Lupus লড়াইয়ে ডাক্তার বাবুদের Initiative

Lupus লড়াইয়ে ডাক্তার বাবুদের Initiative

Monday May 16, 2016,

5 min Read

১০ মে কলকাতায় একটি আলোচনা সভায় গিয়েছিলাম। দিনটা আর পাঁচটা মানুষের কাছে যেকোনও একটি দিন। কিন্তু যারা লুপাসে আক্রান্ত তাদের কাছে এই দিনের গুরুত্বই আলাদা। বিশ্ব লুপাস দিবস। লুপাস নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে কলকাতাও। এসএসকেএম হাসপাতালের রিউমাটোলজি বিভাগের চিকিৎসকদের একটি দল লুপাস আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি নিয়ে শুরু করে দিয়েছেন লুপাস ইনিশিয়েটিভ কলকাতা। ২০০৯ সাল থেকে কাজ শুরু হয়। ধীরে ধীরে দানা বেঁধে উঠতে সময় লেগে গেল ৬-৭ বছর। কথায় বলে slow but steady wins the race, লুপাস ইনিশিয়েটিভও এগোচ্ছে সাফল্যের দিকেই। এই উদ্যোগের প্রাণপুরুষ প্রেফেসর ডক্টর অলোকেন্দু ঘোষ। সঙ্গে সদা হাস্যবদনে সবসময় তৈরি তার টিম। এ যেন কঠিন একটি লড়াই। সেনাপতির নির্দেশে লড়ে যাচ্ছেন কমিটেড সোলজার। কারণ রোগটাও খুবই কঠিন। আলাপ হল তনুজা দাসের সঙ্গে। দৃঢ় চিত্তের বুদ্ধিদীপ্ত মেয়ে তনুজা। লুপাস আক্রান্ত। বলছিলেন লড়াইটা কঠিন। কিন্তু অলোকেন্দু বাবুদের দৌলতে যুদ্ধটা সোজা লাগছে।

image


বারাবর লুপাস লুপাস বলছি। কিন্তু কী এই লুপাস সেটা জেনে নেওয়া দরকার। প্রথমেই বলে রাখি লুপাস কোনও ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ নয়। লুপাস একটি গ্রিক শব্দ যার অর্থ নেকড়ে। এ রোগের আক্রমণ অনেকটা নেকড়ের আক্রমণের মতোই আকস্মিক। তাই একে লুপাস বলে। লুপাসের পুরো নাম সিস্টেমিক লুপাস ইরাথেমেটোসাস। বলবার সুবিধের জন্যে কেউ কেউ এসএলই নামেই চেনেন এই রোগটিকে। ইরাথেমেটোসাস শব্দের অর্থ ত্বকের কিছু অংশ লাল হয়ে যাওয়া। এ রোগে আক্রান্তদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাই নিজের শরীরের দরকারি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন চামড়া, রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থা কিংবা কিডনির মত দরকারি অঙ্গ আক্রান্ত হয়। ফলে দ্রুত রোগ ধরা না পড়লে মুশকিল। সেমসাইড গোল খেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

আজ পর্যন্ত এ রোগের সঠিক কোনও কারণ জানা যায়নি। প্রতি এক লাখে ২০ থেকে ১৫০ জনের এ রোগ হতে পারে। শতকরা ৯০ ভাগ লুপাস রোগী কমবয়সী মহিলা। যার শতকরা ৬৫ ভাগ রোগীর বয়স ১৬ থেকে ৫৫-এর মধ্যে, শতকরা ২০ ভাগ ১৬ বছরের নিচে এবং শতকরা ১৫ ভাগ ৫৫ বছরের বেশি।ছেলেদের এ রোগের প্রকোপ মেয়েদের চেয়ে অনেক কম।

কীভাবে সতর্ক হবেন সেটাও জেনে নেওয়া দরকার

অনেকদিন ধরে কোনও কারণ ছাড়াই যদি জ্বর থাকে। নাকের দুপাশে লাল চাকা চাকা দাগ হয়। যা দেখতে অনেকটা প্রজাপতির পাখার মতো। এবং খুব বেশি রকম যদি চুল পড়ে যায়। তাহলে সতর্ক হোন। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লাল রঙের অথবা গোল গোল চাকাচাকা দাগ হওয়াটা লুপাসের চিহ্ন। লুপাস আক্রান্তদের শরীরে যন্ত্রণা থাকে। রক্তশূন্যতা তো থাকেই। মুখের ভিতর তালুতে ঘা হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে ঠাণ্ডা জলে হাত রাখলে হাতের রঙ প্রথমে সাদা, তারপর নীল, তারপর লাল এভাবে বদলে যায়। ক্লান্তি, অবসাদ সবসময়ের সঙ্গী। এ রোগ যখন খারাপ অবস্থার দিকে যায়, তখন শ্বাসকষ্ট হয়, ডায়রিয়া, বমি অথবা পেটব্যথা হতে পারে। গর্ভবতী মায়েদের বারবার মিস ক্যারেজের সম্ভাবনা থাকে। পা ফুলে যেতে পারে, যন্ত্রণা হতে পারে। মানসিকভাবে অস্থিরতা আসতে পারে। অস্বাভাবিক আচরণ করতে পারেন। এবং ঘন ঘন অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মত ঘটনা ঘটতে পারে। লুপাসে কিডনি আক্রান্ত হলে প্রস্রাবের সঙ্গে প্রোটিন বা অ্যালবুমিন মিসে যায়। এটা রোগের তীব্রতার ইঙ্গিত দেয়। এর সুচিকিৎসা সম্ভব। 

