'হর্ন দানব' রুখতে কলকাতার রাস্তায় পড়ুয়ারা

'হর্ন দানব' রুখতে কলকাতার রাস্তায় পড়ুয়ারা

Sunday January 03, 2016,

3 min Read

রাস্তা দিয়ে হর্ন বাজিয়ে বাইকে করে দিব্যি যাচ্ছিল যুবকটি। বাধ সাধল এক কিশোরী। পরিষ্কার ইংরাজিতে বলে ওঠে ‘স্টপ হর্ন প্লিজ’।

image


তিলোত্তমার আনাচে কানাচে এমনই ঘটনার সম্মুখীন হন বহু মানুষ। বোঝানো হয় ক্রমাগত হর্ন ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে নিজেদের ক্ষতিই ডেকে আনছেন তারা। হাতে তুলে দেওয়া হয় প্যামপ্লেট। অনেকে বোঝেন, আবার অনেকে হেসে চলেও যান। তবে যারা এই দায়িত্ব তুলে নিয়েছে তারা করে চলে নিজেদের কাজ। তারা সফল। ২রা জানুয়ারি এরকমই একটি দিন ছিল। সেদিন শহরের ব্যস্ততম এলাকা হয়ে উঠেছিল 'হর্ন ফ্রি'। যাদের কাঁধে এই কাজের গুরুদায়িত্ব তাদের কারো বয়স ১২ কারো বা ১৫। পরনে লা মার্টিনিয়ার স্কুলের ড্রেস। গলায় দীপ্ত স্বর। ক্লাসে চুপচাপ থাকলেও পার্ক স্ট্রিটে রীতিমত দাপিয়ে বেড়াল ওরা। বয়সে ছোট হলেও ভাবনায় অনেক এগিয়ে। 

সবাইকে বোঝাতে ব্যস্ত লা মার্টসের অষ্টম শ্রেনির ছাত্রী শ্রীরূপা সারগি। তার কথায় ফুটে উঠল শহরের প্রতি প্রেম। বলল, ‘কলকাতা আমাদের শহর। শব্দ দানবের হাত থেকে বাঁচাতে হবে এই শহরকে।' আরও এক ছাত্রী সাক্ষী সাঙ্গানেরিয়া আরও অ্যাগ্রেসিভ। বলল ‘আপনি কি জানেন কানে কম শুনতে পাওয়ার কারণ আপনারই বাইকের হর্ন ? অযথা হর্ন দেবেন না।' কেউ শুনলেন কেউ বা পাস কেটে চলে গেলেন। তবুও হাতে থেকে খসে গেল না, নো- হর্ন প্ল্যাকার্ড। হাসিমুখে শুধু বলল আবারও আসব, বোঝাবো হর্ন কেন ব্যবহার করা উচিত না। কিছুটা মানুষের কাছে পৌঁছতে পারলেও খুব সহজ ছিল না তাদের এই সচেতনতা পৌঁছে দেওয়ার কাজ। আর এই কর্মকান্ডের দায়িত্বে যারা, সেই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাছে কাজটা ছিল আরও কঠিন।

হর্ন ব্যবহার বন্ধের ভাবনা মাথায় আসে বনানী কক্করের। বনানি কলকাতার মেয়ে। তাই এই শহরের জন্য তিনি ভাবেন। তৈরি করেন এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পিপল ইউনাইটেট ফর বেটার লিভিং ইন ক্যালকাটা। সংক্ষেপে পাবলিক। বেশ অভিনব নাম । যার বাংলা মানে, সকলে একযোগ হয়েছে কলকাতার পরিবেশ আরও ভালো করে তোলার জন্য। শুরু হওয়ার পর থেকেই এ শহরকে আরও ভালো পরিবেশ দেওয়াই তাদের মূল লক্ষ্য। শুরু থেকেই কলকাতার জলাভূমি বোজানো বন্ধ করা নিয়ে রীতিমত আন্দোলন করেছেন ওঁরা। শহরের পরিবেশ দূষণ করা ধোঁয়া বন্ধের আর্জি নিয়ে পৌঁছেছেন মানুষের কাছে। সব সময়ই তাঁরা পাশে নিয়েছেন স্কুলের কিশোর ও কিশোরীদের।

image


সমীক্ষায় বলছে, দেশে সবচেয়ে বেশি শব্দদূষণ হয় কলকাতায়। শহরের প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ ভুগছেন কানের সমস্যায়। শুধু কম শোনাই নয়, স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়ে যাওয়া, মনোযোগের অভাবের মত উপসর্গের পিছনে রয়েছে শব্দদানবের কুপ্রভাব। তাই হর্নের মত প্রবল শব্দের ব্যবহার কমাতেই পথে নামেন বনানী। সেই কাজে সঙ্গে নিতে চেয়েছেন সমাজের ভবিষ্যতকেও। তাই স্কুলে স্কুলে গিয়ে পড়ুয়াদের পথে নামার অনুরোধ করেন। এগিয়ে এসেছে বেশ কিছু নামী স্কুল। সেই তালিকায় রয়েছে লা মার্টস স্কুল ফর বয়েজ এন্ড গার্লস, মডার্ন হাই স্কুল, জে ডি বিড়লা, সেন্ট জেমস। তালিকাটা আরও একটু লম্বা হলে ভালো হয় বলেই মনে করেন বনানী। স্বপ্ন দেখেন শিশুদের মুখের দিকে চেয়ে সমঝে যাবে কলকাতা। জেগে উঠবে কলকাতার হৃদয়।