এতদিন সময়টা ছিল প্রচারের। ব্যবসায় মুনাফা পেতে প্রচােরই ছিল সেরা হাতিয়ার। দিন বদলেছে। প্রচারের গদিতে এখন প্রভাবের হানা। কর্পোরেটের আঙিনায় প্রচারকারীর গুরুত্ব কমেছে। দাম বেড়েছে প্রভাব বিস্তারকারীর। ম্যানেজমেন্টের ভাষায় যাদের বলে ইনফ্লুয়েন্সার।
বেশ কয়েক বছর আগে কর্পোরেট জগতে ঢুকে পড়েছিল শব্দটা। বিজ্ঞাপনের লোকেরা এদের বলতে ইনফ্লুয়েন্সার। এদের ঘাড় নাড়ার ওপর নির্ভর করত বাজারের ওঠা-নামা। কোনও জিনিসকে এরা মান্যতা দিলে মান বাড়ত পণ্যের। ব্যবসার জগতে সিনেমা থেকে খেলাধূলার তারকাদেরও সমানে সমানে টক্কর দিতে পারেন এই ইনফ্লুয়েন্সাররা।
২০১৪ সালেই পণ্যের বাজারে প্রভাবশালীদের গুরুত্ব উপলব্ধি করেছিলেন শিল্পপতিরা। তড়িঘড়ি বিপণনের বাজারে ইনফ্লুয়েন্সারদের প্রভাব বুঝতে শুরু হয় সমীক্ষা। সমীক্ষা রিপোর্টে দেখা যায় বিপণনের বাজারে বিজ্ঞাপনের থেকেও বড় হাতিয়ার এই প্রভাবশালীরা। বিজ্ঞাপনের তুলনায় এদের পিছনে ব্যয় করলে ৩৫ শতাংশ বেশি প্রচার পায় পণ্য। সমীক্ষা বলছে প্রভাবশালীদের খাতে ১ ডলার খরচ করলে তার প্রচারমূল্য দাঁড়ায় ৯.৬ ডলার। ২০১৪ সালে চিত্রটা অন্যরকম ছিল। সেই সময় প্রভাব বিস্তারকারীদের ওপর ১ ডলার খরচ করলে ৬.৮৫ ডলার মিডিয়া ভ্যালু পাওয়া যেত।
এত কিছু জানার পর প্রশ্ন জাগে কারা এই ইনফ্লুয়েন্সার। অনেক সময় ইন্টারনেটে দেখা যায় বেশ কিছু অপরিচিত লোকের ভিডিও। কখনও তারা মোবাইলের খুঁটিনাটি বোঝান, কখনও চাল-ডালের গুণগত মান। টেলিভিশনে পরিচিত মুখ না হলেও টুইটার, ইউটিউবে এরা ইতিমধ্যেই সেলিব্রিটি। উদাহরণ হিসাবে বলা যেতে পারে ব্লগমিন্ট, আইজ্ঞান, হ্যাশফেম, শর্মাজির মতো সাইট। প্রথম প্রথম নিজেদের উদ্যোগেই কোনও পণ্যের গুণাগুন সম্পর্কে ক্রেতাদের ওয়াকিবহাল করাত এই ইনফ্লুয়েন্সাররা। পরবর্তী কালে এদের সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে ছোটে কর্পোরেট দুনিয়া।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে আম-আদমির মধ্যে ফিল্মি তারকাদের থেকেও কি এদের প্রভাব বেশি ? এক শব্দে বলা যায় হ্যাঁ। কারণ পণ্যের বিজ্ঞাপন করতে কোম্পানিগুলি থেকে গাদা-গুচ্ছের টাকা নেয় সেলিব্রেটিরা। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় বেশি টাকা পেয়ে নিম্নমানের পণ্যকে তারা প্রশংসায় ভরিয়ে দেয়। কিন্তু ইনফ্লুয়েন্সারদের ক্ষেত্রে তেমনটা ঘটে না। নিজেরা তারকা না হওয়ায় বিশ্বাসযোগ্যতার ক্ষেত্রে বেশিরভাগ জায়গায় সমঝোতা করেন না তারা। তাই নেট দুনিয়ায় এই প্রভাবশালীদের বিশ্বাসযোগ্যতা তারকাদের থেকেও বেশি। ম্যাকিনসের সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, ২০১৬ সালে বাজার দাপাবে এই ইনফ্লুয়েন্সাররা। ক্রেতা-বিক্রেতার সম্পর্ক গড়ে তুলতে এরাই কর্পোরেট দুনিয়াকে দিশা দেখাবে। তবে ভালর সঙ্গে সঙ্গে ইনফ্লুয়েন্সার নিয়োগে কিছু কিছু সমস্যাও রয়েছে। তাই বাজারে ইনফ্লুয়েন্সার নিয়োগের আগে জানতে হবে তার অতীত, ইতিহাস।
