শালবনির শ্রীকান্তের স্বপ্নের স্কুলে ২৫৫ জন পড়ুয়া

শালবনির শ্রীকান্তের স্বপ্নের স্কুলে ২৫৫ জন পড়ুয়া

Thursday March 30, 2017,

2 min Read

গায়ে স্কুলের পোশাক থাকলেও পরিপাটির বালাই নেই। বাবা মা কিছু খাইয়ে পাঠালে তো ভালই, কারও আবার সেইটুকুও জোটে না। ছোট্ট মন জেনে গিয়েছে অনাথ শব্দের মানে কী। তাদের ঘর বাড়ি আত্মীয় অনাত্মীয় সব জঙ্গলমহলের ভীমপুরের মিশন অরুণাদয় স্কুল ঘিরেই।

image


পড়ুয়া ২৫৫জন। তাদের মধ্যে আবাসিকের সংখ্যা প্রায় পঞ্চাশ। এদের নিয়েই চলছে মিশন অরুণোদয়। আর্থিক সমস্যা আছে। তবে স্বপ্নকে আটকানো যায়নি। স্বপ্ন দেখেছিলেন শালবনির বর্তমান বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতো। তখন তিনি অবশ্য বিধায়ক হননি। ১৯৯৮ সালে তিনি সমাজকর্মী। শালবনি সেসব সময় ত্রাসের দেশ ছিল। এই জায়গার নাম উচ্চারিত হলে হাঁড়ে কম্প লাগত। মাওবাদী অধ্যুষিত এই হত দরিদ্র এলাকায় একটি স্কুল যে ভীষণ জরুরি সেটা টের পেয়েছিলেন স্থানীয় করমা গ্রামের দামাল ছেলে শ্রীকান্ত। পরবর্তীকালে তাঁর বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ উঠেছিল। মাওবাদী যোগের মত অভিযোগও ওঠে। তবে সেই অভিযোগ তাঁকে সমাজ সেবার রাস্তা থেকে সরাতে পারেনি। তাঁরই উদ্যোগে এই স্কুল। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি স্কুলও চলে সমান তালে। জঙ্গলমহলের ছোট্ট গ্রাম ভীমপুরের সেই স্কুলে এখন ছাত্র গিজগিজ করছে।

১৯৯৮ সালে এরকম হত দরিদ্র বাচ্চাদের কাছে ন্যুনতম শিক্ষা পৌঁছে দেওয়ার আবেগ অনুভব করেছিলেন সংগঠক সমাজকর্মী শ্রীকান্ত। প্রথমে খড়ের চাল দিয়ে তৈরি সেই স্কুল আজ সকলের চেষ্টায় পাকা বাড়িতে পরিণত হয়েছে। এই আবাসিক স্কুল ‘প্রথমে একেবারে একার উদ্যোগে শুরু করছিলাম। দুস্থ অথচ মেধাবী, অনাথ ছেলেমেয়েদের খুঁজতে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেরিয়েছি। তাদের খুঁজে এনে খড়ের চালের ওইটুকু স্কুলে পড়ানোর ব্যবস্থা করি। বাব-মাদেরও বোঝাতে হত। সব করেছি একার হাতে। পরে অবশ্য সঙ্গে চলার অনেক লোক পেয়ে যাই। খড়ের চাল থেকে কংক্রিটের ছাদ। লড়াইটা বেশ কঠিন ছিল। অনাথ শিশুগুলোর থাকা, খাওয়া, পড়াশুনোর টাকা জোগাড় করা চাট্টিখানি কথা নয়। তিল তিল করে স্কুলটাকে বেড়ে উঠতে দেখেছি। বিশ্বাস ছিল, তাই পেরেছি’,গর্বিত আত্মবিশ্বাসী শোনায় স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীকান্ত মাহাতোর গলা। ভবিষ্যতের লক্ষ্য আরও বড়, বললেন শ্রীকান্তবাবু।

‘গ্রামের মানুষ বড় গরিব। শালপাতা, কেন্দুপাতা বিক্রি করে ক’টাকা আর জোটে? পেটে দিতেই চলে না। স্কুল, পড়াশোনা এসব এখানে বিলাসিতা। গ্রামের বাচ্চাগুলো দুধের দাঁত পড়ার আগেই হয় বাবা-মায়ের সঙ্গে কাজে লেগে যায়, নয় রাস্তা ঘাটে ফ্যা ফ্যা করে ঘুরে বেড়ায়। তাদের তুলে এনে পড়াশোনার ব্যবস্থা করতে গিয়ে বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা হয়েছে’, বলছিলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক মৃত্যুঞ্জয় মাহাতো।

শিক্ষানুরাগী শ্রীকান্ত মাহাতোর একার এই উদ্যোগে একে একে সামিল হয়েছেন অনেকেই। পড়ুয়া বেড়েছে। আবাসিকের সংখ্যাও বেড়েছে। বেড়েছে আর্থিক সমস্যাও। তবু স্বপ্ন দেখেন সবাই। একদিন এই মিশন অরুণোদয় আরও বড় হবে। ভোরের আলো ছড়িয়ে পড়বে আরও বহু বহু দূরে।