স্টার্টআপে লাগে টাকা চাঁদা তুলে দেবে জনগণ

স্টার্টআপে লাগে টাকা চাঁদা তুলে দেবে জনগণ

Tuesday January 05, 2016,

4 min Read

খুবই শোচনীয় অবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছিলেন এক সময়ের নামি নৃত্যশিল্পী তারা বালগোপাল। ৮২ বছর বয়স্ক এই শিল্পীর দুরবস্থার কথা শুনে খারাপ লাগে নিখিল সারুপের। নৃত্যশিল্পীর পাশে দাঁড়াতে উঠেপড়ে লাগলেন একটি লিগ্যাল স্টার্টআপের প্রতিষ্ঠাতা নিখিল। ক্রাউড ফান্ডিং প্ল্যাটফর্ম Ketto-র মাধ্যমে একটা ক্যাম্পেনও শুরু করে দেন। ফল মিলল হাতেনাতে। দু'দিনের মধ্যে উঠে এল তিন লক্ষ টাকা। আর যখন ক্যাম্পেন শেষ হল সংগৃহীত অর্থের পরিমাণ দাঁড়াল আট লাখ টাকারও বেশি। বালগোপালের পাশে দাঁড়িয়েছেন চারশোরও বেশি মানুষ। সবাই হাত বাড়ালে কী হয় এটা তারই একটা নমুনা।

image


ক্রাউড ফান্ডিং (জনগণের থেকে সংগৃহীত অর্থ) বিষয়টা ভারতে নতুন কিছু নয়। ধীরুভাই আম্বানির ক্ষুদ্র উদ্যোগে পাড়া-প্রতিবেশীদের অর্থের যোগান কিংবা মন্দির তৈরিতে সম্মিলিত দান, চাঁদা, হরদম দেখতে পাই। জনগণের টাকায় এরকম বহু কাজ হয়। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে শতাব্দী প্রাচীন সেই কনসেপ্টকেই এখন নতুন রূপ দিয়েছে Ketto, BitGiving কিংবা Wishberry -র মতো স্টার্টআপ।

প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরে ত্রাণের কাজ, আন্ত্রেপ্রেনারশিপ, শিল্প-সাহিত্য, পরিবেশগত বিষয়, স্কুল-কলেজ তৈরি। কিংবা বিশেষ প্রয়োজনে কোনও ব্যক্তির পাশে দাঁড়ানো। এরকম বহু ক্ষেত্রে এখন সহায়ক ভূমিকা নিচ্ছে ক্রাউড ফান্ডিং। রাস্তার পশুপাখিদের নিয়ে কাজ করা দিল্লির সংস্থা Friendicoes একটা সময় উঠে যেতে বসেছিল। সে কথা কানে যেতেই এগিয়ে আসেন পশুপ্রেমীরা। BitGiving স্টার্টআপের মাধ্যমে তাঁরা তুলে দেন ৬০ লক্ষ টাকা। যা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় তিনগুণ। BitGiving-এর সহ-প্রতিষ্ঠাত্রী ইশিতা আনন্দ বললেন,"জনগণ নিজেরাই এগিয়ে এসে জানাচ্ছেন তাঁরা কী চান, মানুষ কী চাইছে। বিদেশে দেখা যায় খেলাধুলা, প্রযুক্তিগত বিষয়ে জনগণ বেশি আগ্রহী। আমাদের দেশে সেটা বেশি দেখা যায় খেলাধুলা সংক্রান্ত বিষয়ে।" এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ

নেওয়ার জন্য ভারতের জাতীয় হকি দলকে পাঁচ লক্ষের বেশি টাকা তুলে দিতে পেরেছিল বিটগিভিং। আবার পর্বতারোহী অঞ্জুম জামশেনপা যাতে চতুর্থবার মাউন্ট এভারেস্ট জয় করতে পারেন এবং নিজের রেকর্ড ভাঙতে পারেন, সেজন্য তাঁকে ২৪ লক্ষ টাকা তুলে দিয়েছিল Catapooolt.