এমনকি লুপাস আক্রান্ত মহিলারা সুস্থ স্বাভাবিক সন্তানের মাও হতে পারেন। এরকম ঘটনা কলকাতায় অনেকগুলো রয়েছে বলে জানালেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা।

তবে লুপাস রোগটি সম্পূর্ণ নির্মূল করার কোনও ওষুধ এখনও নেই। যথাযথ চিকিৎসায় এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। অনেকে কোনও উপসর্গবিহীন অবস্থায় দীর্ঘদিন ভালো থাকতে পারেন। কিন্তু কিছু টিকা নিলে কিছু রোগের অগ্রিম প্রতিষেধক নেওয়া সম্ভব। বলা বাহুল্য তবু লুপাস রোগীদের অবশ্যই রোদ্দুরকে দূরে রাখা উচিত। ছাতা এবং সান ব্লক ক্রিম ব্যবহার করা উচিত। পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম আছে এমন খাবার খাওয়া প্রয়োজন। দুধ, দই ও প্রয়োজনে ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া দরকার, সুষম খাবার দরকার। দৈনিক ৩০-৪০ মিনিট হাঁটা বা ব্যায়াম করা দরকার। পায়ে ঘাম হলে লবণ কম খাওয়া উচিত। আর সব সময় চিকিৎসকদের নিয়মিত তত্ত্বাবধানে থাকা প্রয়োজন। আর সব কথার শেষ কথা মন ফুরফুরে রাখার চেষ্টা করা উচিত।

image


এ তো গেল রোগটা কী কীভাবে বোঝা যাবে রোগটা হয়েছে কিনা এবং কী কী করা উচিত ইত্যাদি। কিন্তু এর একটা সামাজিক দিকও আছে।

এই রোগে আক্রান্তদের শরীরে নানান দাগ হয়, চামড়া আক্রান্ত হওয়ায় সামান্য কুঞ্চন হতে পারে। চামড়া উঠতে পারে। আর তাতেই সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে হয় অনেক লুপাস আক্রান্তদের। শারীরিক কারণে তো বটেই মানসিক কারণেও ওদের মধ্যে নানান স্তরে মান অভিমান চলতে থাকে। সমাজের আর পাঁচটা মানুষ যদি সহনশীলতার হাত না বাড়িয়ে দেন তাহলে আরও অসহায় হয়ে পরেন এই বিরল রোগাক্রান্তরা।

প্রফেসার ডক্টর অলোকেন্দু ঘোষের লুপাস যোদ্ধা টিমের অন্যতম প্রধান সেনানি ডক্টর অর্ঘ ভট্টাচার্য বলছিলেন, লুপাস আক্রান্তদের সংখ্যা এই কলকাতাতেই প্রায় হাজার খানেক। এবং সামাজিক ভাবেও তাঁরা খুব ভালো নেই। এক তো চিকিৎসার প্রচুর খরচ। আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল না হলে এটা একটা বিরাট হার্ডেল। আর দ্বিতীয় বিষয় হল সামাজিক অসহোযোগিতা। রোগের খবর শুনে একের পর এক মহিলার বিয়ে ভেঙে গেছে। মা হতে পারছেন না বলে নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। রোগ ধরা পড়ার পরও চিকিৎসা হয় না অনেক মহিলারই। বিনা চিকিৎসায় মরতে হয়েছে এমন রোগীর সংখ্যা গণনাতীত। ফলে ব্যাধির অ্যাকসেসরি হিসেবে সামাজিক ব্যাধির চিকিৎসাটা করতেও এখন একসঙ্গে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন এই ডাক্তার বাবুরা। রাতদিন ভাবছেন কিভাবে স্বনির্ভর করা যায় লুপাস আক্রান্ত দুঃস্থ মেয়েদের। এগিয়ে এসেছেন লুপাস আক্রান্ত এক তরুণী তার কথা আগেও বলেছি। তনুজা। ও গরিব ঘরের মেয়ে। কিন্তু এখন ও আরও অনেক গরিব ঘরের লুপাস আক্রান্ত মেয়েদের কাছে রোল মডেল। হাতের কাজ শিখেছে মেয়েটি। সেই কাজ আর পাঁচজনকে শেখাতে উদ্যোগ নিয়েছে। লুপাস ইনিশিয়েটিভের ডাক্তার বাবুরা, অলেকেন্দু ঘোষের মত মানুষ আশ্বাস দিচ্ছেন ওদের পাশে থাকার। আর এই ইনিশিয়েটিভ মুখ্যমন্ত্রীর তরফ থেকে অনুদানের আশ্বাস পেয়েছে। সেই টাকায় চিকিৎসা হবে। নিজের পায়ে দাঁড়াবেন মেয়েরা এরকম অনেক সুন্দর সুন্দর স্বপ্ন দেখছেন চিরহরিত অলকেন্দু, অর্ঘরা। অগণিত লুপাস আক্রান্ত মেয়েরা তাকিয়ে রয়েছে ওদের সুন্দর স্বপ্নের দিকে।