ভেষজ প্রসাধন সামগ্রীর সম্ভার নিয়ে ‘রাস্টিক আর্ট’
Friday September 04, 2015,
4 min Read
২০১২ সালে ভারতে ফাস্ট মুভিং কনজিউমার গুডসের (এফএমসিজি) লাভের পরিমাণ ছিল ৩৬.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৫ সালের শেষে তা ৪৭.৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। এফএমসিজি মার্কেটের ৩২ শতাংশ দখলে রয়েছে পার্সোন্যাল কেয়ার (২২ শতাংশ), হেয়ার কেয়ার (৮ শতাংশ) ও বেবি কেয়ারের (২ শতাংশ)। ভারতে গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে পার্সোন্যাল কেয়ারের ক্ষেত্রে বাজার দখল করে রেখেছে হিন্দুস্থান লিভার তার সবচেয়ে আলোচিত প্রোডাক্ট ফেয়ার অ্যান্ড লাভলির মাধ্যমে। ঠিক তার পরেই রয়েছে গোদরেজ, ডাবর, পি অ্যান্ড জি, ইমামির মতো সংস্থাগুলি। এ থেকে একটা কথাই উঠে আসছে, ত্বকের যত্ন নিতে রাসায়নিক সমৃদ্ধ প্রসাধন সামগ্রীতেই নিজেদের সাজিয়ে তুলতে ভালোবাসেন বা ভরসা রাখেন সিংহভাগ ভারতবাসী।
এমন এক বাজারে ঘরোয়া উপায়ে নির্মিত, রাসায়নিকবিহীন প্রসাধন সামগ্রীর উৎপাদন ও বিক্রি বাস্তবিকই কঠিন। কিন্তু সাম্প্রতিককালে লক্ষ্য করা গিয়েছে ভেষজ (অর্গানিক) প্রসাধন সামগ্রীর ওপর ভরসা রাখছেন একাংশ। তাঁরা দেখেছেন, এই ধরনের সামগ্রী থেকে শরীরের ক্ষতির সম্ভাবনা কম বা নেই বললেই চলে। ভেষজ প্রসাধন সামগ্রী তৈরি করে থাকে এমনই একটি সংস্থা রাস্টিক আর্ট (Rustic Art)। ২০১১ সালের গোড়ার দিকে মহারাষ্ট্রের সাতারায় ভেষজ সাবান তৈরি করতে শুরু করেন স্বাতী মহেশ্বরী এবং সুনীতা জাজু (সম্পর্কে কাকিমা ও ভাইঝি)। স্বাতীর কথায়, ‘আসলে আমাদের বাড়িতে সবকিছুতেই প্রাকৃতিক জিনিস ব্যবহারের একটা প্রবণতা ছিল। জামাকাপড় কাচতে অধিকাংশ ভারতীয় যেখানে নামি ব্র্যান্ডের বার সাবান ব্যবহার করে থাকেন, সেখানে আমরা কিন্তু এখনও স্থানীয় লন্ড্রিতে ব্যবহৃত এক বিশেষ ধরনের সাবান ব্যবহার করি। এই সাবান তৈরি করা হয় নারকেল তেল থেকে’।
কিন্তু রাস্টিক আর্ট কেন? ‘আমরা দেখেছিলাম পার্সোন্যাল কেয়ার প্রোডাক্টের ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীরা নিরাপদ জিনিস চাইছেন। কিন্তু সময়ের অভাবে ঘরে বসে তাঁদের পক্ষে তা বানানো সম্ভব নয়। তাঁরা চান রেডিমেড কিছু। সেই ভাবনা থেকেই রাস্টিক আর্ট গড়ে তুলি’, জানালেন স্বাতী মহেশ্বরী। তবে এই ধরনের দ্রব্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হল ব্যবহারকারীদের অজ্ঞতা। কেন? স্বাতী বলেন, ‘লোকে মনে করে এই ধরনের জিনিসের নিশ্চয় দাম বেশি। আসলে এটা একটা মেন্টাল ব্লক। যদি সেটা নাও হয়, তাহলে তারা ভাবে এই ধরনের জিনিসে নিশ্চয় গোলমাল আছে’। রাস্টিক আর্টের সবথেকে জনপ্রিয় সামগ্রী হল