সেল্ফ সার্ভিস প্ল্যাটফর্ম
ইনফ্লুয়েন্সার নিয়োগের ক্ষেত্রে অনেক সময় ভুল করে বসেন কর্পোরেটের বাবুরা। বেশি টাকা দিলেই উন্নত মানের ইনফ্লুয়েন্সার এজেন্সি পাওয়া যাবে বলে বিশ্বাস করেন তারা। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই ঘটে যায় ব্যতিক্রম। তার অন্যতম উদাহরণ ব্লগমিন্ট। ইতিমধ্যেই উপযুক্ত পারিশ্রমিকে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছে এই ব্লগ পরিষেবা। কর্পোরেটের ভাষায় ইনফ্লুয়েন্সার।
মূল্য বাড়ছে প্রভাবশালীদের
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় কোম্পানিতে আনুগত্য দেখালে পরবর্তীকালে মেয়াদ বৃদ্ধি হচ্ছে এই ইনফ্লুয়েন্সাদের। সেক্ষেত্রে ক্রেতাদের জন্য বেশ কিছু বিপদ ডেকে আনছে এই প্রভাবশালীরা। অনেক ক্ষেত্রে কোম্পানির প্রতি আনুগত্য হতে গিয়ে পণ্যকে দরাজ সার্টিফিকেট দিচ্ছেন এরা। পরবর্তীকালে যার ফল ভুগতে হচ্ছে ক্রেতাদের। অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের পণ্য ঢুকে পড়ছে ক্রেতার ঝুলিতে। সৌজন্যে সেই প্রভাবশালীমহল। সেক্ষেত্রে প্রভাবশালী নির্বাচনের ব্যাপারে বড় মূল্য চোকাতে হচ্ছে কোম্পানিগুলিতে কারণ অনেকেই শুধুমাত্র টাকা দিচ্ছে বলে কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতায় যেতে চাইছেন না। তারা ক্রেতার সুরক্ষাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন।
সোশ্যাল নেটওয়ার্কে জোর ইনফ্লুয়েন্সারদের
২০১৫ সালের পর থেকে ইউটিউব ও ইনস্ট্রাগ্রামকে হাতিয়ার করেছে প্রভাবশালীরা। এর মাধ্যমে পণ্যের বিজ্ঞাপন করে কোম্পানির হাতে মুনাফা তুলে দিচ্ছে। এরকম কিছু প্ল্যাটফর্ম হল পেরিস্কোপ, হ্যাশফেম, স্ন্যাপচ্যাট ইত্যাদি।
অভিজ্ঞতাই শেষ কথা
২০১৬ সালে ইনফ্লুয়েন্সারদের অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দিচ্ছে শিল্পমহল। অতীতে তারা কোন কোন কোম্পানির সঙ্গে কাজ করেছে তার নিরিখে তৈরি হচ্ছে বায়োডাটা। এরপর ঝেড়ে-বেঝে তালিকা করা হচ্ছে প্রভাবশালীদের। পরবর্তীকালে তাদেরই জুড়ে দেওয়া হচ্ছে পণ্যের ব্র্যান্ডনেমের সঙ্গে। আর ইনফ্লুয়েন্সারদের সৌজন্যে ফুলে ফেঁপে তাদের ব্যবসা।
অনুবাদ — তন্ময় মুখোপাধ্যা য়