ফেলে আসা বছরে (২০১৫) এ রকমই বহু সহায়তা প্রদানকারী মানুষের সাক্ষী হয়েছে দেশ।Wishberry-র সহ-প্রতিষ্ঠাত্রী অংশুলিকা দুবে জানালেন, "শিল্পকলা-সাহিত্য বরাবরই পৃষ্ঠপোষকতার ওপর নির্ভরশীল। এখন সেই সাহায্যের হাতের সঙ্গে মিশেছে প্রযুক্তি। এর দরকারও রয়েছে। অডিয়েন্সের সঙ্গে সংযোগ গড়ে তুলতে শিল্পীদের এর প্রয়োজন রয়েছে।" হাতেগরম উদাহরণও রয়েছে। সংস্কৃত ভাষায় অ্যানিমেশন ফিল্ম 'পুণ্যাকোতি' (Punyakoti) তৈরির জন্য উইশবেরিকে ৩০০ জন মিলে তুলে দেন ৪২ লক্ষ টাকা। এখনও পর্যন্ত আড়াইশোরও বেশি প্রজেক্টে ৭ কোটি টাকা তুলে দিতে পেরেছে WishBerry. এত টাকা দিলেন কারা?দিয়েছেন ১৫ হাজারের মতো সাধারণ মানুষ। ভরসা এতটাই যে আগামীদিনে আঞ্চলিক ভাষাতেও এ ভাবে টাকা নিয়ে এগিয়ে আসতে চায় অংশুলিকার সংস্থা।

এই প্রবণতা স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমে একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। Spark Capital (একটি ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কিং ফার্ম)-এর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর তথা হেড কে. রামকৃষ্ণণ বললেন, "স্টার্টআপের বিষয়টা ক্রমেই জনমানসে ছড়িয়ে পড়ছে। তরুণ সমাজ নিজেরাই নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়ার কথা ভাবছে। এই রকম একটা পরিস্থিতিতে তরুণ উদ্যোগীরা যদি পুঁজি বা ক্যাপিটালের যোগান পায়, সেক্ষেত্রে তারা সহজেই তাদের আইডিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন।"

বহু সংস্থার পাশে দাঁড়িয়েছে সতীশ কাটারিয়ার স্টার্টআপ Catapooolt. সতীশের কথায়, "আমাদের এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কিছু ইউনিক আইডিয়াকে বাস্তব রূপ দিতে পেরেছি। যেমন ধরুন Greensoles. এই সংস্থা স্পোর্টস স্যু'র চামড়া দিয়ে স্লিপারস বানায়। আমরা একে ২ লক্ষ টাকা তুলে দিতে পেরেছি। স্টার্টআপগুলো এখন আর লগ্নিকারীদের দয়ার পাত্র নয়।" মাত্র দু'বছরে ১৪ হাজার কনট্রিবিউটরের থেকে ২০ কোটি টাকা তুলতে পেরেছে সতীশের সংস্থা।

চেন্নাইয়ে সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যার কথাই ধরুন। প্রাকৃতিক রোষের মুখে মানুষ তখন অসহায়। ত্রাণের কাজে বেশ কয়েকটি ক্যাম্পেন চালায় Ketto. যা থেকে উঠে আসে এক কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা। ২০১২ সালে এই সংস্থা গড়ে তোলেন বরুণ শেঠ, কুণাল কাপুর এবং জাহির আদেনওয়ালা। জন্মলগ্ন থেকে চার হাজারের বেশি ক্যাম্পেন চালিয়েছে সংস্থা। যা থেকে উঠে এসেছে ১০ কোটির বেশি টাকা। সংস্থার বেশ কয়েকটি ক্যাম্পেনে অংশ নিতে দেখা গিয়েছে বলিউড অভিনেতা হৃতিক রোশন, অভিষেক বচ্চনদের। তারকাদের এই উপস্থিতির ফলে দুটো লাভ হয় বলে মনে করেন জাহির। প্রথমত, সংস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ে। এবং দ্বিতীয়ত, আরও বেশি-বেশি মানুষ সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। Ketto-র ঝুলিতে রয়েছে এমন বহু উদাহরণ। মুম্বইয়ে এক তরুণীর বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টের জন্য ১০ লক্ষের বেশি টাকা তুলে দিতে পেরেছিল সংস্থা। আবার কলকাতায় জটিল রোগে আক্রান্ত একটি মেয়ের পুনর্বাসনের জন্যও একই পরিমাণ টাকা দিয়েছিল। যা সবই জনগণের আশীর্বাদের টাকায়।

(লেখা স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম বিশেষজ্ঞ রাজ দুলাল মুখোপাধ্যায়)