অ্যালো ভেরা জেল। ছোট উৎপাদনকারীরাও অনেক সময় অ্যালো ভেরা জেল কিনতে রাস্টিক আর্টের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এমনও হয়েছে কোনও ছোট উৎপাদনকারী সংস্থা একলপ্তে ২০ কেজি অ্যালো ভেরা কিনেছে। রাস্টিক আর্টের দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হল, ভেষজ প্রসাধন সামগ্রী ব্যবহারে অনাগ্রহকে বদলানো। স্টক মেনটেনও জরুরি বিষয়। ভেষজ সামগ্রী বেশিদিন ব্যবহার করা যায় না। মাসখানেকের মধ্যে ব্যবহার করে ফেলাই শ্রেয়। তবে পরিমাণে লাগে কম। সেই হিসাবে আর্থিক সাশ্রয়কারীও বটে। পরিবেশ সচেতন এমন বহু ক্রেতাও রয়েছেন যাঁরা চান, প্লাস্টিক প্যাকেজিংয়ের ব্যবহার কমিয়ে আনতে রিফিলের ব্যবস্থা করুক রাস্টিক আর্ট। যাতে একই শিশুতে ফের ভেষজ সামগ্রী ভরে নেওয়া যাবে এবং প্লাস্টিকের ব্যবহার করবে। বিষয়টি ভেবে দেখছেন স্বাতী মহেশ্বরীও। ব্যবহারকারীদের মতামতকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েই দেখেন তিনি।
সদ্যোজাত শিশুদের জন্য বেশ কয়েকটি সামগ্রী তৈরি করে থাকে রাস্টিক আর্ট। গত চার বছর ধরে অর্গানিক ব্লুবেরি বেবি ওয়াস সবচেয়ে বেশি ব্যবসা দিয়েছে বেঙ্গালুরু থেকে। পঞ্জাব, দিল্লি, গোয়া ও পশ্চিমবঙ্গেও এই বেবি ওয়াসের বিক্রি বেশ ভালো। ব্যবসা আরও ছড়িয়ে দিতে কী ভাবছে সংস্থা? স্বাতী বলেন, ‘আমাদের মাসে ৬-৭ লক্ষ টাকা লাভ হয়। আমাদের নিজস্ব কোনও দোকানও নেই। বিক্রিবাটা সবটাই খুচরো দোকান ও অনলাইনের মাধ্যমে। আমরা চাইলেই বড় ব্রান্ড হয়ে যেতে পারব না। আমাদের পুরোটাই গ্রাসরুট লেভেলে রয়েছে। প্রসার ঘটাতে গেলে ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিটের সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে। স্বাতী মনে করেন, অর্গানিক পার্সোন্যাল কেয়ার মার্কেটে নিয়মাবলীও আরও কঠোর হওয়া উচিত। এতে একদিকে যেমন ভেষজ প্রসাধন সামগ্রীর নিজস্ব ব্র্যান্ড গড়ে উঠবে, অন্যদিকে অসাধু ব্যক্তিদেরও রাশ পরান সম্ভব হবে। কিন্তু বড় বড় ব্র্যান্ডগুলি শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক প্রসাধন সামগ্রী নিয়ে যেভাবে গ্রামাঞ্চলে থাবা বসাচ্ছে তাতেও শঙ্কিত স্বাতী।
কিন্তু ভরসার জায়গাটাও রয়েছে। ভরসা দিচ্ছেন গ্রামাঞ্চলের ব্যবহারকারীরাই। তাঁরা দেখেছেন, ভেষজ দ্রব্যের জন্য দু’পয়সা দাম বেশি দিতে হলেও লাভ ষোলোআনা। তাঁরা তাই আরও বেশি বেশি করেই আস্থা রাখছেন ভেষজ প্রসাধন সামগ্রীতে। মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ছে ব্যবহারের সুফল। বিভিন্ন প্রোডাক্টের ব্যাপারে তাঁরা খোঁজখবর নিচ্ছেন। রাস্টিক আর্ট তাই আশাবাদী। আগামী দিনে আরও বড় আকারে ছড়িয়ে পড়বে এই সংস্থা।