'বাই ওয়ান গিভ ওয়ান' মডেলে মাত করল চশমা কোম্পানি

'বাই ওয়ান গিভ ওয়ান' মডেলে মাত করল চশমা কোম্পানি

Saturday November 07, 2015,

4 min Read

Buy one take one. একটা কিনলে একটা ফ্রি। সাধারণত এমনটাই শুনে এসেছেন আপনারা। কিন্তু শুনেছেন কি buy one give one মডেলের কথা? একটা কিনলে একটা দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। এমনই এক চমকপ্রদ মডেলের আমদানি করেছে চশমা নির্মাতা সংস্থা Warby Parker. যদি এই সংস্থা থেকে কেউ একজোড়া চশমা কেনেন, সেক্ষেত্রে সংস্থা থেকে একজোড়া চশমা বিনামূল্যে দেওয়া হয় কোনও দুঃস্থ,অভাবী ব্যক্তিকে। সহজ কথায় বললে, সংস্থা যত সংখ্যক চশমা বিক্রি করে থাকে ঠিক তত সংখ্যক চশমাই দান করে থাকে। এখনও পর্যন্ত প্রায় ১০ লক্ষ চশমা দান করেছে Warby Parker. এটাই সংস্থার ব্যবসায়িক বিশেষত্ব। যেখানে অধিকাংশ সংস্থা মুনাফা ছাড়া কিছু ভাবতেই পারে না, সেখানে লাভের একটা বড় অংশই বিলিয়ে দিচ্ছেন সংস্থার মালিক। তবে কি তিনি ব্যবসায়ী হয়েও সন্ন্যাসী? তা হয়তো নয়। আসলে তাঁর ব্যবসায়িক দর্শন হল সামাজিক দায়বদ্ধতা। সমাজ থেকে নেওয়া, আবার সমাজকেই ফিরিয়ে দেওয়া। সেই কাজে ক্রেতাদেরও সঙ্গী করে নিয়েছেন তিনি। কোনও ক্রেতা যখনই একজোড়া চশমা কিনছেন, তিনিও কোনও অভাবী ব্যক্তিকে একজোড়া চশমার ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। এই অনুভব একজন ক্রেতাকেও সামাজিক দায়বদ্ধতায় বেঁধে ফেলছে। পার্কারের মতন একই কাজ করে চলেছেন জজুতো ব্যবসায়ী টম। একই বিজনেস মডেল। একটা কিনলে, একটা দান করব।

সোশ্যাল মিশন ও ভারত

স্টার্টআপ বা শুরুয়াতি ব্যবসার এখন একটা ধুম পড়ে গিয়েছে ভারতে। NASSCOM-এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের মানচিত্রে ভারতীয় স্টার্টআপ এখন তৃতীয় বৃহত্তম। এইসব স্টার্টআপের মধ্যে বেশ কয়েকটির সঙ্গে সিলিকন ভ্যালির সংস্থাগুলির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। সেই একই গ্রাহক বৃদ্ধি, মুনাফা বৃদ্ধি কিংবা লগ্নি সংগ্রহ। মেইনস্ট্রিমে থাকা অধিকাংশ স্টার্টআপ, যেগুলি মূলত সোশ্যাল স্টার্টআপ নয়, এখনও পর্যন্ত ব্যবসায়িক সাফল্যকেই অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। ভারতে বহুবিধ সামাজিক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও ওইসব সংস্থা কর্মাশিয়াল ও সোশ্যাল ইমপ্যাক্টকে মিলিয়ে চলতে পারছে না। এর বহু কারণ রয়েছে। তবে প্রধান কারণ হল ওইসব স্টার্টআপ হয়তো ভাবতে পারে না যে লাভজনক ভাবে ব্যবসা চালানো আর সামাজিক দায়বদ্ধতা একইসঙ্গে চলতে পারে। তারা হয়তো এমনও ভেবে থাকেন, লগ্নিকারী তাদের সংস্থা থেকে অবিলম্বে আর্থিক লাভালাভ চান।


