আমাদের দেশে ক্রমশ স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে। আর সেই সচেতনতা বৃদ্ধিতে পথ দেখাচ্ছে বেঙ্গালুরু। অন্তত এমনটাই মনে করেন মালেশ টিংগালি। অনলাইনে অর্গানিক প্রোডাক্ট বিক্রির সংস্থা পূর্ণা অর্গানিকের কর্ণধার মালেশের মতে, "আমাদের একটা বড় অংশ অতিমাত্রার কীটনাশকযুক্ত সব্জি খাচ্ছিলাম। তারাই আবার পুরনো পথে ফিরছি।"
খাবারের উপর প্রতিটি মানুষের নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত। এই ভাবনা থেকেই ২০০৮ সালে পথ চলা শুরু করেছিল পূর্ণা অর্গানিক। মানুষকে সব্জি উৎপাদনে উৎসাহ দানকেই প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসাবে বেছে নিয়েছিল তারা। শহুরে ব্যস্ত মানুষরা যাতে সহজেই সব্জি উৎপন্ন করতে পারেন, সেই কারণে তারা তৈরি করেছে প্ল্যান্টার বক্স। মালেশ জানালেন, বাড়ির যেকোনও জায়গায় এই বক্স রেখে সব্জি চাষ করা যেতে পারে। নির্দিষ্ট সময় অন্তর গাছগুলি যাতে জল পায়, সেদিকে নজর রাখতে ওই বাক্সে জল দেওয়ার স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পাশাপাশি অতি বেগুনি রশ্মির হাত থেকে গাছকে বাঁচাতে বিশেষ ব্যবস্থাও করা থাকে প্ল্যান্টার বক্সে। আর এভাবেই গত সাত বছরে দশ হাজার মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছেন তাঁরা।
অনলাইনেই পূর্ণা অর্গানিকের সমস্ত জিনিস পাওয়া যায়। এমনকী ব্যবহার সংক্রান্ত নির্দেশিকা ও তার ভিডিও দেওয়া থাকে ওয়েবসাইটে। মালেশ বললেন, "আমরা গ্রাহকদের অনলাইনে প্রশিক্ষণ দিই। ই-গার্ডেনিংয়ের মাধ্যমে দেশের যে কোনও প্রান্ত থেকে ঘরে বসে প্রশিক্ষণ নেওয়া যায়।" গত বছরে ৫০০ জন এভাবে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বলে মালেশ জানালেন। তাছাড়া প্রয়োজনে বাড়িতে গিয়েও প্রশিক্ষণ দেওয়ারও ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া ইকো-প্যাল ও গার্ডেন কানেক্ট নামে দু'টি দল তৈরি করা হয়েছে। এই দু'টি দলের কাজ, স্কুল ও কর্পোরেট সেক্টরে জৈব সারের ব্যবহার সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া। ইকো-প্যাল ইতিমধ্যে তিন হাজার পড়ুয়াকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। অন্যদিকে গার্ডেন কানেক্ট বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার হাজার খানেক কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
পূর্ণা অর্গানিক তাদের পরিষেবার বিস্তার ঘটাতে শুরু করেছে। মালেশ বললেন, "প্ল্যান্টার বক্সের পর এবার আমরা জৈবিক বাগান করার পদ্ধতি, কীটনাশক জৈব সার ও বাগান তৈরির সামগ্রীও বিক্রি করছি। এছাড়া খাবার, ব্যক্তিগত ও সৌন্দর্য সংক্রান্ত সামগ্রীও বিক্রি করা হচ্ছে। গ্রাহকরা অনলাইনে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে কেনাকাটা করতে পারেন। তাছাড়া ক্যাশ অন ডেলিভারির ব্যবস্থাও রয়েছে।" মালেশের দাবি, তাঁদের প্রোডাক্ট ব্যবহার করা খুবই সহজ। প্রয়োজনে টেলিফোনে গ্রাহকদের সহায়তা করার ব্যবস্থাও রয়েছে। তবে শুধুমাত্র বেঙগালুরুতে বাড়ি গিয়ে গ্রাহকদের সহায়তা করার এই বিশেষ সুবিধা রয়েছে।
যদিও বাজারে এখন অর্গানিক প্রোডাক্ট বিক্রির আরও অনেক সংস্থা আছে। তারপরও পূর্ণা অর্গানিক অন্যদের থেকে একেবারে আলাদা বলেই দাবি করলেন মালেশ। কারণ, পূর্ণাই একমাত্র সংস্থা, যারা সংগঠিত উপায়ে পণ্য, প্রশিক্ষণ ও পরিষেবা দেয়। মালেশ বললেন, "আমরা এখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছি। প্রত্যেকের কাছে উন্নত মানের অর্গানিক প্রোডাক্ট পৌঁছে দিচ্ছি।" মালেশরা চান গোটা দেশে জৈবিক বিপ্লব ঘটাতে। যাতে সকলের কাছে সহজেই জৈবিক খাবার পৌঁছে যেতে পারে। পূর্ণা অর্গানিক এখন সেই প্রক্রিয়ার প্রাথমিক স্তরে রয়েছে বলে জানালেন মালেশ। চাষে জৈব সারের ব্যবহার এদেশে ধীরে ধীরে গতি পাচ্ছে। সেই কারণেই মালেশের গলায় শোনা গেল আশার সুর।
Related Stories
March 14, 2017
March 14, 2017
Stories by Tanmay Mukherjee