বেশ রোগা। গায়ের রং একটু চাপার দিকেই, দক্ষিণীদের যেমন হয় আর কী। আর ছিল দুটি বড় বড় চোখ। অপার বিস্ময় তাতে। ওই চোখ দিয়ে সব কিছু যেন শুষে নিত নিজের মধ্যে, গেঁথে যেত মনে। তারপর দেখা দৃশ্য আর নিজের ভাবনা মিলেমিশে একাকার হয়ে যেত কাগজের ক্যানভাসে...রং তুলিতে, কখনও রং পেন্সিলে। সবটাই অতীত। কারণ উজ্জ্বল বিস্ময়ভরা চোখ দুটি চিরকালের মতো বুজে গিয়েছে ১৯৮৩ সালে, মাত্র ৬ বছর ১১ মাস বয়সে। বলছি সেই বিস্ময়বালক এডমান্ড থমাস ক্লিন্টের কথা।
কেরলের কোচিতে ১৯৭৬ সালে জন্ম এডমান্ডের। এমটি জোসেফ এবং চিন্নাম্মা জোসেফের একমাত্র সন্তান। বাবা-মা সাধ করে নামী ডিরেক্টর ক্লিন্ট ইস্টউডের সঙ্গে মিল রেখে ছেলের নাম রেখেছিলেন। ছোট্ট এডমান্ড ছবি আঁকতে ভালোবাসত। উৎসব, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাড়ির কাছে যাই এডমান্ডের চোখে পড়ত, সঙ্গে সঙ্গে আঁকার পাতায় উঠে আসত। সবকিছু খুঁটিয়ে দেখে সেটাকে আত্মস্থ করে নেওয়ার এক অসাধারণ ক্ষমতা ছিল ছোট্ট শিশুটির। ক্যানভাসে হুবহু উঠে আসত সেই সবকিছু। অদ্ভুত রঙের ব্যবহার পাকা হাতকেও হার মানায়। ১৯৮৩ সালে কিডনি নষ্ট হয়ে মারা যাওয়ার আগে এডমান্ড রেখে যান তিরিশ হাজার ছবি।
ওই শিশু বয়সেই যে সব ছবি এডমান্ডের হাত দিয়ে বেরিয়েছে সেই পর্যায়ে পৌঁছাতে পেশাদার শিল্পীদেরই বহু সাধনার প্রয়োজন হয়। একবার ১৯৯৫ সালে এবং পরে ২০০৭ সালে, এই দুবার তিরুবনন্তপূরমে এডমান্ডের ছবি নিয়ে প্রদর্শণী হয়। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে অনূর্দ্ধ আঠারোদের নিয়ে একটি আঁকার প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে চমক লাগিয়ে দেন এই বিস্ময়বালক। তাঁকে, তাঁর শিল্পকর্মকে স্মরণে রেখে কোচির একটি রাস্তার নামকরণই হয়েছে ক্লিন্টরোড নামে। ২০০৭ সালে মালায়লম ছবি আনন্দভৈরবী এই বিস্ময়বালকের জীবন কাহিনী অবলম্বনে। এডমান্ডের সম্পর্কে যতটুকুই বলা হয়, সবটাই যেন কম। মুখে বলে বা লিখে নয়, শুধু দুচোখ ভরে দেখতে হয় সেইসব মূর্ত হয়ে ওঠা ছবি, এডমান্ডের অমূল্য শিল্পকর্ম-
ভেবে অবাক হয়ে যাই আজও যদি বেঁচে থাকতেন ক্লিন্ট এতদিন আরও কত বিস্ময়ের সৃষ্টি করে যেতেন গোটা বিশ্বের জন্য।