কোয়েল চাষে দিশা দেখাচ্ছেন বর্ধমানের দুই চিকিৎসক

কোয়েল চাষে দিশা দেখাচ্ছেন বর্ধমানের দুই চিকিৎসক

Friday February 12, 2016,

3 min Read

চিনাদের প্রেসক্রিপশনে নাকি ডাক্তারবাবুরা পথ্যি দিতেন কোয়েলের মাংস। লো ফ্যাট, খাদ্য গুন ও মান মুরগির থেকে অনেক বেশি। আর ডিমের তুলনায় গেলেও কোয়েলই এগিয়ে। বলছিলেন বর্ধমানের চিকিৎসক সৌমেন সিংহরায়। কিছু দিন আগে স্রেফ শখের বশে নিজের বাড়িতে কোয়েল পাখির প্রতিপালন শুরু করেন বন্ধু এবং অস্থি বিশেষজ্ঞ সুচিন্দ্রম পাত্র। প্রথমে কলকাতার টালিগঞ্জের পোলট্রি ফার্ম থেকে ৫০টি পাখি কেনেন তিনি। পরে তা আস্তে আস্তে বেড়েছে। সেই শুরু। তাঁরাই এখন বাকিদের উৎসাহ দিয়ে যান, উদ্ভুদ্ধ করেন কোয়েলের চাষে।

image


সৌমেনবাবু জানান, 'নিজের বন্ধু ও পরিচিত মহলে দেখি কোয়েলের ডিম ও মাংসের চাহিদা রয়েছে। তাই কোয়েলের চাষে আমরা প্রযুক্তি ও পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করছি। কোয়েল চাষে উৎসাহ দিচ্ছি'। সৌমেনবাবুর কাছ থেকে জানা গেল, 

  • কোয়েল পাখি প্রথমে পোলট্রিতে বড় হয়। 
  • এরা ডিম ফোটানোর সময় তা দেয় না। 
  • ইনকিউবেটরে বাচ্ছা ফোটানো হয়। 
  • ১৬-১৮ দিন লাগে ডিম ফোটাতে। 
  • ডিমের ওজন হয় ৭-১৫ গ্রাম। 
  • ৯ গ্রাম থেকে ১৫ গ্রাম ওজনের ডিম থেকে ভাল বাচ্চা হয়। 
  • পাখির ওজন ১৫০ থেকে ২০০ গ্রামের মধ্যে থাকে। 
  • ডিম থেকে পাখি হতে মোটামুটি ১৮ দিন। 
  • পূর্ণ মাপের পাখি হতে লাগে ৬ থেকে ৭ সপ্তাহ। 
  • তার পরেই ডিম দেবে পাখি। 
  • প্রথম বছরে ২৮০ থেকে ৩০০ ডিম মিলবে। 
  • তারপর ডিমের পরিমাণ কিছুটা কমে আসবে। 
  • তবে শীতকালে কোয়েল তেমন একটা ডিম দেয় না। 

তিন মাস সময়কালে শীতে জবুথবু কোয়েলকে কৃত্রিম ভাবে আলো জ্বালিয়ে ইনকিউবেটরে রাখলে অবশ্য ডিম মিলবে। পাখির জন্য খাবার লাগে ৩০ গ্রাম মতো। বাজারের ব্রয়লার মুরগি ও পশুখাদ্য মিক্সচারই তাদের সাধারণ খাবার। দাম ৩০ টাকা প্রতি কেজি। পাখিগুলির জীবনকাল ৩ থেকে ৪ বছর। তবে ৬ সপ্তাহ পরেই মাংস হিসেবে বিক্রি করা হয় বাজারে। বাজারে সাধারণত ২০০ গ্রাম ওজনের পোলট্রির কোয়েলের দাম ৫০ টাকা। তবে বুনো কোয়েল, যার নাম তিতির পাখি, তার প্রতিপালন অবশ্য নিষিদ্ধ।

সুচিন্দ্রমবাবু জানান, বর্ধমানের বাজারে এই পাখির মাংস ও গোটা পাখির চাহিদা রয়েছে। 

  • কোয়েল পালন শুরুর পর প্রথমে ২০০ পাখি বিক্রি হয়েছে ৮-৯ মাসের মধ্যে। 
  • ১ দিনের বাচ্চার দাম ১০ টাকা। 
  • ৫ সপ্তাহের পাখির প্রায় ২০০ গ্রাম মতো ওজন হয়। দাম ৫০ টাকা। 

বর্ধমানের ছোট নীলপুরের একটি রেস্তোরাঁয় কোয়েলের মাংস ও রোস্ট বিক্রিও হচ্ছে। মুরগির মাংসের মতোই মোটামুটি ৭-৮ পিস ১০০ টাকা প্লেট। দু'জনেই জানান, 

মোটামুটি ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা হলেই শেড, ইনকিউবেটর, লোহা ও তারের খাঁচা সহ ১০০টি পাখি দিয়ে এই ব্যবসা শুরু করা যাবে। ২-৩ মাস পর থেকেই উৎপাদন শুরু হলে পর্যায়ক্রমে তা বাড়তে থাকবে। ৫ মাস পর থেকেই বাজারে বিক্রির জন্য তৈরি কোয়েল।

কোয়েল চাষের ঝুঁকিও কম। মুরগির মতো কোন টিকা দিতে হয় না। নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এদের বেশি। কোলেস্টরল হয় না। ফ্যাট বা স্নেহ জাতীয় পদার্থ কম থাকায় যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তাঁদের জন্য উপকারী। ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্যও উপকারী। ডিমের দাম পাইকারি ১ টাকা পিস। খুচরা দু'টাকা। তবে আকৃতি ও পরিমাণে ছোট হওয়ায় তিনটি ডিম গুললে একটি মুরগি বা হাঁসের ডিমের সমান হবে। ডিমের ওজন ৭-১৫ গ্রাম। কিন্তু প্রচার ও প্রসারের অভাবে কোয়েলের মাংস ও ডিম তেমন জনপ্রিয় হয়নি বর্ধমানে। সৌমেনবাবু বলেন, ‘কোয়েল পাখির ডিমের বাইরে খোলসে ছোট ছোট দাগ থাকে। গ্রামের লোক বা অনেকেই ওই দাগ দেখে কোয়েল পাখির ডিম খেতে পছন্দ করেন না। অথচ কোয়েলের ডিম বা মাংসই যে খাদ্য গুন ও মানে এগিয়ে তা হয়ত অনেকেই জানেন না। তাছাড়া খামারের মুরগিগুলিকে তাড়াতাড়ি বাড়ার জন্য হরমোন ইনজেকশন দেওয়া হয়। সেটাই শরীরে গিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে। কোয়েলের ক্ষেত্রে সেই আশঙ্কা তো একেবারেই নেই।দামেও সস্তা’।

দুই চিকিৎসকই মনে করেন কোয়েল পাখির চাষ এবং মানুষের খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার জন্য প্রচার প্রয়োজন। সেটাই করছেন দুই বন্ধু। তবে তাঁদের একার পক্ষে এই কাজ করা সম্ভব নয়। তার জন্য সরকারি উদ্যোগও থাকতে হবে।