image


বিভিন্ন সামাজিক উদ্যোগে অংশগ্রহণ- যে কোনও কোম্পানির জন্য লাভদায়ক হতে পারে। বেশ কয়েকটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে যে সব সংস্থার বিশেষ কোনও 'মিশন' রয়েছে সেই সব সংস্থার দ্রুত উন্নতি হয়। পক্ষান্তরে যে সব সংস্থার কোনও জনউদ্যোগ বা কর্পোরেট সিটিজেনশিপ থাকে না, সেগুলি ব্যবসা করে ঠিকই কিন্তু কোথাও যেন পিছিয়ে পড়ে। ঠিক একইভাবে যে সব সংস্থা কর্মীদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের দিকে নজর দেয়, তারও দুর্দান্ত ফল মেলে। Corporate social media marketing নিয়ে আমাদের গবেষণায় উঠে এসেছে এক চমকপ্রদ তথ্য। দেখা গিয়েছে 'কর্পোরেট ফিলানথ্রপি' সম্পর্কে ক্রেতারা খুবই সচেতন এবং তার প্রমাণ মেলে ফেসবুকে লাইকস, কমেন্টস, শেয়ারিংয়ে। অন্যদিকে প্রোডাক্ট কোয়ালিটি, প্রাইসিং, প্রোমোশনের ক্ষেত্রে মেসেজ শেয়ারিং সেই তুলনায় কম। Corporate citizenship-এর ধারনাটি এখনও সেই অর্থে ভারতে নতুন। তবে ভারতে যে নতুন Corporate Social Responsibility (CSR) বিধি চালু হয়েছে তাতে মুনাফার ২ শতাংশ সামাজিক উন্নয়নে খরচ করার কথা বলা হয়েছে। যার দুর্দান্ত ফলও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে Amazon India-র Gift a Smile কর্মসূচির কথা বলা যায়। যেখানে অ্যামাজনের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এনজিও'তে বিভিন্ন উপহার সামগ্রী দান করার কথা বলা হয়েছে। ভারতে কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সবিলিটি যে সাড়া ফেলছে এটা তারই একটা অভিনব উদাহরণ। তবে এই CSR বিধি শুরুয়াতি সংস্থাগুলির ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হয়নি। তবে শুরুয়াতি সংস্থা হওয়া সত্ত্বেও CSR-এ সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে Flipkart ও Zostel (Wharton India Economic Forum-এর স্টার্টআপ প্রতিযোগিতায় জয়ী। সংস্থায় কর্মরত যে সব কর্মী সন্তান দত্তক নিতে চান তাদের ৫০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়ার কথা জানিয়েছে ফ্লিপকার্ট। যে সব ভারতীয় স্টার্টআপ আগামী দিনে বৃহৎ সংস্থা হতে চায় তাদের কিন্তু এভাবেই সোশ্যাল ইমপ্যাক্টের দিকে এখন থেকেই নজর দিতে হবে।

সামাজিক 'মিশন' কেমন হবে

কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সবিলিটিকে এখন কোনও উদ্যোগপতিই অবহেলা করতে পারছেন না। কিন্তু কোন সোশ্যাল মিশনে অগ্রাধিকার দিলে ব্যবসায় সমৃদ্ধি হবে সেটা তারা অনেকেই বুঝে উঠতে পারেন না। এ ব্যাপারে Warby Parker-এর CEO নীল ব্লুমেন্থালের কথাটা মাথায় রাখুন। তিনি বলেছেন, শুধুমাত্র তাঁরা দান-খয়রাতি করেন বলে ক্রেতারা তাদের সংস্থা থেকে চশমা কেনেন, এমনটা ভাবলে ভুল হবে। আসলে কাস্টমার প্রথম যে দিকে নজর দেন তা হল ফ্যাশন ও ডিজাইন। এরপর তারা দেখেন চশমার দাম। এরপর প্রোডাক্টের গুণমান। সবশেষে 'সোশ্যাল মিশন'। কিন্তু প্রোডাক্টের সঙ্গেই 'সোশ্যাল মিশন' এমন একটা ব্র্যান্ড পার্সোনালিটি দিয়েছে সংস্থাকে, যা ক্রেতাদের টেনে আনছে। ব্র্যান্ড আবার এমন একটা জিনিস যা টাকায় নির্ধারণ করা যায় না। ব্লুমেন্থাল স্পষ্ট ভাষাতেই বলছেন the product is king. অর্থাৎ চশমা ভালো বলেই ক্রেতারা কিনছেন। সে তাঁদের বিজনেস মডেল যতই দানধ্যান করুক না কেন। নীল আরও দুটি শব্দে জোর দিয়েছেন। অথেনটিসিটি ও সিম্পলিসিটি। আর এসবের সঙ্গে সেই সোজাসুজি বার্তা-বাই ওয়ান, গিভ ওয়ান।

(এই প্রবন্ধের লেখক Vikram Arumilli The Wharton School-এর MBA শিক্ষার্থী)