতি। ভারতের মধ্যে একাদশ স্থান অধিকার করেন তিনি।

image


সংস্কৃতির বাব-মা দু’জনেই ভারতীয় বায়ুসেনার কর্মী। তাঁদের চাকরি সূত্রে বারবার বদলি হতে হত।ফলে স্কুল জীবনে সংস্কৃতিকে ছ’বার স্কুল বদলাতে হয়েছে। তাও আবার ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে। গোয়ার বিআইটিএসয়ের স্নাতক সংস্কৃতির জীবনে তাঁর কলেজ জীবনই ছিল কোনও একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাঁর সবচেয়ে বেশি সময় কাটানো। তবে গোয়ার পিলানির বিআইটিএস থেকে পাশ করা তাঁর কাছে একটা বড় প্রাপ্তি বলেই মনে করেন সংস্কৃতি। আজ সংস্কৃতি যেখানে পৌঁছেছেন সেখানে পৌঁছতে সাহায্য করেছিল বিআইটিএস।

image


স্নাতক হওয়ার পর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খতিয়ে দেখার চেষ্টা করেন সংস্কৃতি। ২০১১-১২ তে লেজিসলেটিভ অ্যাসিসট্যান্ট টু মেম্বার অফ পার্লামেন্ট হিসাবে পিআরএস লেজিসলেটিভ রিসার্চের কাজ শুরু করেন তিনি। ২০১২ র শেষে রিসার্চ অ্যাসিসট্যান্ট হিসাবে দিল্লির সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চেও যোগ দেন সংস্কৃতি। এরপর ২০১৪ সালের শেষে যোগা দেন ইন্ডিয়ান রেভিনিউ সার্ভিসে। সংস্কৃতি বর্তমানে ন্যাশনাল অ্যাকাদেমি অফ ডাইরেক্ট ট্যাক্সেস থেকে ট্রেনিং নিচ্ছেন। তাঁর মতে, এটা একটা অদ্ভুত চাকরি। সরকারি যাবতীয় কাজের জন্য অর্থের যোগাড় করাই এই চাকরির প্রধান ও একমাত্র লক্ষ্য। এলএএমপি ফেলোশিপ নিয়ে কাজ শেষ করার পর ভারতের পলিসি তৈরি করার প্রতি আকৃষ্ট হন সংস্কৃতি। কিন্তু এই কাজ করার জন্য আইএএস হওয়া জরুরি ছিল।

সংস্কৃতি ছিলেন সেই পরীক্ষার্থী যিনি যতবার ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসেছেন ততবারই পাশ করেছেন। কিন্তু তাঁর পছন্দের চাকরির জন্য পরপর তিনবার পরীক্ষা দেন তিনি। আর তৃতীয়বারে লক্ষ্যপূরণও করেন। তাঁর মতে, ইউপিএসসি হল এমন একটি পরীক্ষা যেখানে অর্থনীতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, ইতিহাস, ভূগোল, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মত বিভিন্ন বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকা জরুরি। প্রতিটি বিষয়ের ওপর সম্পূর্ণ দখল থাকলে ইউপিএসসি পরীক্ষার জন্য তৈরি হওয়ার ভীত তৈরি হয়ে যায়। কোনও সিদ্ধান্ত প্রযোগের জন্য প্রয়োজনীয় মানসিক শক্তি ও বলিষ্ট চরিত্রেরও কড়া পরীক্ষার মুখে পড়তে হয় এখানে। সংস্কৃতির সাফ কথা, এই পরীক্ষা সফল হওয়ার জন্য দরকার প্রয়োজনীয় উদ্যম। তবে তাঁর এমনও মনে হয়না যে তৈরি হওয়ার সময় জীবনের বাকি দিকগুলোকে থমকে দেওয়ার কোনও প্রয়োজন আছে। এটা সকলের ব্যক্তিগত বিষয় যে সে এই কঠিন পরিশ্রমের সময়টাকে কীভাবে বার করে নেবে।

image


সংস্কৃতি সাফল্যের শিখরে পৌঁছেছেন তাঁর কঠিন পরিশ্রম ও অধ্যাবসায়ের হাত ধরে। একমাত্র তাঁর ঐচ্ছিক বিষয় দর্শনের জন্য কোচিংয়ে ভর্তি হয়েছিলেন সংস্কৃতি। তার বাইরে বছরভর চলা এই পরীক্ষার জন্য ধৈর্য ধরার ক্ষমতাও একটা বড় বিষয় বলে মনে করেন তিনি। তাছাড়া এমনও হতে পারে সারাবছর পরিশ্রম করেও কোনও কারণে এই পরীক্ষায় ব্যর্থ হতে হল কাউকে। তাই প্রথম থেকেই তিনি দ্বিতীয় পরিকল্পনা বা প্ল্যান বি তৈরি রেখেছিলেন। অর্থাৎ পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হলে তিনি কী করবেন। এতে তাঁর ওপর চাপ যেমন কমেছিল তেমনই পরীক্ষার খাতায় অনেকটাই শান্ত মনে লিখতে পেরেছিলেন তিনি। পাশাপাশি তাঁর বিশ্বাস যে ইউপিএসসি পরীক্ষা কারও জীবনের সাফল্য বা ব্যর্থতার মাপকাঠি হতে পারেনা।

প্রথম যখন আইএএসে উত্তীর্ণ হলেন সেই অনুভূতিটা সংস্কৃতির কাছে দারুণ উপভোগ্য ব্যপার ছিল। কিন্তু পরদিনই তিনি অনুভব করলেন আগামী বছরগুলোতে তাঁর জন্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অপেক্ষা করে আছে।

ইউপিএসসিতে মহিলাদের সাফল্য সংস্কৃতিকে আনন্দ দেয়। পাশাপাশি তাঁর বিশ্বাস ভারতে লিঙ্গ বিভাজন আছে। আর এই অবস্থার পরিবর্তনে পুরুষ, মহিলা সকলকেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। দায়িত্ব নিতে হবে। সংস্কৃতির মতে, তাঁর মত মহিলারা, যাঁরা সেই অর্থে লিঙ্গ বিভাজনের শিকার নন, তাঁদের অনেক বেশি করে সোচ্চার হতে হবে। সোচ্চার হতে হবে তাঁদের জন্য যাঁরা এখনও বিভাজনের শিকার। সংস্কৃতির বিশ্বাস এরজন্য নারী শিক্ষা অত্যন্ত জরুরি। কারণ শিক্ষা যে কোনও জীবনকে বদলে দিতে পারে। শিক্ষা সমাজ সচেতনতার পাঠ দেয় আর দেশের নতুন প্রজন্মের চোখ খুলে দেয়। যাতে তারা সমাজকে পরিবর্তন করতে পারেন।

আপাতত নিজের কাজ সম্বন্ধে মুশৌরিতে সরকারি প্রশিক্ষণে ব্যস্ত সংস্কৃতি জৈন। তাঁর বিশ্বাস এখনই বিশাল কিছু চাওয়ার সময় তাঁর আসেনি। বরং নিজের কাজ সম্বন্ধে সম্যক ধারণা তৈরিই এখন তাঁর প্রথম ও প্রধান কাজ। প্রশিক্ষণ চলাকালীন নিজের কাজ নিয়ে ভীত শক্ত করাই তাঁর আপাত লক্ষ্য। যাতে আগামী দিনে তিনি তাঁর দেশ ও দেশের জনগণকে তাঁর সামর্থের সর্বোচ্চ পরিষেবা প্রদান করতে পারেন।